আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাপের ‘ভাষা’ সাপের ‘শিস’ অব্যর্থ বুঝতে পারেন মিন্টু চৌধুরী। রাত-বেরাতে গাঁ গঞ্জে সাপ বেরোলে ডাক পড়ে তার। তা নিয়ে ধূপগুড়ির মিন্টুদার কোনও বিরক্তিও নেই।
দিন কয়েক আগের কথা। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির মুরগি খামারে ঢুকে পড়েছে একটি সাপ। সে খবর গেল মিন্টুবাবুর কাছে। সেখানে পৌঁছে গর্তের ভিতর থেকে ফোঁস ফোঁস শব্দ শুনেই তিনি বুঝেছিলেন ভিতরে যেটি ঘাঁটি গেড়েছে সেটি গোখরো। অকুতোভয়ে একটি লোহার দণ্ড ঢুকিয়ে আস্ত গোখরটিকে টেনে বাইরে আনেন। এক হাতে চেপে ধরেন সাপের লেজ। কিন্তু তখন মেজাজ বিগড়েছে গোখরোরও। মিন্টুবাবুর হাতে ধরা অবস্থাতেই ফণা তুলে ধরে টি। সেই ফণা দেখে ভিড় ফাঁকা হয়ে য়ায়। মিন্টুবাবু ধীরে ধীরে সেটিকে ঝোলাবন্দি করেন।
গত সোমবার ধূপগুড়ির মাগুরমারি গ্রামের এই ঘটনার পরে মিন্টুবাবুর হাতে ধরা ফণা তোলা গোখরো-র ছবি এখন বিভিন্ন সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও চালাচালি হচ্ছে। প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সাপ ধরে আসা মিন্টুবাবু বিলক্ষণ জানেন, গোখরোর একটি ছোবলেই সর্বনাশের আশঙ্কা ছিল। কিন্তু মিন্টুবাবু বলেন, ‘‘হাত দিয়ে না ধরলে সাপটির চোট লাগত যে। আমি তো কোনও সাপকে গলার কাছেও ধরি না। সাপের মেরুদন্ড খুব নরম। একবার চোট লাগলে বেচারা চলতেই পারবে না।’’
বিপদ যে রয়েছে স্বীকার করেন শিলিগুড়ির আরেক সর্পপ্রেমী শ্যামা চৌধুরীও। বাকা-দা নামে পরিচিত শ্যামাবাবুও কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে সাপ ধরে আসছেন। সাধারণত ক্যাচার দিয়েই সাপ ধরা হয়। ক্যাচার বলতে লোহার একটি রডের আগায় আংটা বসানো। সেই আংটা চিপে সাপ ধরা হয়। বড় সাপ হলে দু’টি আংটা দিয়ে সাপ ধরা হয়। হাত লাগানোর প্রয়োজন পড়ে না। যদিও, শ্যামাবাবুর কথায়, ‘‘আংটার একটা চাপেই সাপটি জন্মের মতো পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। তাই আমরা একটি বাঁকানো লাঠি এবং হাত দিয়েই সাপ ধরি। এতে ঝুঁকি অবশ্যই রয়েছে, কিন্তু সাপটির তো ক্ষতি হল না।’’
মিন্টুবাবু-শ্যামাবাবুর মতো ডুয়ার্স-তরাইয়ের অসংখ্য সর্পপ্রেমীরা ক্যাচার ব্যবহার না করে হাত দিয়েই সাপ ধরেন। কেউ বা আবার ক্যাচারের কথাই শোনেননি। কারও আবার সাপ ধরার প্রশিক্ষণও নেই, কোন সাপের কত বিষ, আচরণ কেমন তা জানতে তাদের ভরসা কেবল অভিজ্ঞতা। তবু লোকালয়ে সাপ বের হলে ডাক পড়ে তাঁদেরই। বন দফতরের কাছে সাপের উপদ্রবের খবর পৌঁছলে ডাক পড়ে মিন্টুবাবু, বাকা-দাদের। সময় এগিয়ে চললেও, বন দফতর থেকে পুরস্কার বা শংসাপত্র ছাড়া পরিকাঠামোগত ন্যূনতম সহযোগিতা তাঁরা পান না বলে অভিযোগ। মেলে না বিষ প্রতিরোধের ওষুধ। চিকিৎসার খরচও তারা পান না বলে অভিযোগ। বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণ ছাড়া সাপধরা চলছে জেনেও, সকলকে উপযুক্ত তালিম দিতেও দফতরের কোনও পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ। তার ফলে ঝুঁকি নিয়ে সাপ ধরা চলছেই।
পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী বিনয় বর্মনের কথায়, ‘‘এখানে গ্রামে শহরে আকছার সাপ বের হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে প্রশিক্ষণ ছাড়াই সাপ ধরে। সকলকে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তো ভালই হতো। দেখা যাক।’’
১৫ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি