বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৭, ০৩:৩৮:৪৫

ভারতে নোট বাতিলের দ্বিতীয় দফা, কেরানি থেকে কোটিপতি

ভারতে নোট বাতিলের দ্বিতীয় দফা, কেরানি থেকে কোটিপতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কালো টাকা রুখতে নোট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এখন পর্যন্ত সঠিক হিসেব পাওয়া না গেলেও একটা বিষয় স্পষ্ট যে, যতটা সাফল্য মোদী পাবেন ভেবেছিলেন ততটা মেলেনি। ৫০ দিনে আশাতীত টাকা জমা পড়েছে দেশ জুড়ে। এবার তাই আরও বড় অভিযানের পথে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই সে নির্দেশ গিয়েছে আয়কর দফতরে। কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। খুব সিগগীর পদক্ষেপ শুরু করবে আয়কর দফতর।

নোট বাতিলের ঘোষণার সময়ে মোদী ঘোষণা করেছিলেন, কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত জমা করলে সমস্যা হবে না। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রচুর বেহিসেবি টাকাও জমা পড়েছে বলে দাবি কেন্দ্রের। তার হিসেবও পেয়েছে অর্থমন্ত্রক। নোট বাতিল ঘোষণার এক সপ্তাহ পরেই দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী জন ধন প্রকল্পের জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্টে টাকার পাহাড় জমে উঠেছে। এটা দেখেই প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, যাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ছে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন আইনের পথে চলবে।

মোদী জানিয়েছিলেন আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত জমা দেওয়ায় কোনও সমস্যা থাকবে না। এর পিছনে প্রধানমন্ত্রী বলতে চেয়েছিলেন, এখন আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত যাঁদের আয় তাঁদের আয়কর দিতে হয় না। এর উপরে আয় হলেই আয়কর রিটার্ন দেওয়া দেশে বাধ্যতামূলক। এখন দেখা যাচ্ছে, বহু মানুষই ১০ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে আড়াই লাখ টাকা জমা দিলেও আর্থিক বছরের বাকি সময়টায় অর্থাৎ ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে অনেক বেশি টাকা জমা করেছেন।

এঁদের অনেকেই আয়কর জমা দেন না। কোনও রিটার্ন দাখিল করার ইতিহাসই নেই। এবার তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার নির্দেশ পেয়েছে আয়কর দফতর। সুতরাং, নোট বাতিল পর্বে যাঁরা আড়াই লাখ টাকার কম জমা দিয়েছেন তারাও এ বার আয়কর দফতরের নোটিশ পেতে চলেছেন।

নোট বাতিল পর্বের ৫০ দিন পার করে গত ৩১ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এটা একটা অবিশ্বাসযোগ্য ব্যাপার যে আয়করের দাখিলের হিসেব অনুযায়ী, দেশের মাত্র ২৪ লাখ মানুষ বছরে ১০ লাখ টাকার উপরে আয় করেন। কেন্দ্র আরও একটি হিসেবে দেখেছে দেশে করযোগ্য আয় থাকা সত্বেও ৬৮ লাখ মানুষ আয়কর দেন না। এবার সেই নাগরিকদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশ পেয়ে দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কের কাছে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে হওয়া লেনদেনের হিসেব দিতে। আগেই সমস্ত সন্দেহজনক লেনদেনের হিসাব দিতে বলা হয়েছিল। এ বার আয়কর দফতরকে সব লেনদেনের হিসেব দেওয়া শুরু করেছে ব্যাঙ্ক।

আর তাতেই পাহাড়-প্রমাণ বেনিয়মের গন্ধ পাচ্ছে আয়কর দফতর। জানা গিয়েছে, নোট বাতিলের ৫০ দিনে তিন থেকে চার কোটি টাকা এমন অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে, যার মালিকরা আয়কর দেন না। এখনও পর্যন্ত যা হিসেব, তাতে দেশে ওই সময়ে দেশে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক মিলিয়ে ৭.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৬০ লাখ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২ লাখ টাকার বেশি জমা পড়েছে।

এখন আয়কর দফতরের হাতে প্রচুর তথ্য। আর তা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, শুধু উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা নগদ জমা পড়েছে। বিভিন্ন সমবায় ব্যাঙ্কে জমা পড়া ১৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট।

এছাড়াও আয়কর দফতরের নজরে এসেছে, এমন কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাতে দীর্ঘদিন কোনও লেনদেন না হলেও নোট বাতিলের পরে পুরনো নোট জমা পড়েছে। এমন টাকার পরিমাণ হল ২৫ হাজার কোটি টাকা। জানা গিয়েছে, নগদে ঋণ শোধ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।

এখন এই সব লেনদেনের পিছনে কারা রয়েছেন, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করবে আয়কর দফতর। এক আয়কর-কর্তা জানিয়েছেন, এখন শুধু হিসেব তৈরি করা হচ্ছে। এর পরে অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মালিকদের নোটিশ পাঠানো শুরু হবে। উল্লেখ্য, এখন আয়কর দফতরের হাতে অনেক কড়া আইন রয়েছে। যার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হলে আর্থিক জরিমানা ছাড়াও সাত বছর পর্যন্ত কারাবাসের সাজাও হতে পারে।-এবেলা

১১ জানুয়ারি,২০১৭/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে