আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, সিরিয়া ইস্যুতে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যকার সহযোগিতার ফলাফল একথাই প্রমাণ দিচ্ছে যে, চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেও তেহরান এবং মস্কো নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।
তেহরান সফররত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দেয়া সাক্ষাতে এ কথা বলেছেন তিনি। এ সময় রুশ প্রেসিডেন্ট তেহরানের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে মস্কোর সম্পর্ক আরো গভীর করার বিষয়ে প্রস্তাব দিলে সর্বোচ্চ নেতা তাকে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের কার্যকর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের অভিজ্ঞতাকে সম্পর্ক আরো গভীর করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, ‘সিরিয়াতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট উগ্র সন্ত্রাসীদেরকে সমর্থন দিয়েছে এবং তারা সেখানে পরাজিত হয়েছে যা অস্বীকার করার উপায় নেই কিন্তু তারপরও তারা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।’
সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ইরান-রাশিয়ার সহযোগিতার ভূয়শী প্রশংসা করেন সর্বোচ্চ নেতা। তিনি একথাও বলেন যে, সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখায় পশ্চিম এশিয়ায় রাশিয়ার প্রভাব বেড়েছে। সিরিয়া ইস্যুতে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা অব্যাহত রাখার কথা বলেন সর্বোচ্চ নেতা।
এ সময় তিনি পরিষ্কার করে বলেন, সিরিয়ার জনগণই সে দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করবে; অন্য কেউ নয় কিংবা সিরিয়া সরকারকে চাপ দিয়ে বিদেশি কোনো শক্তি কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করাতে পারবে না।
ইয়েমেন প্রসঙ্গে খামেনি বলেন, ‘সৌদি আরব সেখানে প্রতিদিন অপরাধযজ্ঞ চালাচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সৌদি আরবের এই বর্বরতা রিয়াদকে ভিন্ন কোনো সংকটে ফেলবে।’
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইরান ও রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করতে পারে। দু দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বর্তমানের চেয়ে আরো অনেক বেশি বাড়ানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ইরানকে কৌশলগত মিত্র ও মহান প্রতিবেশী বলে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো ক্ষেত্রে সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়টিকে তিনি স্বাগত জানাবেন।
পুতিন বলেন, ইরান ও রাশিয়া জ্বালানি, আধুনিক প্রযুক্তি, কৃষি এবং যৌথ তেল-গ্যাস ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করতে পারে।
সিরিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ফলাফলের প্রশংসা করে পুতিন দেশটির জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ও মাননাসই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বিবেচনার আহ্বান জানান।
সিরিয়া বিষয়ে যৌথ লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নেতার অবস্থানের প্রশংসা করে পুতিন বলেন, এটা যেমন ছিল জ্ঞানদীপ্ত সিদ্ধান্ত তেমনি খুবই ফলপ্রসূ।
তিনি আরো বলেন, ‘সিরিয়া ইস্যুতে আমরা বিশ্বের সামনে একথা প্রমাণ করেছি যে, বাইরে হস্তক্ষেপ ছাড়াই আঞ্চলিক সমস্যা আমরা নিজেরা সমাধান করতে পারি।’
ইরানের পরমাণু সমঝোতা সম্পর্কে পুতিন বলেন, একতরফাভাবে এ সমঝোতায় কোনো রকমের পরিবর্তন আনার বিরোধী মস্কো। পাশাপাশি তার দেশ ইরানের প্রতিরক্ষাসহ অন্য কোনো ইস্যুর সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি যুক্ত করার পক্ষপাতি নয়।
এর আগে বুধবার তেহরান পৌঁছান পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সাম্প্রতিক টানাপড়েন ও সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে তার এ সফর।
পরমাণু সমঝোতা রক্ষায় রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে: রুহানি
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা রক্ষার ক্ষেত্রে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। রাজধানী তেহরানে বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রুহানি এসব কথা বলেন।
তিনি বহুপক্ষীয় পরমাণু সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ সমঝোতা রক্ষা করা সম্ভব হলে আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে তা অবদান রাখবে। সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তেহরান ও মস্কো উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী চূড়ান্ত লড়াইয়ে দু দেশের মধ্যকার পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বরোপ করেন।
প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, সিরিয়া সংকটসহ যেকোনো উত্তেজনা কমাতে তেহরান ও মস্কোর মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থাকাটা জরুরি। তিনি রাশিয়াকে কৌশলগত ও সৎ প্রতিবেশী মিত্র বল উল্লেখে করেছেন।
বৈঠকে পুতিন বলেন, ইরান ও রাশিয়া জ্বালানি, অর্থনীতি, শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি এবং পরিবহন যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক সুসম্পর্ক রেখে চলেছে। পুতিন জোর দিয়ে বলেন, কোনো একপক্ষ পরমাণু সমঝোতা বানচাল করতে পারবে না।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস