আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ ও অং সান সু চির নীরবতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। রাখাইন অঞ্চলের রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব অথবা বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস।
সেই সঙ্গে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানের কথাও জানিয়েছেন মহাসচিব। অন্যদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারে যাবেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান।
গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুসারে, রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় গতকাল বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। পরে সেখানে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে। সু চির বিরুদ্ধাচরণ করে পোস্টারও প্রদর্শন করা হয় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে। পরে জাকার্তায় থাকা মিয়ানমারের দূতাবাসের বাইরেও বিক্ষোভ করেন তারা।
একইভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা গেছে ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুরাবায়াতে। এ ছাড়া মিয়ানমার দূতাবাসের বাইরে গতকালও বিক্ষোভ হয়েছে পাকিস্তান, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায়। আগের দিন প্রায় ১১ লাখ মানুষের বিক্ষোভ হওয়া রাশিয়ার চেচনিয়ায় গতকাল ক্ষুব্ধ মানুষের সমাবেশ হয়েছে। ভারতের কলকাতায় পোড়ানো হয়েছে অং সান সু চির ছবি।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের সঙ্গে কথা বলতে বাংলাদেশে আসছেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান। বুধবার মধ্যরাতে নিজস্ব বিমানে তার বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা।
তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী হাকান কোভুসোগলু বলেন, রাখাইনে নিপীড়নের শিকার আমাদের অনেক মুসলিম ভাইবোন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেই বাংলাদেশ সফরে যাবেন এমিনি এরদোগান। কোভুসোগলু বলেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগান রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিয়ে মুসলিম বিশ্বের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করছেন।
কোভুসোগলু বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য পাঠানো তুরস্কের এক হাজার টন ত্রাণ বিতরণের অনুমতি দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। টেলিফোনে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সঙ্গে কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নেইপিদো ওই অনুমতি দেয়। ওই অঞ্চলে অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় তুরস্কের এই সহায়তা রাখাইন রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সামরিক হেলিকপ্টার থেকে বিতরণ করা হবে।
এসব হেলিকপ্টার রাখাইনে অবতরণ করবে এবং স্থল থেকেই সেখানে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। নিউইয়র্কে তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, গত ২৪ আগস্ট রাখাইনের পুলিশ পোস্ট ও সেনাক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার যে ঘটনা ঘটেছে তার নিন্দা জানিয়েছি আমরা।
কিন্তু এরপর থেকে আমরা কেবল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সহিংসতা আর নির্বিচারে হামলার খবর পাচ্ছি। রাখাইন অঞ্চলের রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গুতেরেস তার উদ্বেগের কথা নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন এবং মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধের পদক্ষেপ নিতে বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, রাখাইনের মুসলমান রোহিঙ্গাদের অধিকারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত এবং বিষয়টি যে এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। পরিস্থিতির আরও অবনতি ঠেকাতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের পথ খুঁজতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আগামী তিন মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ডলার সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো। আন্তর্জাতিক অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা-আইওএম-এর পরিচালক (অপারেশনস) মোহাম্মদ আবদিকার বলেছেন, রাখাইনের পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার আগেই আরও বহু মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়বে, তার স্পষ্ট লক্ষণ তারা দেখতে পাচ্ছেন। পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা না পেলে এই রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কঠোর ভারত : রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে কঠোর মনোভাবে অবিচল থাকার কথা জানিয়েছে ভারত। মানবিক হওয়ার জন্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আবেদন উপেক্ষা করে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী। ওদের ভারত থেকে বের করেই দেওয়া হবে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে বলে দিতে চাই, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের আওতায় নথিভুক্ত হোক বা না হোক, রোহিঙ্গারা ভারতের চোখে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, ওদের ভারত থেকে বের করে দেওয়া হবে। কিছুদিন আগেই জানানো হয়েছিল ভারতে বসবাসকারী ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এরপর থেকেই ভারত সরকারের পদক্ষেপ অমানবিক আখ্যা দিয়ে সরব হয়েছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। ভারত সরকারকে রোহিঙ্গাদের বের করে দেওয়া থেকে বিরত রাখার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দিয়েছেন দুজন রোহিঙ্গাও। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বল ঠেলে দিয়েছে সরকারের কোর্টে। বলেছে, এ বিষয়ে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
যাবতীয় নিন্দা, সমালোচনা উপেক্ষা করে পাল্টা রিজিজু বলেন, ভারতই গোটা দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, গ্রহণ করেছে। অতএব শরণার্থীদের প্রতি কী করা উচিত, তা নিয়ে কেউ যেন ভারতকে উপদেশ না দেয়। কেন্দ্রীয় সরকার রোহিঙ্গাদের বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু করতে সব রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসএস