আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এক বছর বিদেশ সফরের পর রোববার বাড়ি ফেরার কথা ছিল ভারতের মার্চেন্ট নেভিতে কর্মরত সুব্রত দাসের। কিন্তু তার আগেই বাড়িতে এসে পৌঁছল তার মৃত্যুসংবাদ। পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরের একটি মেসবাড়ির বাথরুম থেকে উদ্ধার হল ৩২ বছর বয়সী ওই নৌ-কর্মীর রক্তাক্ত দেহ। মাথার পিছনে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন।
সুব্রতহবাবুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘনীভূত হচ্ছে রহস্যের মেঘ। কারণ মৃত্যুর পর থেকেই রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায় তার ব্যাগে থাকা মার্কিন ডলার। এমনই দাবি মৃতের পরিবারের। তাদের স্পষ্ট অভিযোগ, ডলারের লোভেই খুন করা হয়েছে সুব্রতবাবুকে। ঘটনায় বন্ধুরা জড়িত বলেও অভিযোগ তাদের।
যদি দুর্ঘটনাই হয়ে থাকে তবে ডলারগুলি কে নিল? কয়েকজনের ভূমিকা সন্দেহজনক বলে মনে করছে পুলিশ। ওই ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যুর পিছনে এক মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের তথ্যও উঠে এসেছে তদন্তে। তবে নিশ্চিতভাবে এখনই কিছু বলছে না পুলিশ। সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে রহস্যের কিনারা করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
প্রায় এক বছর আগে আমেরিকায় সফর করেছিলেন মার্চেন্ট নেভির কর্মী সুব্রত দাস। তার আদি বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের চাকদহে। স্ত্রী ও এক বছরের সন্তান আগরপাড়ায় থাকেন। সুব্রতবাবুর পরিবারের দাবি, ১০ সেপ্টেম্বর রোববার বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। তবে সুব্রতবাবুর বন্ধুদের থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবারই ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে বাড়ি না গিয়ে তিনি ব্যারাকপুরের একটি মেসবাড়িতে উঠেছিলেন।
সুব্রতবাবুর বন্ধু সুমন ঘোষ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তাকে ফোন করে কয়েকদিনের জন্য ব্যারাকপুরে একটি ঘর ভাড়া দেখে দিতে বলেন। সে কারণে তিনি টিটাগড় থানা এলাকার রয়েল পার্কের ওই মেসবাড়িতে একটি ঘর ভাড়া করে দেন। ওই মেসবাড়ির বাথরুম থেকেই শুক্রবার রাতে উদ্ধার হয় সুব্রতবাবুর দেহ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মেসবাড়ির একটি ঘরে তিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র থাকত। তাদের মধ্যেই একজন বাথরুমের মধ্যে সুব্রতবাবুকে পড়ে থাকতে দেখেন।
এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় রহস্য দানা বেঁধেছে। মেসবাড়ির কেয়ারটেকার ও আবাসিকদের দাবি, ঘটনার দিন বাইরের কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেখা যায়নি। দুপুরে আকণ্ঠ মদ্যপান করে ফিরেছিলেন সুব্রতবাবু। তারপরই রাতে তার দেহ উদ্ধার হয়। এরই মধ্যে আরও এক রহস্যময়ী চরিত্রর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার দিন এক মহিলা সুব্রতবাবুকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু তিনি কে, তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনার সঙ্গে তার কোনও যোগ আছে কি না সে বিষয়েও এখনও ধোঁয়াশায় পুলিশ।
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে। প্রথমত রবিবার বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও চারদিন আগে কেন ফিরে এলেন সুব্রতবাবু? এলেনই যদি তবে বাড়ি গেলেন না কেন? এবং কেনই বা মেসবাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। যদি খুন হয়ে থাকেন তবে ডলারগুলি কি খুনিই হাতিয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
দুর্ঘটনায় সুব্রতবাবুর মৃত্যু হলে ডলারগুলি কে নিল? রহস্যময়ী ওই মহিলাটি কে? এবং তার সঙ্গে কী সম্পর্ক সুব্রতবাবুর। এই ঘটনার সঙ্গে যোগ আছে এমন প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে টিটাগড় থানার পুলিশ। পাশাপাশি এলাকার লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে কাউকে এখনও আটক করা হয়নি। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।এছাড়া সুব্রতবারর মোবাইলের কল রেকর্ডও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এমটিনিউজ/এসএস