শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০৬:২৪

সাহায্য করলেন না ছেলেটাকে! আমি কী নিয়ে বাঁচব, কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা

 সাহায্য করলেন না ছেলেটাকে! আমি কী নিয়ে বাঁচব, কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ছেলেটা চলে গেল! আপনারা সাহায্য করলেন না! আমি কী নিয়ে বাঁচব? শুক্রবার পুলিশকর্তাদের সামনে কাঁদতে কাঁদতে এই ক’টা কথাই বলতে শোনা গেল দার্জিলিঙে নিহত পুলিশকর্মী অমিতাভ মালিকের মা গঙ্গাকে।

এদিন সকাল ৯টা নাগাদ অমিতাভের ভাই অরুণাভকে ফোন করেছিলেন তাঁর ‘বউমণি’। অমিতাভের স্ত্রী বিউটিকে এই নামেই ডাকেন দ্বাদশ শ্রেণির প়ড়ুয়া অরুণাভ। জানালেন, বিউটি তাঁকে বলেছিলেন, ‘ওর (অমিতাভ) চোট লেগেছে। হাসপাতালে যাচ্ছি। টেনশনের কিছু নেই’। উদ্বিগ্ন শ্বশুর সৌমেনকেও একইভাবে আশ্বস্ত করেছিলেন বিউটি। অল্পক্ষণের মধ্যেই টেলিভিশনের পরদায় ‘ব্রেকিং নিউজে’ ভেসে ওঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে অমিতাভের মৃত্যুর খবর। মুহূর্তে পাল্টে যায় মধ্যমগ্রাম পাটুলির শরৎকাননের একতলা বাড়ির পরিবেশ।

মধ্যমগ্রাম বয়েজ স্কুলের পর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন অমিতাভ। উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা থাকলেও অর্থাভাবে হয়নি। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েও ২০১৪ সালের জুনে পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর পদে যোগ দেন। যদিও পুলিশের চাকরিতে মায়ের আপত্তি ছিল।

প্রশিক্ষণের পরে ২০১৫’র মে থেকে পাহাড়েই ‘পোস্টিং’ ছিল অমিতাভের। চলতি বছরের ১৩ মার্চ বারাসতের ন’পাড়ার বাসিন্দা বিউটির সঙ্গে বিয়ের পর থেকে সস্ত্রীক দার্জিলিঙেই থাকতেন। পরিবার সূত্রের খবর, মা-বাবার সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তিনি। শেষ কথা হয়েছিল দিন দশেক আগে। এদিন সৌমেন বলছিলেন, ‘‘তখনই বলেছিল, গোর্খাল্যান্ড হতে দেব না। প্রাণ গেলে যাবে।’’

শচীন দেব বর্মন, মহম্মদ রফি, অনুপমের গান ভালবাসতেন অমিতাভ। তাঁর চাকরি পাওয়ার পরে শরৎকাননে মালিক পরিবারের অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া এক ঘরের বাড়ির সংস্কার হয়েছে। ঋণ নিয়ে তৈরি হয়েছে তিনটি নতুন ঘর। বাইরে প্লাস্টার ও ভিতরে রঙের প্রলেপ অবশ্য এখনও পড়েনি।

এদিন সেই বাড়িতেই এসেছিলেন রাজ্য পুলিশের ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিইও) তন্ময় রায়চৌধুরী-সহ পুলিশের অন্যান্য কর্তারা। নিহতের পরিবারের পাশে পুলিশ থাকবে, সেই প্রতিশ্রুতি দেন তন্ময়। তাঁদের দেখেই গঙ্গা বলেন, ‘‘বাবু (অমিতাভ) বলত, ও দেশের সেবা করছে।... যারা এ কাজ করেছে, তাদের কঠিন শাস্তি দিন।’’ ফেসবুক ওয়ালে অমিতাভ নিজের সম্পর্কে লিখেছিলেন পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গের উদ্ধৃতি: ‘ব্যর্থতা অবধারিত, সাফল্য অনিশ্চিত’। এক প্রতিবেশী তারই উল্লেখ করে বলেন, ‘‘দেশের জন্য শহিদ হল। কিন্তু এভাবে, ভাবিনি।’’

কালীপুজো উপলক্ষে আগামী সোমবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল অমিতাভের। দুর্গাপুজোর দিন পনের আগে একবার এসেছিলেন অসুস্থ স্ত্রীয়ের চিকিৎসার জন্য। এদিন সে-সব কথা শোনাচ্ছিলেন অরুণাভ। তাঁকে জড়িয়ে ধরেই নিহত পুত্রকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছিলেন মা।-এবেলা
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে