রবিবার, ০৫ মার্চ, ২০১৭, ১১:৩৯:১১

মা-শিশুকে আলাদা আটক রাখার ভয় দেখিয়ে অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের

 মা-শিশুকে আলাদা আটক রাখার ভয় দেখিয়ে অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মেক্সিকান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভয় দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অবৈধ প্রবেশ রুখতে চাইছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।  নির্বাচনি প্রচারণাকালেই যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। আর এবার সেই সীমান্ত ব্যবহার করে কোনও মেক্সিকান অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে তার প্রশাসন।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়ার্সের এক খবর অনুযায়ী, অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া নারী ও শিশুদের আলাদা করা হবে। মা ও তার শিশুকে বন্দিজীবন কাটাতে হবে পৃথকপৃথক স্থানে। এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নে আরও মনোযোগী হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা এখন দেশটির কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন রয়েছে। সরকারের তিনজন কর্মকর্তা বিষয়টি রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ণবাদী মানসিকতাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অভিবাসী নারী ও শিশুদের প্রতি এমন আচরণের মাধ্যমেই নিজের কথিত ইমিগ্রেশন পলিটিক্স জারি রাখতে চান ট্রাম্প।

২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কর্মকর্তা দেশটির নাগরিকত্ব ও অভিবাসন-আশ্রয় বিষয়ক প্রধান জন লেফারটি’কে এ পরিকল্পনার বিষয়ে ব্রিফ করেন।

প্রস্তাবিত নতুন এ নিয়মের মাধ্যমে মূলত যেসব নারীরা তাদের সন্তানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হতে আগ্রহী; তাদের ভয় দেখিয়ে নিবৃত্ত করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। এ প্রস্তাবনার সঙ্গে জড়িত আছেন; এমন কর্মকর্তারাই  বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

প্রস্তাবিত এ নীতিমালা কার্যকর হলে, নির্বাসনে পাঠানো কিংবা আশ্রয় শুনানির জন্য অপেক্ষমান অবস্থায় লোকজনকে হেফাজতে নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ। শিশুদের রাখা হবে ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস-এর সুরক্ষামূলক হেফাজতে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এমন কোনও স্বজন কিংবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পান এমন কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে তাদের দায়িত্ব নিতে পারবে। তবে এর আগ পর্যন্ত তাদের সরকারি হেফাজতেই থাকতে হবে। শিশুদের দীর্ঘ সময় আটকে না রাখার ব্যাপারে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে।

বর্তমানে লোকজন নির্বাসন ইস্যুতে লড়াই করছে। অনেকে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করছেন। অন্তত নিজেদের মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যেতে চাইছেন তারা।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটিজ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, নারী ও শিশুদের আলাদা করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন অবস্থায় রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

চেষ্টা করেও এ ব্যাপারে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটিজ, হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস এবং হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন ৫৪ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে শিশু ও তাদের অভিভাবকরাও রয়েছেন। এক বছর আগের তুলনায় গ্রেফতারের এ সংখ্যা দ্বিগুণ।

রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যানদের দাবি, নারীরা বুঝেশুনেই এ বিপজ্জনক যাত্রার ঝুঁকি নেয়। কারণ এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত থাকে যে, দ্রুতই তারা অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে। ভবিষ্যৎ আইনি প্রক্রিয়ায় আরও কয়েক বছর লেগে যাবে।

অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, মধ্য আমেরিকার সহিংস পরিস্থিতি ওই অঞ্চলের মায়েদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনে বাধ্য করছে। তাদের আশ্রয় দেওয়া উচিত।

আইনি প্রেক্ষাপট:
ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনায় অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া ব্যক্তিদের আটকের কথা বলা হয়েছে। তবে এর আগে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের নাইনথ্ ইউএস সার্কিট কোর্ট। ওই আদেশে বলা হয়েছিল, আটক অভিবাসী শিশুদের যত দ্রুত সম্ভব মুক্তি দেওয়া উচিত। তবে এক্ষেত্রে তাদের মা-বাবাদের মুক্তি প্রয়োজনীয় নয়।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা’র সময়েই আদালতের এ নির্দেশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এতে নারী ও শিশুদের জন্য ফ্যামিলি ডিটেনশন সেন্টারের ব্যবস্থা করা হয়। মুক্তি পাওয়ার আগে তাদের সেখানে ২১ দিনের বেশি রাখার বিধান ছিল না।

ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল সেন্টারের ম্যারিলেনা হিনক্যাপি। তিনি বলেন, নতুন এই প্রস্তাব ‘পুরো জীবনের জন্য একটা মানসিক যন্ত্রণা’ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে সেসব শিশুদের জন্য যারা মাত্রই মধ্য আমেরিকা থেকে একটা বিপজ্জনক যাত্রা পাড়ি দিয়েছে।

ম্যারিলেনা হিনক্যাপি বলেন, এ নীতি বাস্তবায়ন করতে চাইলে অভিবাসন এবং পারিবারিক আইন ইস্যুতে সরকারকে হয়তো আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক মন্ত্রী জন কেলি গত সপ্তাহেই এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেন। এতে বলা হয়, যেসব মা-বাবা অবৈধভাবে তাদের সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে থাকেন; তাদের যেন বিতাড়িত করা হয় কিংবা তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অনেক মা-বাবাই এ বিপজ্জনক ভূখণ্ড পার হতে পাচারকারীদের নগদ অর্থ পরিশোধ করেন।-হাফিংটন পোস্ট।
৫ মার্চ ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে