আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তুরস্কের সাথে সৃষ্ট সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য চলতি সপ্তাহে ব্রাসেলসে এক সম্মেলনে মিলিত হতে যাচ্ছেন ইউরোপীয় নেতারা। বর্তমানে এ দুই পক্ষের সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে খারাপ। আলোচনায় প্রাধান্য পাবে তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে এরদোগান সরকারের ধরপাকড় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির সাথে কূটনৈতিক বিতণ্ডা। গত মাসে তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পদ দেয়াবিষয়ক আলোচনা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল। কিন্তু কোনো বিকল্প পন্থা সৃষ্টি না করেই ইউরোপ যদি তুরস্কের সাথে এ সংলাপ বন্ধ করে, তাহলে তা পরিস্থিতিকে শুধু জটিলই করবে।
দীর্ঘদিন থেকেই নিরাপত্তা ও অভিবাসন ইস্যুতে ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার তুরস্ক ১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করে। এখনো ইউরোপের অনেক দেশ তুরস্ককে সদস্যপদ দেয়ার বিষয়ে আন্তরিক আছে। আবার জার্মানির মতো অনেক দেশ উদ্বিগ্ন যে, এ রকম বড় একটি দেশকে তারা অনুগত করতে পারবে কি না তাই নিয়ে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে গণভোটের সময় জার্মানি তার দেশে প্রবাসী তুর্কিদের মধ্যে একে পার্টির নেতাদের প্রচারণা চালানোর অনুমতি দেয়নি। জবাবে জার্মান সরকারকে ‘নব্য নাৎসি’ আখ্যা দেয় রজব তাইয়েব এরদোগানের সরকার। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে কয়েকজন জার্মান নাগরিককেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করে আঙ্কারা। ফলে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়।
তুরস্কের সাথে ইউরোপের সম্পর্কের এ অবনতি দেশটির পশ্চিমাবিমুখ হওয়ার একটি লক্ষণ। অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রকারী গুলেনকে ফেরত না দেয়া ও সিরিয়ার কুর্দিদের সমর্থন দেয়ার কারণে ওয়াশিংটনের সাথে আঙ্কারার সম্পর্কও অবনতি হয়। ধীরে ধীরে রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে শুরু করে এরদোগান সরকার। রামিয়ার তৈরি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ক্রয়ের চুক্তি করে ক্রেমলিনের সাথে।
২০০৫ সালে তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছিল সেটি এখন অনেকটাই স্তিমিত। কিন্তু ইউরোপ যদি সেই আলোচনা এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে তবে তা তুরস্ককে পশ্চিমাদের কাছ থেকে আরো দূরে সরে যেতে প্রলুব্ধ করবে। আলোচনা চালু থাকলে হয়তো তুরস্ক আশায় থাকবে একদিন ইইউতে স্থান পাওয়ার। তাই সংলাপ বাতিল না করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত তুরস্কের জন্য সহযোগিতার একটি উচ্চাভিলাষী বিকল্প প্রস্তাব ঘোষণা করা। এর মধ্যে থাকতে পারে ইউরোপীয় বাজারে তুর্কি পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবেশাধিকার এবং শ্রম স্থানান্তরের সুযোগ বৃদ্ধি। আর এর পাশাপাশি চলতে পারে ইইউতে অনুর্ভুক্তির আলোচনা। তা না হলে তুরস্ক হয়তো অন্য কোনো বলয়ে নিজেদের আশ্রয় খুঁজে নেবে।
তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরস্পরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসেই এরদোগান বলেছেন, তাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কাজেই এ দুই পক্ষের সম্পর্ক রক্ষায় ইউরোপকে নিজেদের প্রয়োজনেই আন্তরিক হতে হবে।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস