বুধবার, ০১ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:৪৫:৩৩

দুই এরশাদের ভয়াল ইউরোপ যাত্রা ও গুলিবিদ্ধ হয়ে ফিরে আসা

দুই এরশাদের ভয়াল ইউরোপ যাত্রা ও গুলিবিদ্ধ হয়ে ফিরে আসা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর দুই শিক্ষিত যুবক এ এম এরশাদ মিয়া ও মো. এরশাদ খন্দকার। এর মধ্যে এরশাদ মিয়া হোটেল ম্যানেজমেন্টে অনার্স সম্পন্ন করেন মালয়েশিয়ার সারওয়াক শহরের ইন্টি কলেজ থেকে।

২০১৫ সালে ফিরে আসেন দেশে। চেষ্টা শুরু করেন ইউরোপে পাড়ি জমাতে। পরিচয় হয় স্থানীয় এক দালাল মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। মোশাররফ নিশ্চয়তা দেন বৈধ পথেই এরশাদ মিয়াকে ইউরোপের গ্রিসে পাঠানোর।

ভিসা প্রসেস, বিমান টিকিট, বিএমইটি কার্ড- এরকম সকল কাজ সম্পন্নের জন্য মোশাররফ দাবি করেন ৮ লাখ টাকা। এরশাদ মিয়া এত টাকা জোগাড়ের পথ না পেয়ে পিছিয়ে আসতে চাইলে মোশাররফ বাতলে দেন নতুন পথ।

জানান, অর্ধেক টাকা জোগাড় করো, বাকি অর্ধেক গ্রিসে পৌঁছে পরিশোধ করলেই চলবে। এ কথায় আশ্বস্ত হয়ে এরশাদ বিক্রি করে দেন তার একটি মুদি দোকান। স্থানীয় এক সমবায় সমিতি থেকে তোলেন ঋণ।

সব টাকা তুলে দেন মোশাররফ ও রেজওয়ান ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন জসিমের হাতে। প্রতিশ্রুতি মতো মোশাররফ ও জসিম ভিসা (ভুয়া), বিএমইটি কার্ড, প্লেনের টিকিট (ইস্তাম্বুল পর্যন্ত) তুলে দেন এরশাদ মিয়ার হাতে। এরশাদ মিয়া কল্পনায় ভাসতে থাকেন ইউরোপের স্বপ্নময় জীবনে!

২৩শে মে ২০১৭। গ্রিসের উদ্দেশ্যে ইস্তাম্বুল পর্যন্ত বিমানের টিকিট নিয়ে ঢাকা ছাড়েন এরশাদসহ আরো কয়েকজন। ইস্তাম্বুলে ইমিগ্রেশন শেষ করে বিমানবন্দরের বাইরে বের হতেই বন্দুক যুদ্ধের মধ্যে পড়েন এরশাদ মিয়া ও এরশাদ খন্দকারসহ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পাড়ি জমানোর আশা নিয়ে যাওয়া যুবকরা।

একজন পেটে আরেকজনের কনুইয়ের উপর অংশে গুলিবিদ্ধ হন দুই এরশাদ। ৯ দিন পর হাসপাতালে জ্ঞান ফিরলে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তাদের। জানতে পারেন নির্মম সত্য- আসলে তারা পড়েছিলেন বাঙালি আর লিবীয় জিম্মিকারীদের হাতে। দুই জিম্মিকারী দল এরশাদদের নিজেদের কব্জায় নিতেই শুরু করে বন্দুকযুদ্ধ। যাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর খুব কাছে পৌঁছে যান তারা।

রাজধানীর কাওরানবাজারের র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেসব্রিফিংয়ে বিদেশ যাত্রার এই ভয়াল অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন ভুক্তভোগী এরশাদ মিয়া। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এরশাদ বলেন, আল্লাহকে ধন্যবাদ তিনি আমাকে নিশ্চিত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে এনেছেন।

তিনি বলেন, ইউরোপের লোভ দেখিয়ে লিবিয়া পাঠিয়ে মানবপাচারকারী এই চক্রটি আমাদের বিদেশের মাটিতে জিম্মি করার চেষ্টা করেছিল। লিবিয়ার আরেকটি চক্র আমাদের তাদের অধীনে নিতে বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বিমানবন্দরের কিছু্‌টা বাইরেই। ওই বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে পড়ে আমরা দু’জন গুলিবিদ্ধ হই। বাকিদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল জানি না। ৯ দিন পর জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমরা হাসপাতালে।

এরশাদ বলেন, দুর্ভাগ্য সেখানেই শেষ হয়নি। পাচারকারী চক্র নানাভাবে হাসপাতাল থেকে আমাদের তাদের অধীনে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে লিবিয়াস্থ বাংলাদেশি দূতাবাস ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশন (আইওএম) এর সহায়তায় আমরা পাচারকারীদের প্রলোভন এড়িয়ে দেশে ফিরতে সক্ষম হই।

এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদ মিয়া বলেন, পাচারকারী চক্র আমাদের হাতে ইস্তাম্বুল পর্যন্ত বিমানের টিকিট দেয়। যাত্রার আগে এ নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুললে তারা বলে, যাত্রাবিরতির জন্য ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে নামলে তোমরা ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা পাবে। এর আগেই আমাদের ইমেইল ঠিকানায় নাকি গ্রিসের টিকিট পৌঁছে দেয়া হবে। টিকিট নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে নিষেধ করে। আমরাও বিএমইটি কার্ডের মতো নিশ্চিত ডকুমেন্ট থাকায় সব বিশ্বাস করেছি।

প্রেসব্রিফিংয়ে র‌্যাবের লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরান হাসান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুনাম ও বিপুল চাহিদার কারণে একশ্রেণির মানবপাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন প্রলোভনে শিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষিত যুবকদের ইউরোপে প্রেরণ করছে। পাচারের শিকার যুবকরা বিভিন্ন দেশে পৌঁছে বনে-জঙ্গলে বা কোথাও জিম্মিকারীদের কাছে আটকাবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এদিকে, দেশে এসব ভিকটিমদের  আত্মীয়স্বজন-পরিজনের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মুক্তিপণের টাকা। এরকমই একটি চক্রের দুই সদস্য মোশাররফ হোসেন খালাসী (৫৫) ও দেলোয়ার হোসাইন জসীম (৫০)। র‌্যাবের চৌকস একটি দল দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে সোমবার মাদারীপুরের কুষ্টিয়া ও ঢাকার চকবাজার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ৭০টি পাসপোর্ট ও নগদ ১ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এমজমিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে