আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কংগ্রেসে তার প্রথম ভাষণে বিস্ময়কর কিছু তথ্য দিয়েছেন। এতে মার্কিনীদের জীবনব্যবস্থা ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চিত্র ধরা পড়ে। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে নতুন করে ভাবনার কথাও উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের এ ভাষণের কিছু তথ্যকে অতিরঞ্জিত বললেও অনেক ক্ষেত্রেই তারা একমত হয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের ‘ফ্যাক্ট চেক’ অবলম্বনে এমন বিষয়াদি তুলে ধরা হল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৪ কোটি ৩০ লাখ নাগরিক ‘ফুড স্টাম্প’ এর মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করছেন। ফুড স্টাম্প এমন একটি ভাউচার ব্যবস্থা, যেটি দেখালে নিন্মআয় কিংবা বেকার মানুষদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্যসহায়তা দেয়া হয়। এ প্রকল্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের বার্ষিক ব্যয় প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের অংশ হিসেবে সরকার এ সাহায্য দিয়ে থাকে। নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক ডানা গোল্ডস্টেইন বলেন, ট্রাম্পের এ তথ্য একেবারেই সঠিক। আমেরিকার কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৪ কোটি ৩৩ লাখ মার্কিনী ফুড স্টাম্প ব্যবহার করেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে ফুড স্টাম্প ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে আসছে বলে জানান গোল্ডস্টেইন।
ট্রাম্প তার ভাষণে বলেছেন, ৪ কোটি ৩০ লাখের বেশি আমেরিকান দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে- এ কথাও সত্য। দেশটির সেন্সাস ব্যুরোর ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৪ কোটি ৩১ লাখ মার্কিনী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। পরিবারের সদস্যদের আকার ও বার্ষিক আয়ের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় কে দরিদ্র। সেন্সাস ব্যুরোর মতে, যে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ জন এবং তাদের ১৮ বছরের নিচে কোনো শিশু নেই, সেই পরিবারের বার্ষিক আয় যদি ২২ হাজার ৫৪১ ডলারের কম হয়, তবে তারা দরিদ্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৯ ও ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ের চেয়ে বর্তমানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে এসেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘বর্তমানে ৯ কোটি ৪০ লাখ আমেরিকান কোনো চাকরি পাচ্ছে না।’ এ কথাটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর। কারণ এ তথ্য সত্য হতে গেলে বেকার মানুষের হিসাব করতে হবে, ১৫ বছরের বেশি বয়স্ক নাগরিকদের, যারা কোনো চাকরিতে নেই। কিন্তু তাতে তো অনেক শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী, গৃহিণী কিংবা অবসরপ্রাপ্তরাও এ তালিকায় পড়ে যাবে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, আমেরিকানদের অনেকেই কর্মসংস্থানে নিজেরাই যুক্ত হতে চান না। কেউ চাকরি খুঁজছেন অথচ পাচ্ছেন না- এমন সংখ্যা খুব কম। ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিকসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বেকার মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৬ লাখ।
ট্রাম্প বলেছেন, দেশে খুনখারাবি বেড়ে গেছে। নিকট অতীতের অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে সর্বোচ্চ হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে ২০১৫ সালে। এ তথ্য পুরোপুরি সঠিক নয়। এফবিআইয়ের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে ১৫ হাজার ৬৯৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, আগের বছরের তুলনায় এটা বেড়েছে ১০ শতাংশ। এর আগে ১৯৯১ সালেই ২৪ হাজার ৭০৩ জন খুন হয়েছিল।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা অন্য দেশের সীমান্তের সুরক্ষা দিচ্ছি। কিন্তু নিজেদের সীমান্ত উন্মুক্ত।’ এটা সত্যি যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সীমান্ত এলাকা উন্মুক্ত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সেটা সুরক্ষিত নয়। ২১ হাজার সীমান্তরক্ষী পালাক্রমে পাহারা দেন। প্রায় সমানসংখ্যক কাস্টমস ও সীমান্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত আছেন। ৩২৫টি সীমান্ত ফাঁড়ি রয়েছে।
ট্রাম্পের মতে, নাফটা কার্যকরের পর থেকে নির্মাণ শিল্পে এক-চতুর্থাংশ কর্মসংস্থান হাতছাড়া হয়ে গেছে। নির্মাণ শিল্পে কর্মসংস্থান কমেছে সত্যি, তবে তার পেছনে নাফটা দায়ী নয়, প্রযুক্তির উন্নয়ন। কেননা মেশিনের উন্নতির ফলে অনেক শ্রমিক-কর্মচারীর আর প্রয়োজন হয়নি।
০২ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস