আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মুসলিমদের মতো দেখা যায় বলে অনেক বৃটিশ নাগরিক নির্যাতিত হচ্ছেন। তাদেরকে অবমাননা করা হচ্ছে। তাদের গায়ের রং ও মুখে দাড়ি থাকায় তাদেরকে সন্ত্রাসী বলা হয়।
বলা হয় আইসিসের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আছে। শুধু তা-ই নয়, তারা মৌখিক এসব আপত্তিকর মন্তব্য শোনা ছাড়াও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ওই গবেষণা রিপোর্টটি জমা দেয়া হয়েছে বৃটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্সে। এতে বলা হয়েছে, এমন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বাসার সামনে স্থাপিত মেইলবক্সে অথবা তাদের মালিকানাধীন দোকানের জানালা ভেঙে ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে পশুর মল। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এতে বলা হয়, অমুসলিম অথচ মুসলমানের মতো দেখা যায় বলে এসব মানুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। গবেষণা চালাতে গিয়ে এমন বেশ কিছু মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ব্রেক্সিট গণভোট ও লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলার পর এই বিদ্বেষমূলক আচরণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হাউজ অব কমন্সে হেট ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস উইক চলাকালে এই গবেষণা রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে অমুসলিমরা কিভাবে ইসলামবিরোধিতার শিকারে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সে বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন ড. ইমরান আওয়ান ও ড. আরিন জেমপি।
সরকারি জরিপ ও প্রাতিষ্ঠানিক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটির অপরাধ বিষয়ক সহযোগী প্রফেসর ড. আওয়ান বলেছেন, যদিও এসব ঘটনা ঘটছে মানুষকে চিনতে না পারার কারণে, তাই বলে এই ইসলামবিরোধিতাকে প্রশ্রয় দেয়া উচিত হবে না।
তিনি বলেন, গবেষণা বলে দিচ্ছে, কিভাবে মানুষ ঘৃণাপ্রসূত অপরাধের শিকার হচ্ছে। ওই গবেষণায় ১৯ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ২০ জন অমুসলিমের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এরা কেউ কৃষ্ণাঙ্গ। কেউ শ্বেতাঙ্গ। কেউ এশিয়ান, শিখ, খ্রিস্টান, হিন্দু, নাস্তিক। তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে যাতে তাদেরকে কেউ চিনতে না পারেন।
এর মধ্যে একজন বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমে তাকে একটি ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ভোট আউট। কিক আউট দ্য মুসলিম। ব্রেক্সিট ভোটের পর আরেকজনকে বলা হয়েছিল, আজ এমন একটি দিন যেদিন তোমার মতো মানুষের কাছ থেকে আমরা মুক্ত হলাম।
অন্যরা বলেছেন, বিশ্বজুড়ে ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের সন্ত্রাসী হামলার পর এই হয়রানি বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন বলেছেন, যখনই বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয় তখনই, প্রতিবার আমি ও আমার পরিবারের প্রচণ্ড ঘৃণাপ্রসূত অপরাধের শিকার হই।
সাক্ষাৎকারে আরো একজন বলেছেন, সব মিলিয়ে সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। যেসব এশিয়ানকে দেখতে মুসলিমদের মতো তাদের ওপর ইসলাম বিরোধিতার প্রভাবটা বেশি করে পড়ছে। এভাবে খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ছে ইসলামবিরোধী অপরাধ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের অনুসন্ধানে যে নতুন তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, গত বছরে বৃটেনে ঘৃণা প্রসূত অপরাধ বেড়েছে এক তৃতীয়াংশ। কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে বলেছেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ও তার অবস্থানের কারণে মুসলিম বিরোধিতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মুসলিমবিরোধী সেন্টিমেন্টকে উসকে দেয়া হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে একজন বলেছেন, আমি লক্ষ্য করেছি ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সামাজিক মিডিয়ায় এমন অবমাননা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার দৃষ্টিভঙ্গি খুবই কঠোর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে চান। এমনটা আপনি পাঁচ বছর আগে ভাবতে পারতেন না।
অন্য একজন বলেছেন, ট্রাম্প আসলেই সব কিছু পাল্টে দিয়েছেন। তিনি একজন বর্ণবাদী, মুসলিম বিরোধী। তিনি পুরো পরিবেশকে পাল্টে দিয়েছেন। মুখে দাড়ি আছে এমন একজন অমুসলিম বলেছেন, তারা ভেবেছিল আমি একজন মুসলিম। ইসলাম গ্রহণ করেছি। কিন্তু আমি তো তা করি নি। তারপরও আমাকে বিশ্বাসঘাতক, সন্ত্রাসী বলা হয়।
আরো একজন বলেছেন, যখনই আমার দাড়ি একটু বড় হয় তখনই আমার সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়। আমি তো মুসলিম নই। তা সত্ত্বেও লোকজন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। উলউইচে সন্ত্রাসী হামলার পর লোকজন আমার দিকে খারাপভাবে তাকায়।
এমন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা বলেছেন, তারা এতে বিষণ্নতায়, শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। প্রতিদিন আমাদেরকে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে- বলেছেন আরেকজন। আমাদেরকে প্রতিদিনই অবমাননার মুখে পড়তে হয়। ভীতি প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু এই অবস্থা তো চলতে দেয়া যায় না। কিন্তু এ অবস্থায় তাদেরকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। -এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি