আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রুদ্ধদ্বার কক্ষে গোপনীয়তা রক্ষা করে নয়, বরং নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ পথচিত্রটি আজ খোলা হাট করে দিলেন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু!
ইজরায়েলের সংসদ নেসেটে দাঁড়িয়ে নেতানিয়াহু জানিয়ে দিলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ইদানিং প্রায়ই কথা হয় আমার। দু’দেশের সম্পর্ককে এ বার অভূতপূর্ব উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান মোদী। পাশে থাকছে ইজরাযেলও।”
নয়াদিল্লির সেই আগ্রহটা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের তিন দিনের ইজরায়েল সফরে আসার মধ্যেই প্রতিফলিত। চল্লিশের দশকের শেষে দুই দেশ প্রায় একই সঙ্গে জন্ম নিয়েছে।
কিন্তু এই প্রথম ভারতীয় কোনও রাষ্ট্রপতি ইজরায়েলে এসেছেন। তাঁর এই সফরকে আরও উচ্চতা দিতে সংসদের যৌথ সভায় ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আজ নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল নেতানিয়াহু প্রশাসন।
সেখানে প্রণববাবু বক্তৃতা শেষ করার পর ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “বন্ধু নরেন্দ্র মোদী আমাকে বলেছেন, ইজরায়েলকে ভারতের খুবই দরকার। ইজরায়েলের সাহায্য ছাড়া ভারতে চতুরঙ্গ বিপ্লব সম্ভব নয়। সেই চার রঙ হল গেরুয়া, সবুজ, সাদা ও নীল। গেরুয়া বোঝাবে শক্তি ক্ষেত্রে বিপ্লব আনাকে, সবুজ কৃষি বিপ্লব, সাদা ডেয়ারি ক্ষেত্রে বিপ্লবের প্রতীক। আর নীল হল ভারতে জলসেচে আধুনিকীকরণের রঙ।”
বিনিময়ে কী চান নেতানিয়াহু?
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে ভাবে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলি আন্তর্জালে জাল ছড়াচ্ছে, তাতে সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থা আরও উন্নত ও আধুনিক করে তোলা ছাড়া গতি নেই। ইজরায়েল একটি সাইবার সিকিউরিটি হাব তৈরি করছে। ভারতের গণিতজ্ঞ ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্য আমাদের প্রয়োজন হবে। ভবিষ্যতে বেঙ্গালুরুতে এ ধরনের একটি হাব তৈরি করতে সাহায্য করবে ইজরায়েল।”
বৈদ্যুতিক ও সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্যের কথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর বক্তৃতায় তুলে ধরেছিলেন। সংসদে বক্তৃতায় গর্বের সঙ্গেই প্রণববাবু বলেন, “মাইক্রোসফট ও গুগল— বিশ্বের দুই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে পদে এখন দুই ভারতীয়।”
সেই সূত্র ধরেই নেতানিয়াহু মজা করে বলেন, “আমেরিকার সিলিকন ভ্যালিতে এখন ছেলেমেয়েদের দুটি ভাষায় কথা বলতে শোনা যায়। হিন্দি ও হিব্রু! ইংরেজি শোনা যায় কালেভদ্রে!”
নেতানিয়াহু ও প্রেসিডেন্ট রিভলিনের সঙ্গে বৈঠকও হয় প্রণববাবুর। আলোচনার পর্যায়ে থাকা ১১০০ কোটি ডলার প্রতিরক্ষা বাণিজ্যের প্রস্তাবটি দ্রুত রূপায়ণ করার বার্তা দিয়েছে দিল্লি।
এই বন্ধুত্বের পরিবেশের মধ্যে আজ সকালে কিছুটা হলেও বেসুর গেয়েছে সংবাদমাধ্যম। সপ্তাহ খানেক ধরে সন্ধ্যা হলেই খাঁ খাঁ করে জেরুজালেমের রাস্তা।
নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরাইলের বর্বর হামলা মধ্যেই ইজরায়েলে আসার আগে রামাল্লা হয়ে এসেছেন প্রণব। কিন্তু সেখানে এ নিয়ে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি কেন কোনও মন্তব্য করেননি— সেখানকার সব খবরের কাগজ তা নিয়ে সরব হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েলি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের শুরুতেই আজ পরিবেশ স্বাভাবিক করতে প্রণববাবু বলেন— সব ধরনের হিংসা বন্ধ হওয়া উচিত। শান্তিপূর্ণ আলোচনাই একমাত্র পথ। তবে এ বারও প্যালেস্তাইনের নাম তিনি মুখে আনেননি! সূত্র: আনন্দবাজার ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস