সাবেদ সাথী, নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি: শপথ গ্রহণের দিন থেকেই একের পর এক একতরফা সিদ্ধান্ত কার্যকর করে চলেছেন মার্কিন পেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশের কোনো প্রেসিডেন্ট তার রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনে কতটা একতরফা হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তারই প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তিনি।
আইন তৈরিতে অনেক সময় লেগে যায়, কিন্তু হোয়াইট হাউজ কলমের খোঁচাতেই সরকারের নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমতা প্রয়োগে এক মুহূর্তের জন্যও সময় নষ্ট করেননি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেওয়া প্রধান প্রধান প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একের পর এক নির্দেশনা জারি করে চলেছেন।
গত ক’দিনে কী কী নির্দেশনা জারি করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিস্তারিত বর্ণনা নিচে দেয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের জুন মাসে প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়ার দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হবে মেক্সিকো থেকে অবৈধ অভিবাসন ঠেকানো। একের পর এক নির্বাচনী প্রাচরণায় তিনি বলেছেন দক্ষিণের সীমান্তে 'শক্ত, উঁচু, সুন্দর' দেয়াল তুলবেন। ক্ষমতা নিয়েই সেরকম এক নির্দেশনায় সই করে দিয়েছেন তিনি।
টানা ২,০০০ মাইল দেয়াল তোলা হবে। অতিরিক্ত ১০,০০০ অভিবাসন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে। এছাড়া, লস এঞ্জেলেস বা নিউ ইয়র্কের মত যে সব কসমোপলিটান নগরগুলোতে অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় মেলে সেসব শহরগুলোতে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল কমিয়ে দেয়ার একটি সিদ্ধান্তও নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ট্রাম্প এখনও দাবি করছেন দেয়াল তোলার খরচ তিনি মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায় করবেন। কিন্তু মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট সোজা বলে দিয়েছেন টাকা দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
ক্ষমতা নেয়ার দ্বিতীয় দিনে ট্রাম্প দুটো নির্দেশে সই করেন। নির্দেশগুলো ছিল দুটো বহু বিতর্কিত জ্বালানি পাইপলাইন তৈরির কাজ এগিয়ে নেওয়া। এর মধ্যে একটি হলো কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শোধনাগারে জ্বালানি তেল আসার জন্য ১১৭৯ মাইল একটি পাইপলাইন নির্মাণ।
পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগের কারণে ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা ওই কাজ স্থগিত করেছিলেন। অন্য পাইপলাইনটির কাজও গত বছর বন্ধ হয়ে যায় যখন নর্থ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের আদিবাসীরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। তাদের দাবি ছিল এই পাইপলাইন নির্মাণে তাদের জীবন জীবিকা ঐতিহ্য নষ্ট হবে। ট্রাম্প পরিবেশ বা ঐতিহ্য কোনোটাই আমলে নেননি।
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি লম্বা একটি নির্দেশনা জারি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দরিদ্র মানুষের জন্য সহজ শর্তে যে স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করেছিলেন বারাক ওবামা সেগুলোতে সরকারি ভর্তুকি দেওয়ার ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে ওই নির্দেশনায়। ভর্তুকি ছাড় করার বেলায় 'দেরি, সাবধান হওয়া বা বাতিল' করার সুযোগ খুঁজতে বলা হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান ১৯৮৪ সালে প্রথমবার এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন যে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় গর্ভপাতে সহায়তা করার কর্মসূচিতে সাহায্য দেওয়া যাবেনা। এই নির্দেশনা যুক্তরাষ্ট্রে সবসময় একটি বিতর্কিত ইস্যু। ডেমোক্রেটরা ক্ষমতায় এলেই তা বাতিল করে, আবার রিপাবলিকান আবার তা সক্রিয় করে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করেছেন।
নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত নিয়োগ নিষিদ্ধ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ব্যতিক্রম থাকবে সেনাবাহিনী। ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইছেন সরকারের ঋণ এবং আয়তন কমাতে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি বার বার সরকারি আমলাতন্ত্রকে আক্রমণ করেছেন।
ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি চুক্তি থেকে প্রত্যাহার প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার কিছু দেশের সাথে এই বাণিজ্য চুক্তিকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছিলেন ওবামার সরকার। মার্কিন কংগ্রেস অবশ্য একে এখনও এত অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু ট্রাম্প এখন এই চুক্তিকে ইতিহাসে ছুড়ে দিলেন।
২৭ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ