বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭, ০৩:৫২:০৭

যে কারণে জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এখন সেনাবাহিনীর হাতে

যে কারণে জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এখন সেনাবাহিনীর হাতে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জিম্বাবুয়ের রাস্তায় কাতারে কাতারে সেনা। ইতিউতি সাঁজোয়া গাড়ি। আটক খোদ প্রেসিডেন্ট মুগাবে! সেনাবাহিনী দখল করে নিয়েছে সরকারি টিভি চ্যানেলটিও। তবু জিম্বাবুয়ের সেনাবাহিনী একে সেনা বিদ্রোহ বলতে রাজি নয়।  

দেশটির সেনাপ্রধান একটি টিভি চ্যানেলে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছেন। যদিও শেষ পাওয়া অসমর্থিত সূত্রের খবরে জানা গেছে, প্রেসিডেন্টকে আটক করে রাখা হয়েছে। আটক করা হয়েছে তার ঘনিষ্ঠদের। গ্রেফতার হয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু কেন সেনা বিদ্রোহের এই জল্পনা?

বুধবার রাজধানী হারারেতে লাগাতার গুলি-বোমা বর্ষণের শব্দ হয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে একের পর এক ব্যাটল ট্যাঙ্ক। সে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মানগাগওয়াকে পদচ্যুত করেন ৯৩ বছরের মুগাবে।
তারপর থেকেই ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল জিম্বাবুয়ে। গত মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতি চরমে উঠেছে। যদিও সরকারি সূত্রে সেনা অভ্যুত্থানের জল্পনায় জল ঢেলে দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি ও রয়টার্স সূত্রে জানা গেছে, তাতে জিম্বাবুয়েতে বসবাসকারী প্রায় প্রতিটি দেশের নাগরিককেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে।

হারারেতে বসবাসকারী মার্কিন নাগরিকদের প্রতি টুইট করে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, অশান্ত পরিস্থিতিতে বাড়ির ভিতরে থাকুন। দূতাবাসের কর্মীরা সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন।

জিম্বাবুয়ের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল সিবুসিসো ময়ো অবশ্য জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছেন। তাদের নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু প্রেসিডেন্টের আশপাশে থাকা সেসব লোককে টার্গেট করেছি, যারা অপরাধ করছেন। তাহলে কেন রাস্তায় সেনার দাপাদাপি?

এই প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলছেন, দুষ্কৃতকারীদের ধরতেই নাকি সেনা নামানো হয়েছে। দেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্যই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে সেনা। সমস্ত নাগরিককে প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হতে মানা করা হয়েছে। তাহলে কি এটা সেনা অভ্যুত্থান নয়?

বস্তুত, ১৯৮০-তে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে জিম্বাবুয়েকে শাসন করছেন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। সম্প্রতি ৯৩ বছরের এই রাষ্ট্রপ্রধানের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর শোনা যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে তার উত্তরসূরি হওয়া নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন মুগাবের স্ত্রী ও পদচ্যুত ভাইস প্রেসিডেন্ট।

এ প্রসঙ্গে জিম্বাবুয়ের বিরোধী নেতার প্রাক্তন পরামর্শদাতা অ্যালেক্স মাগাইসা দাবি করেছেন, সেনার দাবি মিথ্যা। জিম্বাবুয়েতে বাস্তবেই সেনা বিদ্রোহ করেছে। প্রেসিডেন্টকে গদিচ্যুত করে দেশের দখল নিয়েছে সেনা।  

বিবিসি সূত্রে খবর, মুগাবে-সহ শীর্ষ সরকারি কর্তাদের বাসভবনের কাছেই সবচেয়ে বেশি গোলাগুলি চলছে। গত সপ্তাহেই মুগাবে সরিয়ে দেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মানগাগওয়াকে। যিনি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন, এমনটাই মনে করছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু মুগাবে তার স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে তুলে ধরার পক্ষে মত দেন। এই নিয়েই তীব্র অশান্তি তৈরি হয় ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ দলের অন্দরে।  

মুগাবে সম্ভবত সেনা বিদ্রোহের আঁচও পেয়েছিলেন। পদচ্যুত ভাইস প্রেসিডেন্ট তাকে হত্যার ছক কষছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সেই আশঙ্কাই কি এবার সত্যি হল?-সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/ আ শি/ এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে