শিক্ষার্থীদের যেসব প্রশ্নের উত্তর দিলেন জুকারবার্গ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের রাজধানীতে দিল্লি আইআইটি-র শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হলেন ফেসবুক সিইও মার্ক জুকারবার্গ। তাদের ধারালো প্রশ্নে কখনও ঘুরিয়ে বাউন্সার মারলেন, কখনও বা বেকাদায় পড়ে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলেন। দেখে নেওয়া যাক কেমন ছিল সেই প্রশ্নোত্তর পর্ব-
প্রশ্ন- আমরা ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করি ঠিকই, কিন্তু যাঁরা ফেসবুক ব্যবহার করেন না বা যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা নেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব কীভাবে?
জুকারবার্গ- এই ব্যাপারে প্রথমেই আমি ইন্টারনেট.অর্গ-এর কথা বলব। বিশ্বের ২৪টা দেশে ইন্টারনেট.অর্গ এর মধ্যেই লাইভ। আরও বাড়ানো হচ্ছে। ইন্টারনেট.অর্গ-এর কারণেই বিশ্বে এক কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে। আমি অনেক জায়গা থেকে রিপোর্ট পেয়েছি যে এটা ভাল না। কিন্তু যদি এটা ভাল না হয় তাহলে আপনারা বলুন কী করলে ভাল হবে। সারা বিশ্বকে জোড়ার লক্ষ্যে আমরা বিনিয়োগ করছি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে ফেসবুক অ্যাপ ব্যবহার করতে কম ডেটা খরচ হয়। আগে ফেসবুক করতে যা ডেটা খরচ হতো, এখন তার দশ ভাগের এক ভাগ ডেটা খরচ হয়। সচেতনতা বাড়াতে ইন্টারনেট.অর্গ-এ আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরির খবর নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন- ক্যান্ডি ক্রাশ থেকে অবাঞ্ছিত ইনভিটেশন আসা বন্ধ হবে কীভাবে?
জুকারবার্গ- এই জন্যই টাউন হলের মিটিং এতো জরুরি। এই প্রশ্নটা এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশি ভোট পেয়েছে। আমি আমার ডেভেলপারদের এই সমস্যার কথা জানিয়েছি। ওরা খুব তাড়াতাড়ি সমাধান বের করে ফেলবেন।
প্রশ্ন- অকিউলাস রিফট কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্লাগিং করা হচ্ছে? ডেভেলপারে এটা কীভাবে খুলবে?
জুকারবার্গ- অকিউলাসের জন্য ডেভেলপার কিট পাওয়া যায়। যেভাবে আমাদের ভিশনে ফিট করবে। ইন্টারনেটের মাধ্যম প্রতি নিয়ত উন্নত হচ্ছে। আগে শুধু টেক্সট ছিল, এখন ফটো, ভিডিও রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত মানের ভিডিও আসবে। তবে আমি মনে করি না ভিডিওই শেষ ধাপ। এটা টু ডি প্রযুক্তি। আমি চাই সকলে নিজেদের পরিবারের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তের ছবি তুলে রাখুন।
প্রশ্ন- ফেসবুক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে অনেক বিনিয়োগ করছে। এর ভবিষ্যত্ কী?
জুকারবার্গ- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যাপারটা সত্যিই খুব মজার। এ বার আরও স্মার্ট কম্পিউটার আসবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের সাহায্যে এখনকার কম্পিউটার আরও স্মার্ট করা যাবে। আমাদের নতুন প্রকল্পে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স অন্ধদেরও ছবির বিবরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারবে। অন্য দিকে আবার এখন কোনও বিপর্যয়ের সময়ে আমাদের নিজেদেরই জানিয়ে দিতে হয় সুরক্ষিত রয়েছি। হয়তো কখনও বন্ধুদের সাহায্য নিই। ভবিষ্যতে হয়তো স্যাটেলাইট বা অন্য কোনও প্রযুক্তির সাহায্যে জানানো যবে।
প্রশ্ন- দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষদের ফেসবুক কীভাবে সাহায্য করতে পারে?
জুকারবার্গ- এটা দারুণ প্রশ্ন। আমি মাঝে মাঝেই এটা নিয়ে ভাবি। শিক্ষা নিয়ে ভাবছি। স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানের দিকেও নজর দেওয়া যায়। মার্কিন সরকার রোগ প্রতিরোধের জন্য যা খরচ করে তার থেকে দ্বিগুণ খরচ করে অসুখ সারাতে।
প্রশ্ন- যদি এলিয়েনদের থেকে অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা পান তাহলে কী চাইবেন?
জুকারবার্গ- এটা ভাল প্রশ্ন। অকিউলাসের সাহায্যে তো এটাই করার চেষ্টা করছি। টেলিপোর্ট। মানুষ সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতে থাকতে পারে। কিন্তু টেলিপোর্টের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই শুধু একটা হেডফোন কানে লাগিয়ে আমরা যেখানে খুশি চলে যেতে পারব।
প্রশ্ন- ইন্টারনেট.অর্গ দারুণ একটা উদ্যোগ। কিন্তু নেট নিউট্রালিটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। ইন্টারনেট.অর্গ কি নেট নিউট্রালিটিকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে?
জুকারবার্গ- হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা রেগুলেশন অথরিটির সঙ্গে কাজ করছি। এই প্রশ্নটা উঠছে কারণ এখনও এনেক দেশে নেট নিউট্রালিটির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেই সঠিক ধারনা নেই। আমরা লো-ব্যান্ডউইথ পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এটা নিউট্রাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, কোনও ফিল্টার থাকবে না। নেট নিউট্রালিটি অনেক ক্ষেত্রে ফ্রি অ্যাকসেসের বিরুদ্ধে। কিন্তু কোনও পড়ুয়ার যদি ইন্টারনেট না থেকেও অনলাইনে হোমওয়ার্ক করার সুযোগ পায় তাহলে অসুবিধা কোথায়? যারা পিটিশনে সই করেছে তাদের ইন্টারনেট অ্যাকসেস রয়েছে। কিন্তু যাদের অ্যাকসেস নেই তারা তো অনলাইন পিটিশন সই করার সুযোগই পাননি। আমি ফেসবুকের প্রথম ভার্সন এনে ছিলাম আমার ছাত্র ছাত্রীদের যুক্ত করতে। তখন জানতাম না এক দিন সারা বিশ্ব এটা ব্যবহার করবে।
প্রশ্ন- চার দিকে এখন স্টর্ট আপ বিজনেসের রমরমা। আদর্শ স্টার্ট আপ কী হতে পারে?
জুকারবার্গ- স্বচ্ছ ধারনা স্টার্ট আপের জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই কোনও পরিষ্কার ধারনা ছাড়াই ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু দেখা গিয়েছে স্বচ্ছ ধারনা থাকলে যা ভাবা হয় তার থেকেও অনেক বেশি ফল পাওয়া যায়।
প্রশ্ন- এখন শিক্ষার্থীরা খুব হতাশ হয়ে পড়ছেন। এই বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
জুকারবার্গ- ফেসবুক তৈরির সময় অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। মিডিয়ায় একটা প্রচলিত ধারনা রয়েছে আমি ফেসবুক তৈরি করেছি, স্টিভ জোবস অ্যাপল। দুটোই আসলে অনেক মানুষের সম্মিলিত চেষ্টার ফল। যেখানে যত বেশি মানুষ সম্মিলিত ভাবে কাজ করেন সেখানে সাফল্যের পরিমাণটাও তত বেশি হয়। কেউ একা কিছু করতে পারেন না।
প্রশ্ন- আগের কোনও সিদ্ধান্তের জন্য আফশোস করেন?
জুকারবার্গ- আমি সব রকম ভুল করেছি। যত রকমের ভুল করা যায়। কোনটা এড়িয়ে চলবেন সে দিকে মন না দিয়ে নিজের যেই দিকটা আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তা নিয়ে ভাবুন। আমরা সবাই মানুষ। কেউ পারফেক্ট নই।
প্রশ্ন- হারিয়ে যাওয়া মানুষদের খুঁজে পেতে কি আমরা কিছু করতে পারি?
জুকারবার্গ- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অ্যাম্বর অ্যালার্ট বলে একটা প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এই প্রোগ্রাম হারিয়ে যাওয়া শিশুদের ছবি নিউজফিড আকারে প্রকাশ করে। ভাল ফলও পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে আমাদের সরকার ও পুলিশের সঙ্গে কাজ করা উচিত্। ১৫০ কোটি মানুষ যখন এক সঙ্গে থাকে তখন সকলেরই কিছু দায়িত্ব রয়েছে।
২৯ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস
�