আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উত্তর কোরিয়া হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হলে ‘যুক্তরাষ্ট্রের কলিজায়’ আঘাত হানা হবে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি আমাদের সর্বোচ্চ নেতাকে (কিম জং উন) ক্ষমতা থেকে সরানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে, তাহলে আমরা দেশটি কলিজায় নির্দয় আঘাত হানব।’
ওই মুখপাত্র আরও বলেন, কোরীয় জাতির সর্বোচ্চ মর্যাদা যদি ভূলুণ্ঠিত করার হুমকি আসে, তাহলে এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত যে কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠানকে পরমাণু অস্ত্রসহ সব ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে আগেই নিশ্চিহ্ন করবে উত্তর কোরিয়া।
সিএনএন জানায়, উত্তর কোরিয়ার এ হুমকি স্পষ্টত সিআইএ পরিচালক মাইক পম্পেওর সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের জবাবে দেয়া হল।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস আয়োজিত এক আলোচনা সভায় পম্পেও বলেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র মজুদ ও বর্ধিষ্ণু ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে কিম জং উনকে আলাদা করার একটা কার্যকর উপায় ট্রাম্প প্রশাসনকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, উত্তর কোরিয়ার মানুষ খুবই চমৎকার। কিম জং সরে যাক এটা তারা চায়।’ এ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি মূলত উত্তর কোরিয়ার সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন।
এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন এক গোপনীয় পর্যালোচনার মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী বছরের মধ্যে নির্ভরযোগ্য ও পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় তথা দূরপাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা অর্জন করতে পারে উত্তর কোরিয়া।
পরমাণু অস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোতে পিয়ংইয়ংয়ের হামলা চালানোর ব্যাপারে এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা যে সময়সীমার কথা বলেছিলেন, নতুন এ পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে সেই সময়সীমা কার্যত সংকুচিত হয়ে এসেছে। উত্তর কোরিয়ার আইসিবিএম কর্মসূচির ব্যাপারে সর্বসম্মতিতে পৌঁছাতে ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ) বা পেন্টাগনের গোয়েন্দা বিভাগের দুই বছর সময় লেগেছে।
উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাগুলোর ভিত্তি করে নতুন পর্যালোচনাটি করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেশটির অস্ত্র বিজ্ঞানীরা কারিগরি যে অগ্রগতি দেখিয়েছে, তা অবাক হওয়ার মতো এবং যে গতিতে তারা এগুচ্ছে, তাতে অনেক বিশ্লেষকের মতে, দেশটি খুব শিগগিরই আইসিবিএম সক্ষমতা অর্জন করবে।
এদিকে উত্তর কোরিয়ার আইসিবিএম সক্ষমতার ব্যাপারে নতুন এ পর্যালোচনা যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ায় তার মিত্র দেশগুলো বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে নতুন করে চাপের মধ্যে ফেলেছে। পরমাণু অস্ত্র দিয়ে বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলার আগে উত্তর কোরিয়ার এ অগ্রগতি থামাতে চায় মার্কিনি ও তাদের মিত্ররা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি মাসের শুরুতে পোল্যান্ড সফরে গিয়ে সে কথাই ‘খুব শক্তভাবে’ পুনর্ব্যক্ত করেন।
পর্যালোচনায় পেন্টাগন বলেছে, ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ কিম জং একটি নির্ভরযোগ্য ও পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম আইসিবিএস উৎপাদনে সক্ষম হবেন।
এদিকে উত্তর কোরিয়া আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ফের আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, উত্তর কোরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুসোংয়ের একটি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ক্রমবর্ধমান তৎপরতা তারা লক্ষ্য করেছেন।
তারা ধারণা করছেন, সেখানে সম্ভবত একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এ পরীক্ষা চালানো হতে পারে।
চলতি মাসের প্রথমদিকে উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম পরীক্ষা চালায়। তাদের দাবি, ওই ক্ষেপণাস্ত্র পরমাণু ওয়ারহেড যুক্ত করার প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস