মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৭, ১২:৫৬:১৫

‘নাবালক’ ট্রাম্পের হাতে পরমাণু অস্ত্র কি নিরাপদ? আতঙ্কিত হওয়ার মত তথ্য

‘নাবালক’ ট্রাম্পের হাতে পরমাণু অস্ত্র কি নিরাপদ? আতঙ্কিত হওয়ার মত তথ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র এমন এক নেতা পেয়েছে, যিনি বারবার প্রমাণ দিয়েছেন যে তাঁর ‘মেজাজ, ভাষা ও আবেগ’ নিতান্তই একজন নাবালকের মতো। অথচ এই ডোনাল্ড ট্রাম্পই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হতে চলেছেন। আর পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণও সরাসরি তাঁর হাতেই থাকবে। এই ভয়াবহ বিষয়টি নিয়ে আমেরিকা কী করবে? বিশ্বের অন্যান্য দেশেরই বা কী করার আছে, বিশেষ করে যারা মার্কিন ক্ষমতার দাপট হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে (মনে রাখতে হবে, কেবল গত বছরেই যুক্তরাষ্ট্র মূলত মুসলিম দেশগুলোর ওপর ২৬ হাজারের বেশি বোমা ফেলেছে)।

প্রথমে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে হবে। কী কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ‘বিপজ্জনক নাবালক’? ছয় ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার মানুষটি ৭০ বছর বয়সী। কিন্তু তাঁর আচরণ কখনো কখনো ১৭ বছর বয়সী বেপরোয়া ছাত্রের মতো। কৈশোরের ছটফটানির সব লক্ষণই যেন তাঁর মধ্যে আছে! তিনি অনেক রাত পর্যন্ত জাগেন, ভিডিও দেখেন, যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করেন আর কখনো কখনো বেমানান, হাস্যকর আর ভয়ানক সব বার্তা পাঠান। ৭০ বছর বয়সী আর কেউ কি আছেন, যাঁর আচরণ এমন অদ্ভুত?

ট্রাম্পের কাজকর্মও যেন সব সময় অতিনাটকীয়, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ঠিক বিপরীত। ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, নির্বাচনে না জিতলে ফল না-ও মানতে পারেন। আর বিজয়ী হওয়ার পর বলছেন, নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে কোনো তদন্তের প্রয়োজন নেই।

আচরণ বা বক্তব্যে ট্রাম্প নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি ফলাও করে লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন; সব সময় ‘আমি, আমি, আমি’ আর ‘ওরা সবাই আমাকে ঘৃণা করে’ ধরনের কথাবার্তা তিনি বলে থাকেন। এসব বৈশিষ্ট্য এতটা ভয়ংকর হবে না, যদি তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতো আচরণ করেন। কিন্তু আশঙ্কার ব্যাপার হলো, একজন অস্থির কিশোরের চারটি বৈশিষ্ট্যই ট্রাম্পের মধ্যে আছে: রোষ, তর্ক, অবাধ্যতা ও প্রতিহিংসাপরায়ণতা।

ওবামাও ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, ছোটখাটো বিষয়ও ট্রাম্পকে উত্তেজিত করে তোলে। আর তিনি পাল্টা জবাব দেওয়ার আগে মোটেও চিন্তা করেন না। পরিণাম নিয়ে তাঁর কোনো ভাবনাই থাকে না। এ রকম একজন ব্যক্তি পারমাণবিক অস্ত্র চালনার সুযোগ পেলে কী করবেন, সেটাই শঙ্কার বিষয়। কারণ, যেভাবেই হোক তিনি তো ক্ষমতার শিখরে পৌঁছে গেছেন। তিনি কি নিজেকে বদলাতে পারবেন? অবাক ব্যাপার, ওয়াশিংটনের বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, ট্রাম্প নিশ্চয়ই পারবেন। কিন্তু ৭০ বছর বয়সী একজন মানুষের পক্ষে সেটা কতটা সম্ভব? প্রাথমিক নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর পর থেকে তাঁর পরিবর্তন দেখে ক্রমেই বিশ্ববাসীর আতঙ্কই তো বাড়ছে। পারমাণবিক অস্ত্রধারী আরেকজন কিশোরসুলভ নেতা যদি ট্রাম্পকে দ্বন্দ্বের আহ্বান জানান, তিনি কীভাবে জবাব দেবেন? আর সে ক্ষেত্রে লড়াই শুরু হলে উত্তর কোরিয়ার জনগণ এবং দক্ষিণ চীন সাগরের নিরাপত্তারই বা কী হবে?

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বিধ্বংসী মারণাস্ত্রের সম্ভাব্য প্রতিযোগিতা ঠেকাতে ট্রাম্পের সামনে দুটি পথ থাকবে: কূটনীতি অথবা সামরিক অভিযান। কূটনীতি বা অবরোধ আরোপের জন্য তাঁর বেইজিংয়ের সাহায্য লাগবে। চীনকে তিনি যেভাবে খেপিয়ে তুলছেন, তাতে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্কের ভবিষ্যৎ নেই বললেই চলে। আর পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিলে প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানেও বিপর্যয় নামবে। এসব দুর্ভাবনা থেকেই বলতে হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে এখন অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ভিডিও না দেখেন এবং ২০ জানুয়ারির পর ‘খেলাধুলা’ থেকে যেন বিরত থাকেন।
১০ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে