রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৬:৪৯

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে হেরে যাবে যুক্তরাষ্ট্র : জ্যাঁ-মাক

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে হেরে যাবে যুক্তরাষ্ট্র : জ্যাঁ-মাক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে গেলে পরাজিত হবে যুক্তরাষ্ট্র। ওই অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সংখ্যা অনেক কম। এমন কি সেখানে যুদ্ধের রসদ সরবরাহেও ঘটবে বিপত্তি। মিত্র দেশগুলোও এক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়াকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক একজন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাঁ-মাক জোয়াস এ সতর্কতা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে। বেশ আগেই তিনি এমন সতর্কবার্তা দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন প্রশাসনের কাছে।

তার সেই চিঠি এখন ফাঁস হয়ে গেছে। তা থেকেই জানা যাচ্ছে এমন সব কথা। তিনি আরো সতর্কতা দিয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ঘাঁটিগুলোতে গতানুগতিক বা রাসায়নিক হামলা হতে পারে। ফলে তাতে পুরোদমে যুদ্ধে লিপ্ত হতে বিলম্ব ঘটতে পারে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাঁ-মাক জোয়াস ওই চিঠিটি লিখেছিলেন কংগ্রেস সদস্যদের কাছে।

তা নজরে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন নিউজ উইকের। তারা সেই চিঠি হাতেও পেয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেস সদস্যদের উদ্দেশ্য করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাঁ-মাক জোয়াস বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের শাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধে সীমিত সামরিক অভিযান চালানো হলে তা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।

এতে পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক সক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং এতে বিপুল পরিমাণ মানুষ হতাহত হবে। উদ্ধার অভিযান সঙ্কটে পড়বে। সেখানে যুদ্ধে লিপ্ত নয় এমন এক লাখের বেশি মার্কিনি আছেন। তাদের উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে।

যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে এসব মার্কিন নাগরিক কোরিয় উপদ্বীপ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে জমায়েত হবে। তারা চাইবে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হোক। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে উত্তর কোরিয়া যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না এমনটা বলা যায় না।

তিনি ওই চিঠিতে বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদস্য প্রায় ২৮ হাজার ৫০০। ওদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যদি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ শুরু হয় তা হবে সর্বাত্মক। ব্যাপক রক্তপাতের।

কারণ, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের দিকে তাক করা আছে উত্তর কোরিয়ার বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র। নিরস্ত্রীকরণ এলাকা থেকে এই সিউল মাত্র কয়েক মাইল দূরে। ওদিকে এমন যুদ্ধ শুরু হলে তা হবে বিপর্যয়কর এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস।

যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স (সিএফআর)-এর মতে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীতে সদস্য রয়েছেন ১১ লাখ। সিএফআর তার সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলেছে, উত্তর কোরিয়া পুরনো অস্ত্রশস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা তা বলে না।

এ থেকে ধরে নেয়া যায় উত্তর কোরিয়ার হাতে রয়েছে ভয়াবহ সব পারমাণবিক অস্ত্র। যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে গিয়ে আঘাত করতে সক্ষম। পুরনো অস্ত্র ও প্রযুক্তি তাক করা আছে সিউলের দিকে।

উল্লেখ্য, লেফটেন্যান্ট জোয়াসের চিঠির খবরটি এমন এক সময়ে বেরিয়ে এলো, যখন উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। ট্রিগারে একটি চাপ লাগতেই শুরু হয়ে যেতে পারে ভয়াবহ যুদ্ধ। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ঠিক এ সময়ে রয়েছেন এশিয়া সফরের মাঝামাঝি সময়ে।

তবে এত দিনে ট্রাম্প উচ্চস্বরে কথা বললেও তার কণ্ঠ অনেকটা নমনীয় হয়ে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি সিউলে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার আলোচনার টেবিলে আসা উচিত। এমন চেতনা জাগা উচিত তাদের মধ্যে। উত্তর কোরিয়ার মানুষ ও বিশ্ববাসীর জন্য উত্তম এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছা।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, এর আগে তিনি কড়া বক্তব্য রেখেছিলেন উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে। বলেছিলেন, তারা যদি প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি হুমকি বন্ধ না করে তাহলে ‘আগুনে জবাব’ দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত ইউএস ফোর্সেস কোরিয়ার ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জোয়াস।
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে