বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৮:৪১:০৫

হামলা চালাবে ইরাক-তুরস্ক যৌথ বাহিনী!

হামলা চালাবে ইরাক-তুরস্ক যৌথ বাহিনী!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরাকে আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার ওপর আয়োজিত গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ইরাক ও তুরস্কের সেনারা দুই দেশের অভিন্ন সীমান্তে বড় ধরনের যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ উপেক্ষা করে কুর্দি নেতারা সোমবার এ গণভোটের আয়োজন করেন।

ইরাকের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওসমান আল-গানিম ইরাক ও তুরস্কের অভিন্ন সীমান্তে বিশাল এ মহড়ার কথা ঘোষণা করেন। ইরাকের আরবি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল আস-সুমারিয়া এ খবর দিয়েছে। গণভোটকে কেন্দ্র করে ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার ও কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশটির জাতীয় সংসদের সদস্যরা বিরোধপূর্ণ কুর্দি এলাকাগুলোতে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছিলেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরাক ও তুরস্কের সেনারা যৌথ মহড়া শুরু করল। এদিকে ইরাকের কুর্দিস্তানে গণভোটের পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন সীমান্তবর্তী দেশ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। স্থানীয় সময় সোমবার ইস্তাম্বুলে দেয়া এক বক্তব্যে এরদোগান এ হুমকি দেন।

এরদোগান বলেন, ‘যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে ইরাকের সীমান্তে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী তৈরি আছে।’ তিনি বলেন, এই গণভোটের পরিপ্রেক্ষিতে কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের (কেআরজি) তেল রফতানি আটকে দিতে পারে তুরস্ক। ‘আমরা তুরস্ক থেকে কাউকে বা কোনো কিছু ইরাকে প্রবেশ করতে দেবো না। আমরা সীমান্ত বন্ধ করে দেবো। সীমান্ত দিয়ে কোনো কিছুই যেতে পারবে না।’ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ইরাকের সাথে তুরস্কের একমাত্র স্থলসীমান্ত হাবুরের প্রবেশ-প্রস্থান বন্ধ করে দেয়া হবে। এরপর দেখি কোন্ পথ দিয়ে তেল পাঠায়, কাদের কাছে তেল বিক্রি করে তারা। কপাট আমাদের হাতে। আমরা আটকানোর সাথে সাথে এটা (রফতানি) বন্ধ হয়ে যাবে।

তুরস্ক থেকে কুর্দি সীমান্ত অভিমুখে যান চললেও উল্টো পথে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইরাকের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা তুর্কি সেনাবাহিনীর সাথে সীমান্তে যৌথভাবে কুর্দি বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে। তুরস্কের এক সম্প্রচার কর্মকর্তা জানান, গণভোটের পরপরই আঙ্কারা রুদাও টেলিভিশনের স্যাটেলাইট চ্যানেল তার্কস্যাট বন্ধ করে দিয়েছে। ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্রও সতর্ক করে বলেছিল, বিবদমান অঞ্চলে হওয়া গণভোট অস্থিতিশীলতা উসকে দিতে পারে। সোমবার পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল রবার্ট ম্যানিং সাংবাদিকদের বলেন, উত্তর ইরাকের গণভোট আইএসবিরোধী যুদ্ধের মনোযোগ সরিয়ে নেবে না বলে আশা করছেন তারা। ইরাককেই কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলের সমস্যার সমাধান করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে সোমবার ইরাকি কুর্দিস্তানে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের ফলে তুরস্ক, ইরান ও সিরিয়াসহ অনেক দেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বৃহত্তর কুর্দিস্তান আন্দোলনের আশঙ্কায় নতুন করে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইরাকের উত্তরে কুর্দিস্তান এলাকা সেই সাদ্দাম হোসেনের আমল থেকেই স্বায়ত্তশাসনে অভ্যস্ত। এবার পাকাপাকিভাবে স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র ঘোষণা করতে চায় কুর্দি নেতৃত্ব। সেই লক্ষ্যে গণভোটে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বাধীন কুর্দিস্তানের পক্ষে রায় দেবেন বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। তবে এই গণভোট কার্যকর করার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। ইরাকে কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের প্রধান মাসুদ বারজানি এই গণভোটকে হাতিয়ার করে ইরাকের সরকারের সঙ্গে স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। বারজানি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গণভোটে ইতিবাচক রায় পেলে বাগদাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই তিনি সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার চেষ্টা করবেন।

কুর্দি এলাকার এক টেলিভিশন চ্যানেলের সূত্র অনুযায়ী প্রায় ৭৮ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কুর্দিস্তানের বাইরে ইরাকের উত্তরে কিছু অংশেও এই গণভোট আয়োজন করা হয়েছে। আইএসের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কারণে সেসব এলাকা আপাতত কুর্দি বাহিনীর দখলে।

কুর্দিদের একটা বড় অংশ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিলেও আরব ও তুর্কমেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে। স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়ার জন্য তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই গণভোটকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলেও বিপুল তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। কারণ, ইরাকি কুর্দিস্তান সত্যি স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলে ইরান, তুরস্ক ও সিরিয়াসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে ছড়িয়ে থাকা কুর্দি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোও একে একে সেই রাষ্ট্রে যোগ দিতে পারে।-আল জাজিরা
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে