শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:০৭:৪৭

সৌদি আরবে এত ঘটনার পিছনে রহস্য কী?

সৌদি আরবে এত ঘটনার পিছনে রহস্য কী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রতিদিন নতুন নতুন ঘটনার জন্ম হচ্ছে সৌদি আরবে। বিশেষ করে বাদশা সালমানের ছেলে মুহাম্মদ বিন সালমান দেশটির ক্রাউন প্রিন্স নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটছে।

দেশটিতে রাজপরিবারের সদস্য, মন্ত্রী, শীর্ষ ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার হচ্ছেন। তাদের বিলাসবহুল হোটেলে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে, ব্যক্তিগত বিমানগুলো আটকে রাখা হয়েছে আর সম্পত্তি জব্দ করা হচ্ছে। কিন্তু এত কিছু কেন ঘটছে? এর কারণ কী শুধুই দুর্নীতি? নাকি যুবরাজের ক্ষমতা অসীম করার কৌশল?

উত্তরটা হলো, দুটোই। দুর্নীতি সৌদি আরবে প্রচলিত একটি ব্যাপার। তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিতে ব্যবসা করতে গেলে ঘুষ বা উপঢৌকন দেওয়া যেন ব্যবসারই একটি অংশ। সেখানে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় বসে আছেন, তাদের অনেকেই অকল্পনীয় সম্পদের মালিক। কিন্তু সরকারি বেতনে এত অর্থ উপার্জন সম্ভব নয়। তাদের বেশির ভাগ সম্পদই এসেছে বিভিন্ন অফশোর অ্যাকাউন্ট থেকে।

সৌদি আরবের এই ধনাঢ্য কিছু ব্যক্তির পেছনেই লেগেছেন যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান, আর তাকে সমর্থন দিচ্ছেন তার বাবা ৮১ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান। তিনি একটি বার্তা দিতে চান যে, ব্যবসার পুরনো রীতিনীতি আর চলবে না। সৌদি আরবে এখন সংস্কার দরকার এবং একুশ শতকের সঙ্গে তাল মেলাতে একটি আধুনিক জাতি হয়ে ওঠা দরকার।

এসব গোপন বা অফশোর হিসাবের অর্থও পেতে চাইছে সৌদি সরকার। অর্থের হিসাবে যা হবে আনুমানিক প্রায় ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৫ লাখ কোটি)। কিন্তু এর শেষ কোথায়? দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল এর মধ্যেই জানিয়েছেন, প্রথম ধাপের মাত্র সমাপ্তি হয়েছে। তার মানে সামনে আরও অনেকে গ্রেফতার হতে যাচ্ছেন।

যদিও ক্ষমতাসীন আল সৌদ পরিবার কখনই প্রকাশ করেনি, দেশটির তেল বিক্রির কী পরিমাণ অর্থ রাজপুত্র বা রাজপরিবারের সদস্যদের পেছনে খরচ হয়, যাদের সংখ্যা কয়েক হাজার। ২০১৫ সালে যুবরাজ বিন সালমান নিজেই ৫০ কোটি ইউরো (৫০০০ কোটি টাকা) খরচ করে রাশিয়ান এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল ইয়াট কিনেছেন বলে শোনা যায়।

এখন অনেক সৌদি সাধারণ নাগরিকের আশা, বিত্তশালীদের এসব সম্পদ সাধারণ মানুষের পেছনেই খরচ করা হবে। যদিও এ তদন্তের শেষ ঠিক কোথায় হবে, তা পরিষ্কার নয়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু এসব বিষয়ই নয়, পুরো ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতার যোগসূত্র আছে।

৩২ বছর বয়সী যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান বা এমবিএস, যে নামেও তিনি পরিচিত, এর মধ্যেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোয় ক্ষমতা করায়ত্ত করেছেন। তিনি এখন বিশ্বের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি দেশে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা চালু করেছেন, যার উদ্দেশ্য দেশের তেল নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা।

পিতার প্রিয় পুত্র হিসেবে তিনি দেশটির সর্বময় ক্ষমতাশালী রাজকীয় আদালতও পরিচালনা করেন। তার ঘনিষ্ঠ মিত্রও রয়েছে। ওয়াশিংটন সফর এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিয়াদ সফরের পর হোয়াইট হাউসের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ইয়েমেনের সঙ্গে একটি লড়াই এবং কাতারের সঙ্গে ব্যর্থ বয়কটের সিদ্ধান্তের পরেও তিনি দেশের তরুণদের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয়।

তবে তার কিছু শত্রুও আছে। অবশ্য যুবরাজ জানেন, তিনি যেসব সংস্কার পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছেন, অনেকেই তার বিরোধিতা করবে। তবে তিনি এখন কিছু উদাহরণ দেখাতে চান যে, তার পরিকল্পনায় যেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাদের তিনি সরিয়ে দেবেন। রাজকীয় পরিবারের অনেক সদস্য চিন্তিত যে, তিনি খুব তাড়াতাড়ি অনেক বড় পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

তবে তাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ, দেশটির ধর্মীয় নেতারা এসব পদক্ষেপকে কীভাবে দেখবেন? যাদের সমর্থনের ওপরে আল সৌদ পরিবার অনেকটাই নির্ভরশীল। ক্ষমতা হালাল করার জন্য এসব প্রচেষ্টা আর নারীদের গাড়ি চালনার অনুমতি দেওয়ার মতো বিষয়গুলো তারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু পশ্চিমা ধাঁচের বিনোদন, সিনেমা হল চালুর মতো বিষয়গুলো তারা কীভাবে নেবেন, তা পরিষ্কার নয়।

বিশেষ করে তরুণদের চাকরির যেসব প্রতিশ্রুতি সালমান দিয়েছেন, তা রক্ষা করাও তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। শনিবারের এসব পদক্ষেপ কি উন্নত, স্বচ্ছ সৌদি আরবের দিকে নিয়ে যাবে, নাকি দেশটিকে আরও জটিলতার দিকে ঠেলে দেবে, তা হয়তো সময়ই বলে দেবে। বিবিসি

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে