আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৯৭১ সাল। তখন ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি তুলে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে লড়েছেন ভারতীয় সেনারা। কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে সাহায্য করতে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করল মার্কিন নৌসেনার ‘টাস্ক ফোর্স-৭৪’।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের আদেশ পেলেই গর্জে উঠবে ‘ইউএসএস এন্টারপ্রাইস’। সেদিন ইন্দিরা গান্ধীর ‘সোভিয়েত’ তাসে ভেস্তে যায় মার্কিনী চাল। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় চার দশক। পালটেছে সমীকরণ। দাবার চালে ভারতের এককালের ‘শত্রু’ই আজ পরম ‘মিত্র’।
সেদিন ভারত মহাসাগরে আমেরিকার প্রবেশ রুখতে মরিয়া ছিল ইন্দিরা গান্ধীর ভারত। আজ সেই আমেরিকার সঙ্গেই যৌথ নৌমহড়ায় নামছে ভারতীয় নৌসেনা। পরিস্থিতির এই নাটকীয় পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে আগ্রাসী চীন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দিল্লির দরবারে মার্কিন প্রভাব বিস্তারের প্রধান কারণ চীনের উত্থান। দক্ষিণ-চীন সাগর থেকে শুরু করে ‘OBR’ প্রকল্পে হোয়াইট হাউসের উদ্বেগ চরমে।
তাই এবার ‘ড্রাগন’কে কুপোকাত করতে চক্রব্যুহ রচনা করছে ‘আঙ্কল স্যাম’। ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে সঙ্গে নিয়ে চীনের চারধারে ‘চক্রব্যূহ’ গড়ে তুলতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে চীনা প্রভাব খর্ব করারও চেষ্টা চলছে।
কীভাবে চীনকে বেকায়দায় ফেলতে চলেছে ভারত ও আমেরিকা?
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার সিরিসেনা সরকারের সঙ্গে ইদানিং ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে মোদি সরকার। ফলে হামবানটোটা বন্দর চীনের হাতে গেলেও তার পাশেই একটি বিমানবন্দরের দখল পাচ্ছে ভারত। এছাড়াও চীন ঘেঁষা মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনকে কড়া বার্তা দিতে বিরোধী নেতা মোহাম্মদ নাশিদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করছে দিল্লি।
উল্লেখ্য, আগস্ট মাসে দিল্লির অনুরোধ উড়িয়ে চীনা যুদ্ধজাহাজগুলিকে নোঙর ফেলার অনুমতি দেন ইয়ামিন। এছাড়াও শ্রীলঙ্কার বন্দরের কাছে দেখা যায় চীনা পারমাণবিক সাবমেরিন। যদিও তাদের শ্রীলঙ্কার বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দেননি রাষ্ট্রপতি সিরিসেনা।
প্রসঙ্গত, দিল্লি-ওয়াশিংটনের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্কের আঁচ লেগেছে চীনের গায়েও। আসন্ন ১৩ নভেম্বরের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘ইস্ট এশিয়া সামিট’। ওই সামিটে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।
চীনকে নিশানায় রেখেই যে এই বৈঠক তা সকলের কাছেই স্পষ্ট। আর এতেই অশনি সংকেত দেখছে চীনের শি জিনপিংয়ের সরকার। এক বিবৃতিতে চীনা বিদেশ মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, চার দেশের মধ্য আলোচনা যেন তৃতীয় কোনও দেশকে নিশানায় রেখে না করা হয়।
সম্প্রতি, ডোকলামে মান খুইয়ে পিছু হটেছে চীন। একই ভাবে দক্ষিণ-চীন সাগরেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মার্কিন রণতরী। ফলে প্রবল চাপে রয়েছে কমিউনিস্ট দেশটি। তাই এবার চক্রব্যুহ গড়ে ‘ড্রাগন’কে বন্দি করার পরিকল্পনা করছে দিল্লি-ওয়াশিংটন।
এমটিনিউজ/এসএস