আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আজ ঘোষণা করা হবে শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম। ৩১৮ জন সুপরিচিত ও অপরিচিত প্রার্থীর মধ্যে থেকে নির্বাচক প্যানেল বেছে নিবেন নোবেলজয়ীর নাম। নোবেল কমিটির নিয়ম অনুসারে, এবছর নমিনেশন পাওয়া প্রার্থীদের নাম আরো ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখা হবে। কিন্তু যারা নমিনেশন পাঠাচ্ছেন সেই সব সাবেক নোবেলজয়ী, রাজনীতিক এবং প্রতিষ্ঠানগুলো বার বার তাদের প্রার্থীর নাম উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন। এসবের কিছু খবরের যেমন সত্যতা রয়েছে, তেমনই রয়েছে কিছু ভুয়া খবরও।
এবছর যেসব মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের নমিনেশনের গুজব বা সত্যিকার খবর পাওয়া গেছে তারা হলো, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, জো কক্স, দি বুলগেরিয়ান অর্থোডক্স চার্চ, ডেভিড বোয়ি, ভ্লাদিমির পুতিন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিবছর এই তালিকাটা তৈরি করে নরওয়ের পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট অসলো। এবছর সম্ভাব্য শান্তিতে নোবেলজয়ী কে কে হতে পারেন সেই তালিকা প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান।
জাভেদ জারিফ ও ফেদরিকা মোগেরিনি
এবছর গার্ডিয়ানের করা শান্তিতে নোবেল প্রাপ্তির তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন জাভেদ জারিফ ও ফেদরিকা মোগেরিনি। ২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ঐতিহাসিক চুক্তিতে উপনীত হতে মধ্যস্থতা করেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদরিকা মোগেরিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও নর্থ কোরিয়ার মধ্যকার চলমান উত্তেজনার মধ্যেই জুরিবোর্ড এই টিমকে বেছে নিতে পারে কারণ এই চুক্তির মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র উন্নয়ন ও বিস্তার রোধ করার একটি ল্যান্ডমার্ককে সমর্থন জানানো হয়।
দি হোয়াইট হেলমেট এবং তাদের নেতা রাইদ আল সালেহ:
সাধারণভাবে পরিচিত গ্রুপ সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার নোবেলের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন। এই গ্রুপটি ছয় বছরের যুদ্ধে বিধ্বস্ত একটি দেশের নাগরিকদের সহায়তা করার চেষ্টা করে। নৃশংস সেনা নির্যাতন এবং ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যেও মানবিক সেবা ও সামাজিক সৌহার্দ্যের একটি নমুনা ছিলো তাদের কাজ।
ক্যান দুনদার এবং কুমহুরিয়েট
জার্মানিতে স্বেচ্ছা নির্বাসন নেওয়া ক্যান দুনদার একজন কলামিস্ট এবং ধর্মনিরপেক্ষ রিপাবলিকান তুর্কিশ দৈনিক কুমহুরিয়েটের সম্পাদক ছিলেন। এই দৈনিকটির বেশ কিছু কর্মকর্তাকে তাদের কাজ সম্পন্ন করার জন্য সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এই সম্পাদক এবং তার সাবেক পত্রিকার জন্য পুরস্কারটি হবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের কঠোর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা:
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা এর আগে দুইবার শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু ১৯৮১ সালের পরে আর নয়। বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের অভিবাসন ও গৃহহীন হওয়ার সময় ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির নেতৃত্বে হওয়া কাজগুলো হয়তো নজরে আসবে জুরিবোর্ডের। সাম্প্রতিক সময়ে এই এজেন্সি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, ইউরোপের শরণার্থী সমস্যা এবং মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মুসলিম রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করেছে।
অ্যাঞ্জেলা মেরকেল:
১০ লাখ শরণার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশীর জন্য জার্মানীর বর্ডার খুলে দেওয়ার কারণে তিনিও এবছর শান্তিতে নোবেলের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা গেছে।
পোপ ফ্রান্সিস:
এখনও পর্যন্ত কোনো পোপ এই পুরস্কার জিতেননি বটে। কিন্তু পোপ ফ্রান্সিস অনেকেরই পছন্দের তালিকায় রয়েছে। শরণার্থী, দারিদ্রতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে শক্তিশালী অবস্থানের জন্যই তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন:
ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সচেতন হয়ে উঠেছে এই ইউনিয়ন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেশ কিছু সমালোচিত সিদ্ধান্ত যেমন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বা হিজরা সেনাকর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে আইনি লড়াই চালিয়েছে এই ইউনিয়ন। তারা ট্রাম্পকে ব্যাখ্যা করেন, একজনের সাংবিধানিক সংকট হিসেবে।
রাইফ বাদাইয়ের ছবি হাতে তার স্ত্রী ইনসাফ হায়দার
রাইফ বাদাই:
রাইফ বাদাইও পেতে পারেন এবছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। ২০১২ সালে জুন মাসে তিনি গ্রেপ্তার হন। এরপর দোষী সাব্যস্ত হন ওয়েবসাইট ও টিভি কমেন্টের মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি অপমানজনক কথা বলার দায়ে। ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০০০ দোররা মারার শাস্তি দেওয়া হয় তাকে। সাহস, যুক্তি ও বক্তব্যর স্বাধীনতার জন্য কাজ করছেন দাবি করে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার মুক্তির পক্ষে সোচ্চার।
৬ অক্টোবর ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর