শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১১:১৬:৩০

৩৫০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা নিক্ষেপ

৩৫০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা নিক্ষেপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিরিয়ার সরকারি বাহিনীই গত এপ্রিলে দেশটির বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত একটি শহরে সারিন গ্যাস হামলা চালিয়েছিল বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। গত ৪ এপ্রিল বাশার আল আসাদ বাহিনীই ইদলিব প্রদেশের খান শেইখুন শহরে রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালায় বলে জাতিসঙ্ঘ কর্তৃপ ‘নিশ্চিত’ হয়েছে; হামলায় অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু হয়। ওই সময় সিরিয়ার বিরোধী দল, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো এ জন্য বাশার বাহিনীকে দায়ী করে।

রাসায়নিক হামলার জবাব দিতে এপ্রিলের শেষ দিকে ভূমধ্যসাগরে অবস্থানরত দু’টি যুদ্ধজাহাজ থেকে সিরিয়ার হোমস প্রদেশের শায়রাত বিমান ঘাঁটিতে ৫৯টি টমাহক ক্রুজ পেণাস্ত্র নিপে করে যুক্তরাষ্ট্র। শায়রাত বিমান ঘাঁটি থেকেই খান শেইখুন শহরে রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালানো হয়েছিল।

যদিও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এবং তার মিত্র রাশিয়া শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, তারা বিদ্রোহীদের একটি অস্ত্র গুদামে বিমান হামলা চালিয়েছিল। গুদামটি রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির উপাদানে পূর্ণ ছিল এবং সেখান থেকেই সারিন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে।

হামলার পরপরই ফরাসি গোয়েন্দারা এর পেছনে সিরিয়া সরকারের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছিল।
ফ্রান্সের গোয়েন্দাদের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ অথবা তার ঘনিষ্ঠজনদের কেউ ওই হামলার নির্দেশ দিয়েছিল।

ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসবিরোধী যুদ্ধে ব্রিটেন এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার বোমাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদপত্র মিডল ইস্ট আইয়ের এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে এ কথা।

২০১৪ সালে আইএসবিরোধী ‘অপারেশন শেডার’ শুরু হওয়ার পর থেকে গত তিন বছরে এসব হামলা চালিয়েছে ব্রিটেনের রয়্যাল এয়াফোর্স। তবে ব্রিটিশ সরকার দাবি করেছে, তাদের হাতে এখনো পর্যন্ত কোনো বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। যদিও বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এ সংখ্যা তাদের এই যুক্তি অসার পরিণত করেছে এবং এ বিষয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়মিত তাদের হামলার তথ্য প্রকাশ না করলেও মিডল ইস্ট মনিটরের উদ্যোগে সাপ্তাহিক হামলার পরিসংখ্যান এবং ‘ড্রোন ওয়ার্স’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে পাওয়া গেছে হামলার পরিসংখ্যান।

এতে দেখা গেছে, এ বছর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ব্রিটিশ বাহিনী আইএস স্থাপনা লক্ষ্য করে তিন হাজার ৪৮২টি বোমাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ৮৯টি পভওয়ে-৪ বোমা এবং ৪৮৬টি ব্রিমস্টোন ক্ষেপণাস্ত্র। টাইফুন ও টর্নেডো যুদ্ধবিমান থেকে এসব হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া তাদের রিপার ড্রোন থেকে চালানো হয়েছে ৭২৪টি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায়ই তাদের সরবরাহকৃত তথ্যে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা উল্লেখ করে না। তবে বৃহস্পতিবার রাতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার জানিয়েছে, সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে তারা অন্তত ৮৬টি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

দীর্ঘ এই হামলায় কোনো বেসামরিক লোক নিহত হয়নি বলে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যে দাবি করেছে তার প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও বিরোধীদলগুলো।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা ভিন্স ক্যাবেল বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বের সেরা বাহিনীগুলোর একটি, সে হিসেবে তাদের হামলা যথাযথ হওয়ার কথা। তবে এটি অকল্পনীয় যে, আমাদের এই দীর্ঘ হামলায় কোনো বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়নি। সশস্ত্র বাহিনীকে নয়, আমাদের সরকারকে এসব হামলায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আন্তরিক হতে হবে।’

আইএসবিরোধী হামলায় নেতৃত্ব দেয়া মার্কিন বাহিনী জানিয়েছে, গত তিন বছরে তাদের বিমান হামলায় ৭৮৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। তারা মনে করছে এই যুদ্ধ ছিল গত কয়েক দশকের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং একটি যুদ্ধ। কাজেই ব্রিটিশ বাহিনীর বেসামরিক নাগরিক নিহত না হওয়ার দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।-বিবিসি
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে