সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ১১:৩৫:৪৫

কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ, মিয়ানমারে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব

কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ, মিয়ানমারে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর নিজেদের সন্ত্রাসীদের বাঙালি হিসেবে অভিহিত করায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ। এরপর দেশটির ইসলামি জঙ্গি, আরাকান আর্মি ও অন্য যেকোনো শক্তির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।

সোমবার বিকালে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাস্ট্রদুত অং মিনকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাব জানানো হয়। এসময় সীমান্তে নিরাপত্তাহীনতা কমিয়ে আনতে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সহায়তা কামনা করা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানের ব্যাপারে আজ মিয়ানমারকে সুনির্দিষ্টভাবে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে মিয়ানমারের যে উদ্বেগ রয়েছে, তা দূর করতে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করতে চায় বাংলাদেশ।

গত বুধবার রাতে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্টে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ১২ নিরাপত্তা কর্মীসহ ৯৬ জনের প্রাণহানির পর স্বাধীন রোহিঙ্গা রাজ্য প্রতিষ্ঠান জন্য আন্দোলনে থাকা সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি (এআরএসএ) এক টুইট বার্তায় হামলার দায় স্বীকার করে।

এরপর শুক্রবার ও শনিবার রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মাওন তাও, বুথিডাং ও রাথেডংসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ সময় তারা ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুম, তুমব্রু, রহমতের বিল, জলপাইতলী, ধামনখালী, কলাবাগান, তুমব্রু উত্তর পাড়া, তুমব্রু পশ্চিম পাড়ায় অবস্থান নেয়।

শনিবার দুপুরের পরে সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের ওপর মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ বিজিপি গুলি চালালে এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

রবিবার সকালে সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া ও তুমব্রু গ্রামে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার নজরদারি রাখতে দেখা গেছে। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী এসব রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার কৌশল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি বলেন, সীমান্তের তুমব্রু, ঘুমধুম ও পালংখালী নাফনদীর তীরবর্তী অঞ্চলের গ্রামবাসীরা বসবাস করছে। বিশেষ করে আতঙ্কে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত জনপদের মানুষও।

বিজিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের ভূখ-ে কোনো মর্টার শেল পড়েছে কি না, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তবে সীমান্ত পরিদর্শনে যাওয়া ম্যাজিস্ট্রেট মফিদুল আলম বলেন, মিয়ানমার পুলিশ বিজিপির ছোড়া তিনটি গুলি তুমব্রু বাজারে এসে পড়েছে। তবে কারও কোনো ক্ষতি হয়নি।

বিজিবি কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম বলেন, ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে কিছু সমস্যা হওয়ায় কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্তে জড়ো হয়েছে। কিন্তু কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সীমান্তে আরও জনবল বাড়ানো হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক মঞ্জুরুল হাসান খান জানিয়েছেন, তিন হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নাফ নদীর ওপারে সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে।

মিয়ানমার মংডুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা কেফায়ত উল্লাহ জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। হুরটেইল কাইল্ল্যা ভাঙ্গা গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। শত শত লোকজনকে ধরে নিয়ে গেছে। মেয়েদের নিয়ে গেছে নির্জন স্থানে। এই অবস্থায় মিয়ানমার ঢেকিবুনিয়া তুমব্রু থেকে এসে এপারের ঘুমধুম এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নরনারী শিশু।

বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মরিয়ম বেগম (৫৫) বেগম জানান, তার স্বামী ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী। তাই তিনি পালিয়ে এসেছেন।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হন। এরপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ব্যাপক অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা এলাকায় হত্যাযজ্ঞ চালায়। সে সময়ে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

প্রসঙ্গত, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করে, যাদের বেশিরভাগই দরিদ্র এবং প্রচণ্ড বৈষম্যের শিকার। রোহিঙ্গারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে রাখাইনে বসবাস করে আসলেও এই সংখ্যালঘু জাতিকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী গণ্য করা হয়। মিয়ানমারের সরকার রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করে রেখেছে। জাতিসংঘ মনে করে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যে দমনাভিযান চালায় তা জাতিগত নিধনের শামিল। তবে অং সান সু চি সরকার এ অভিযোগ ক্রমাগত নাকচ করে আসছে।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে