আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডোকলাম ইস্যুতে ভারতকে ‘সমর্থন’ জানানোয় চীনের আক্রমণের নিশানায় জাপান। টোকিওকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলো বেইজিং। অন্যের বিষয়ে নাক না গলানোর পরামর্শ দিয়ে কড়া ভাষায় টোকিওকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বেজিং।
ভবিষ্যতে জাপানকে এরকম কোনও সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্য না করার পরামর্শ দেয় কমিউনিস্ট দেশটি। ডোকলাম নিয়ে ভারতে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত কেনজি হিরামাৎসুক জানিয়েছিলেন, গোটা পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে জাপান। ডোকলামে এরকম অচলাবস্থা চলতে থাকলে গোটা হিমালয় সন্নিহিত এলাকায় তার প্রভাব পড়বে। হিমালয় সংলগ্ন সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত ভারত-চীন সীমান্তে অস্থিরতা বেড়ে যাবে।
এরপরই তিনি চীনের আগ্রাসী নীতিকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, প্রত্যেক দেশেরই উচিত নিজেদের মধ্যে হওয়া চুক্তিকে সম্মান করা। গায়ের জোরে প্রভাব খাটিয়ে তা বদল করা উচিত নয়। ভারত ও চীনের উচিত নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে পুরো বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া। কিন্তু চীন পূর্ব শর্ত দেওয়ায় ভারত আলোচনায় বসতে পারছে না। চীনের দাবি, আগে ভারতকে সেনা সরাতে হবে।
ভারত যেহেতু কূটনৈতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছে তাই এই ইস্যুতে ভারতকেই সমর্থন করছে জাপান। তাছাড়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে ভুটানকে সুরক্ষা দিতে বাধ্য ভারত। ভারত এক্ষেত্রে ভুটানের পাশে দাঁড়ানোয় চীন-ভারত সংঘাত তৈরি হয়েছে। জাপ রাষ্ট্রদূতের এই মন্তব্যের পরই তীব্র প্রতিক্রয়া জানায় চীন।
চীনা বিদেশ মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র হুয়া চানিয়াং ধমকের সুরে বলেন, “জাপান যেন আলটপকা মন্তব্য না করে। জাপানি রাষ্ট্রদূত ভারতের সমর্থনে মুখ খুলে ঠিক করছেন না। সীমান্ত সংক্রান্ত নথি ও বাস্তব সত্য না দেখে তিনি যেন উল্টোপাল্টা মন্তব্য করছেন। জাপান যেন মনে রাখে, এটা পূর্ব চীন সাগরের সমুদ্র নয় যে জাপান আগ বাড়িয়ে জলসীমা নিয়ে মন্তব্য করবে আর চিন তা হজম করবে। ডোকলামে ভারতীয় সেনাই সীমানা অতিক্রম করে স্থিতাবস্থা ভেঙেছে। এটা জাপানের জেনে রাখা উচিত। ভারত সেনা না সরালে কোনও আলোচনায় বসবে না চীন। আর জাপান এখানে নাক গলানোর কে?”
চীনের ঐতিহাসিক চিরশত্রু জাপানের সঙ্গে সেনকাকু দ্বীপ, সমুদ্রের জলসীমা ও বাণিজ্য নিয়ে তীব্র সংঘাত রয়েছে বেজিংয়ের। তাছাড়া জাপান ও ভারত হল চীন বিরোধী সামরিক জোটের বন্ধুরাষ্ট্র। এই চীন বিরোধী জোটে আছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স-সহ আটটি দেশ।
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চলতি সংঘাতের মধ্যে ডোকলাম ইস্যুতে জাপান মন্তব্য করায় বেজায় চটেছে চীন। সাইবার দুনিয়ায় চীনা আগ্রাসন রুখতে টেলিকম ও পাওয়ার (বিদ্যুৎ) সেক্টরে নিয়মনীতি আরও কঠোর করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই দুটি ক্ষেত্রে যাবতীয় হার্ডওয়্যার ও সফটওট্যারের ৯০ শতাংশই চীন থেকে আমদানি করা।
চীন যাতে কোনও ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিকম ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রগুলিকে অচল করে না দিতে পারে সেজন্য জাতীয় নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত নীতি কড়া করছে সরকার। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ফাঁকফোকরগুলি চিহ্নিত করার কাজ চলছে। কারণ জমি ও সমুদ্রে আগ্রাসন দেখাচ্ছে চীন।
এমটিনিউজ/এসএস