এক সংগ্রামী নারী কুস্তিগীরের গল্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিতু সরকার নামটি শুনতে বাঙালি মনে হলেও মূলত তিনি ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মেয়ে। শুধু মেয়ে নন, তিনি একজন প্রতীকও বটে। ভীষণ আর্থিক অনটন, সমাজ, পরিস্থিতির সঙ্গে লড়ে করে জীবন অতিবাহিত করতে হয় তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এই মেয়ে। সম্প্রতি ব্রাজিলে জুনিয়র ওয়ার্ল্ড রেস্টলিং চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। এ বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে রুপোও জিতেছেন। তবে রাস্তা কতটা কঠিন ছিল, সেটা নিতু-র চেয়ে আর কেউ ভালো বোঝেননি। খবর এই সময়।
সাধারণত ১৩ বছর বয়সে বেশিরভাগ ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা এবং স্কুল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তবে নিতুর তেমন ভাগ্য হয়ে উঠেনি। সেই বয়সেই ৪৩ বছর বয়সের এক পাত্রের সাথে তাকে বিয়ে দেন তার অভিভাবকরা। আবার তিনি ছিলেন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন। মাত্র তিন দিনের সংসার করেই রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যান নিতু। সে বছরই অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে ফের বিয়ে হয় তার। পরের বছর যমজ সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তবে ভাগ্যে বোধহয় অন্য কিছু লেখা ছিল। ছোট থেকে কুস্তির প্রতি ভীষণ আগ্রহ ছিল নিতুর। কিন্তু খেলার নামটি পর্যন্ত জানতেন না তখন।
নিতু বলেন, 'প্রথমে আমার পরিবার সম্পূর্ণ ভাবে এই খেলার বিরুদ্ধে ছিল। তার উপর ছোট পোশাক পরে খেলাতে তাদের ভীষণ আপত্তি ছিল। কিন্তু আমার স্বামী আমাকে সাহস দেন। গ্রামের বহু মানুষ তাকে বারণ করেছিলেন, তিনি শোনেননি। আজ তার জন্যই আমার স্বপ্নের দিকে হাঁটতে পারছি। তবে এর পরেও যে কতটা কঠিন পরিশ্রম করে এই পথে হাঁটতে হয়েছে তা একমাত্র আমিই জানি।'
রোজ ভোর ৩টার সময় উঠে দেড় ঘণ্টা হেঁটে নিজের গ্রাম ভিওয়ানি থেকে রোহতকে পৌঁছান তিনি। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয় প্রশিক্ষণ। ৬ ঘণ্টা অনুশীলন সেরে ফের একই ভাবে হেঁটে বাড়িতে ফেরা। গত ২ বছর এই একই রুটিনের এক চুলও এদিক ওদিক হয়নি। প্রশিক্ষক মনদীপ সিং জানাচ্ছেন, ২ বছরের মধ্যেই খুব ভালো জায়গায় চলে গিয়েছেন নিতু। যদি তার টেকনিকের দিকে তিনি একটু যত্ন নেন তবে আন্তর্জাতিক মানের কুস্তিগীর হতে পারেন তিনি। নিতুরও আশা তেমনটাই। ভবিষ্যতটা যদি তাতে একটু পাল্টায়। তার সংসারে যদি একটু সচ্ছলতা আসে।
৩ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�