আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নানা গুঞ্জনের মধ্যে বহুল আলোচিত সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করেছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান। বলা হয়েছে, তার পিঠে চরম ব্যথা। তাকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ কথা জানিয়েছেন তার মুখপাত্র।
গতকাল স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল তার। তবে এটা কোনো রাজনৈতিক কৌশল কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন সারাদিন ছিল সরগরম। উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে উঠে যায়।
বিশেষ করে যখন বলা হয়, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) এই নেতা সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সঙ্গে দীর্ঘ ৩৫ বছরের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেন, তখন পরিস্থিতি কি দাঁড়াতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। ঘটনাগুলো এমন এক সময়ে ঘটছে যখন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাগ্য সরল দোলকের মতো দুলছে। তাকে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট।
তা নিয়ে দফায় দফায় পর্দার আড়ালে, প্রকাশ্যে মিটিং চলছে। এ জন্য গতকাল সবাই তাকিয়ে ছিলেন কি করতে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান। তিনি কি তুরুপের তাস ছুড়ে দেবেন পাকিস্তানের রাজনীতিতে! এসব খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
এতে বলা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলন থেকে তাকে বিরত রাখতে শনিবার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাদ রফিক, শাহিদ খাকান আব্বাসী ও রানা তানভির হোসেন। ওদিকে পানামাগেট কেলেঙ্কারিতে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলে তার ভাই, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রী করা হতে পারে বলেও জোর গুঞ্জন রয়েছে।
শুক্রবার এ মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। এখন রায় দিতে বাকি। তবে তার আগে রাজনীতির ঘুঁটি জায়গা মতো সাজিয়ে রাখছেন নওয়াজ শরীফ। এ জন্য শুক্রবার রাতেই দলীয় হাইকমান্ডের বৈঠক ডাকেন তিনি। শোনা যাচ্ছে সেখানেই নওয়াজ শরীফ অযোগ্য হলে শাহবাজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রী করা হতে পারে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে বিষয়টি এত সোজা নয়। শাহবাজ শরীফ পাকিস্তানের আইনসভার নিম্নকক্ষের সদস্য নন। নিয়ম অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী হতে হলে তাকে নির্বাচনে জিতে আসতে হবে। এই সমস্যা নিয়েও নওয়াজ শরীফ আলোচনা করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদি একান্তই শাহবাজকে প্রধানমন্ত্রী করা না যায় তাহলে কি হবে! সে বন্দোবস্তও করে রেখেছেন নওয়াজ।
নির্বাচনে শাহবাজ জিতে আসতে যে সময় লাগবে সেই অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাতে বলা হবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফকে। এসব কথা মিডিয়াতে আলোচনা হলেও সরকারের দায়িত্বশীলরা অস্বীকার করছেন। এসব নিয়ে নওয়াজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন)-এ ভাঙনের সুর খুঁজছেন কেউ কেউ।
যদি নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় তাহলে এমন ভাঙনের সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। আর এই সুযোগটি মোক্ষমভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টায় আছেন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান। কমপক্ষে গ্যারিসন শহর বলে পরিচিত রাওয়ালপিন্ডি থেকে স্থানীয় কিছু নেতাকে তিনি দলে বাগিয়ে নিতে পারেন।
ক্ষমতাসীন দল থেকে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলেই তাদের জন্য দরজা খুলে দেবেন তিনি। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে অযোগ্য ঘোষণা না করলে বিরোধী দলের চাপের মুখে পদত্যাগ না করার দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে দিয়েছেন নওয়াজ শরীফ। এই যখন অবস্থা তখন ব্যক্তিগতভাবে আজ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান।
গত বেশ কিছুদিনের মধ্যে এটাই প্রথম ঘটনা যা খণ্ডন করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কেন চৌধুরী নিসার ক্ষেপে গেলেন! শোনা যাচ্ছে, পানামাগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে পিএমএলএন-এর কিছু নেতা যেভাবে কথা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে যেভাবে হ্যান্ডেল করেছেন তাতে নাখোশ হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বিষয়ে তার একজন মুখপাত্র বলেছেন, চৌধুরী নিসারের সঙ্গে বৈঠক করতে পাঞ্জাম হাউজে কোনো মন্ত্রী যাননি।
আবার মন্ত্রী আব্বাসী বলেছেন, চৌধুরী নিসারের পরিকল্পনা পরিবর্তন করাতে শনিবার তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নি। তিনি বলেছেন, পিএমএলএনে কোনো মতপার্থক্য নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোথাও যাচ্ছেন না। গত ১৩ই জুলাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একটি মিটিংয়ে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী।
ওই বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের ওপর তাদের আস্থা প্রকাশ করেন। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি মিটিং হয়েছে পিএমএলএনের। কিন্তু তাতে যোগ দেননি চৌধুরী নিসার। যখন পানামাগেট মামলা নিয়ে জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম (জেআইটি)-এর বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখেছেন মন্ত্রিপরিষদের বেশির ভাগ সদস্য।
এমনকি তারা পরোক্ষভাবে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। কিন্তু এ নিয়ে যখন বিতর্কের পারদ তুঙ্গে তখন চৌধুরী নিসার নীরব। সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হয়েও তিনি কোনো কথা বলেননি। তবে এসব নিয়ে যেসব রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে তাকে ভিত্তিহীন বলে তার মুখপাত্রের মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, এমন গুজব না রটাতে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে তার মিটিংয়ের কথা রিপোর্টে প্রকাশ হলে ১২ই জুলাই এমন ক্লারিফিকেশন দেয়া হয়। ওই সময় চৌধুরী নিসার আলীর মুখপাত্র মুহাম্মদ আসলাম বলেন, দু’দিনের মধ্যে শাহবাজ চৌধুরীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো বৈঠক হয়নি। এমন রিপোর্ট করার আগে মিডিয়াকে নিশ্চিত হতে বলেন তিনি।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যক্রম দেখে বিভিন্ন টেলিভিশনে টকশোতে উত্তপ্ত আলোচনা হয়। এর প্রেক্ষিতে ১৪ই জুলাই আরেকটি বিবৃতি দেন আসলাম। তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে কোনো তিক্ততা সৃষ্টি হয়নি। এমনকি তিনি বৈঠক থেকে ওয়াকআউটও করেননি। যেদিন এই বিবৃতি দেয়া হয় সেদিনই পিএমএলএনের পার্লামেন্টারি বৈঠক ছিল। তাতে যোগ দেননি চৌধুরী নিসার।
এ বিষয়ে তার মুখপাত্র বলেছেন, ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। ১৫ই জুলাই পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী আহসান ইকবাল এক টেলিভিশন প্রোগ্রামে পিএমএলএনে কোনো মতবিরোধ নেই বলে যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি এ সময় চৌধুরী নিসারকে উদ্ধৃত করে বলেন, তার ৩৫ বছরের রাজনৈতিক চলার পথে সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো আনুগত্য। এ প্রোগ্রামের সামান্য পরে কঠিন ভাষায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়।
তাতে বলা হয়, তাকে নিয়ে একজন সহকর্মী যা বলার চেষ্টা করছেন তা তিনি বলেননি। এরই মধ্যে ২১শে জুলাই শুক্রবার গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ কথা অস্বীকার করেন। এক্ষেত্রে বলা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেদিন সংবাদ সম্মেলন করবেন সেদিন তিনি তার সিদ্ধান্ত জানাবেন। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসএস