বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:২৯:৪৪

লড়াই শুরু হয়েছে, হুঁশিয়ারি উত্তর কোরিয়ার

লড়াই শুরু হয়েছে, হুঁশিয়ারি উত্তর কোরিয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাপান নয়, উত্তর কোরিয়ার মিসাইলের নিশানায় গুয়াম। উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছে। বুধবার, এভাবেই আমেরিকাকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধবাজ নেতা কিম জং উন।

ফাঁকা বুলি নয়, এবার সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছেন কিম। তার বক্তব্য, প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন আগ্রাসন রুখতে এই পদক্ষেপ। আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার ষড়যন্ত্র ভণ্ডু করে দেয়া হবে। ভয়াবহ ফল ভোগ করতে হবে ওই দুই দেশকে। শুধু তাই নয় কিম স্পষ্ট জানিয়েছেন, জাপান নয়, ‘কোরিয়ান পিপলস আর্মি’-র মিসাইলের নিশানায় রয়েছে গুয়ামের মার্কিন সেনাঘাঁটি। উল্লেখ্য, শনিবার একাধিক ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে উত্তর কোরিয়া। আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়ার জবাব দিতে ওই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছিলেন কিম জং উন।

মঙ্গলবার, রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে ব্যালিস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণ করে কিমের সেনা। জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায় উত্তর কোরিয়ার ছোড়া ওই ব্যালিস্টিক মিসাইল। জাপানি রাডারে ক্ষেপণাস্ত্রটি ধরা পড়তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। বেজে উঠে ‘এয়ার রেড’ সাইরেন। তড়িঘড়ি বাসিন্দারা আশ্রয় নেন ‘বম্ব শেল্টার’-এর মধ্যে। তবে কোনো ক্ষতি না করেই মাঝ সমুদ্রে আছড়ে পড়ে ওই মিসাইলটি। তারপরই কমিউনিস্ট দেশটিকে কড়া ভাষায় বার্তা দেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনে কিমের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেবে জাপান বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আবে। শুরু হয় সিওল ও ওয়াশিংটনের মধ্যে জরুরি বৈঠক।

কোরীয় উপসাগরে ব্যাপক যৌথ সামরিক মহড়া চালাচ্ছে আমেরিকা ও উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী। এই মহড়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। সামরিক মহড়ার আড়ালে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়াশিংটন ও সিওল, অভিযোগ জানিয়েছে পিয়ংইয়ং। ইতিমধ্যে আমেরিকার বিরুদ্ধে পরমাণু হামলার হুমকি দিয়েছেন কমিউনিস্ট দেশটির যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রনেতা কিম। যাই হোক না কেন, কোরীয় উপসাগরে হুমকি পালটা হুমকিতে পরিস্থিতি বিস্ফোরক। তারপর কিমের বিবেচনাহীন যুদ্ধের আস্ফালনে যে কোনও মুহূর্তে বেজে উঠতে পারে যুদ্ধের দামামা, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

উ.কোরীয় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাশিয়া রাশিয়া উত্তর কোরীয় পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাপানের ওপর দিয়ে পিয়ংইয়ং ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর মঙ্গলবার দেশটি এ উদ্বেগ প্রকাশ করে।

রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তির খবরে বলা হয়, ‘আমরা লক্ষ্য করছি কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি দিন দিনই উত্তেজনার দিকে যাচ্ছে। সেখানকার পরিস্থিতিতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

টোকিও জানায়, উত্তর কোরিয়ার ছোঁড়া ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপ হোক্কাইডোর ওপর দিয়ে গিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটিকে ‘একটি নজিরবিহীন হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
রিয়াবকভ জানান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক যৌথ সামরিক মহড়া চলার মধ্যেই উত্তর কোরিয়া তাদের এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালো।

জাপানের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা উ. কোরিয়ার উত্তর কোরিয়া মঙ্গলবার জাপানের ওপর দিয়ে একটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের উত্তর-পূর্বাংশের হোক্কাইডো প্রদেশের দ্বীপ এলাকা অতিক্রম করে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে।

খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে উত্তর কোরিয়া ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পর জাপান জরুরি সতর্কতা জারি করলেও ক্ষেপণাস্ত্রটি আকাশেই ধ্বংস করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
শুক্র ও শনিবার কয়েক দফা স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার উত্তেজনার মধ্যেই পিয়ংইয়ং এ ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালো।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এ ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বার্ষিক সামরিক মহড়া চলার মধ্যেই উত্তর কোরিয়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে ২০০৯ সালের পর এবারই দেশটি জাপানের ওপর দিয়ে এ পরীক্ষা চালালো।

জাপানের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার পশ্চিমাঞ্চল থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ার আগে প্রায় ১৪ মিনিট জাপানের লোকালয়ের উপরে ছিল।

উত্তর কোরিয়া সুনান থেকে প্রায় ২ হাজার ৭ শ’ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সাগরে পড়ার সময় ক্ষেপণাস্ত্রটি তিনটি অংশে ভাগ হয়ে যায়। তার আগেই জাপান সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের সতর্ক করে মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠানো হয়।

জাপানের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়াশিদা সুগা টোকিওতে সাংবাদিকদের বলেন, “এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এভাবে আর চুপ থাকা যায় না। আমরা উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলব।”

পিয়ংইয়ং আঞ্চলিক শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে বলেন, “আমরা চাই বিশ্বনেতারা উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সব ধরনের চাপ অব্যাহত রাখুক।”

এর আগে ১৯৯৮ ও ২০০৯ সালে উত্তর কোরিয়ার ছোঁড়া দুটি রকেট জাপানের আকাশ সীমা অতিক্রম করে। উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়েছিল, সেগুলো কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, অস্ত্র হিসেবে নয়।

উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়ার রপ্তানি এবং বিনিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জোরদারে এ মাসের গোড়ার দিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে সপ্তম দফার অবরোধ আরোপ করে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে