বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৯:৫৪:৫৭

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ‘আজব শর্ত’

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ‘আজব শর্ত’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চলমান রোহিঙ্গা সংকটে প্রায় ৮ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা তাদের অধিকার বিশেষ করে দেশটির নাগরিকত্ব চেয়ে আসছে। আর সরকার দীর্ঘদিন সেই দাবিকে উপেক্ষা করে আসছে।

তাদেরকে শুধু উপেক্ষা নয়, রীতিমত রাষ্ট্রীয় মদদে দমনপীড়ন চালানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর, যার সর্বশেষ নজির গত ২৪ আগস্ট। দেশটির সেনাবাহিনী অভিযানের ঘোষণা দেওয়ার আগেই রাখাইন রাজ্য অবরুদ্ধ করে রাখে।

এরই জবাবে রোহিঙ্গা বিছিন্নবাদীরা অন্তত ২৫টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে ওইদিন প্রবেশের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয়। এতে মিয়ানমারের নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির ক্ষমতাসীন সরকারের হিসাবেই ৪ শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হন।

অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র হিসাবে, সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে গত ২৫ আগস্ট থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে একই ধরনের ঘটনায় পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। এভাবে কয়েক দশক ধরে শুধুমাত্র বাংলাদেশে অন্তত ৫ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

এরপর পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়েও মিয়ানমার সরকার তাদের অবস্থান জানান। সু চির দপ্তরেই সংবাদ সম্মেলনে সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইউ থাং তুন বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে আজব সব শর্ত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘রাখাইনে সংঘাতের পর যারা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে, মিয়ানমারের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে না পারলে তাদের ফেরত নেওয়া হবে না।’

যাদের নাগরিকত্বই স্বীকার করে না মিয়ানমার, তাদেরই ফেরত নিতে প্রমাণ চেয়েছে নাগরিক সনদের। এমনই এক আজব শর্ত তুললেন তিনি।

শুধু তাই নয়, ইউ থাং তুনের ভাষ্যে, ‘নাগরিক হলে আপনি কত বছর মিয়ানমারে বসবাস করেছেন, তারও প্রমাণ দিতে হবে। এসব সত্য বলে প্রমাণ করতে পারলে অবশ্যই তিনি মিয়ানমারে ফিরতে পারবেন। কিন্তু কেউ মিয়ানমারের নাগরিক প্রমাণে ব্যর্থ হলে, তাকে ফেরত নেওয়া হবে না।’

তিনি জানান, চলমান সংকটে তার দেশের মানুষ ভিত নন। তারপরও রাজধানী নাইপে দো, ইয়াঙ্গুন, মান্দালেই ও মাওলেমিংয়ে নিরাপত্তা সতকর্তা জারি করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের ইঙ্গিত করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, মধ্যপ্রাচ্যে দুর্বল হয়ে পড়া জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারে।’

তিনি বলেন, রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (এনএসএ) ছাড়াও প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং সীমান্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রতিদিন আলোচনা করছেন প্রেসিডেন্ট।

ইউ থাং তুন বলেন, ‘রাষ্ট্র জনগণের সুরক্ষা ও রাখাইন রাজ্য সুরক্ষায় পুলিশের শক্তি বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।’

তিনি জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে কফি আনান অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশ সরকার যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছে।

ইউ খাং তুন আরও জানান, রাখাইনে ত্রাণ সহায়তার জন্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে মিয়ানমার সরকার। ইতোমধ্যে ডেনমার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ করেছে।

কোনো দেশ সহায়তা করতে চাইলে প্রথমে সরকারকে অবগত করতে হবে বলেও জানান দেশটির নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে