প্যারিস রক্তপাতের নেপথ্যে : আফরা
আফরা দাগের : ১৩ নভেম্বর শনিবার রাতে প্যারিসের বিভিন্ন স্থানে পৃথক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ রাতে প্যারিসের মানুষ যার ভুক্তভোগী হয়েছে, সিরিয়ার মানুষ গত পাঁচ বছর ধরে তা স্থায়ীভাবে ভোগ করে যাচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের সহযোগীদের অর্থায়নে ও সমর্থন পেয়ে পেয়ে অপরাধী চক্র ভয়ঙ্কর দুস্কৃতি করে যাচ্ছে।
এই মুহূর্তেও যুক্তরাষ্ট্র ও সাঙ্গপাঙ্গরা অপরাধীদের “মডারেট বিদ্রোহী” বলতে জিদ করছে এবং সিরীয় জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে “সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশন” নামে তাদেরকে প্রতিনিধিত্ব করতে দেওয়া হয়েছে।
এই চরমপন্থীদের এবং তাদের অপরাধকে মডারেট বিদ্রোহী ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে তখন প্যারিসে পরিচালিত একই রকমের অপরাধকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যখন প্রেসিডেন্ট ওবামা এমন কথা বলেন, তখন এটি তার দুমখো নীতি উদাহরণ হয়েই থাকে, যা শুনে আমরা আরব বিশ্বের মানুষেরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
যাই হোক এটা ধরে নিতে পারি যে প্যারিসে যা হয়েছে তা কোনো বিদেশী গোয়েন্দা সামর্থের সহযোগিতা ছাড়া ঘটতে পারে না। ঠিক যেমন সিআইএ পরিচালক ব্রেনান প্যারিসে হামলার আগে ফ্রান্সের গোয়েন্দা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন।
প্যারিসে হামলা হল ভিয়েনায় সিরিয়া সঙ্কট নিয়ে আলোচনা শুরুর আগের দিন। এখন ফ্রান্সের জন্য সুবিধা হল যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাঙ্গাত হিসেবে দায়েশ বিরোধী সহযোগিতা তুঙ্গে পারবে, যদিও দায়েশকেই “মধ্যপন্থী বিদ্রোহী” আখ্যার নামে সহযোগিতা ও পয়সা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।
আমরা যারা সিরিয়ার বাসিন্দা তারা যে, এখানে “মধ্যপন্থী” বিদ্রোহের নামে তৈরি করা গপ্পোর কোনো সত্যতা নাই। তবে এখানে গণহত্যাকারীদের ‘গ্যাং’ রয়েছে যারা ২০১১ সাল থেকে আমাদের জনগণের রক্তপাত ঘটিয়ে চলেছে। আর এই গ্যাংগুলো তৈরি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ইসরাইল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে।
রাশিয়া সিরিয়ায় এই চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়ছে। যা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও তাদের দোসরদের জন্য অসুবিধার কারণ বটে। তবে মুসিবতে পড়াদের মধ্যে আমি এক নম্বরে রাখব বিশ্ব সন্ত্রাসবদের সদর দপ্তর ইসরাইলকে।
সিরিয়া প্রধান শত্রু হল সৌদি ও ইসরায়েল হয়। আর রাশিয়া সিরিয়াকে সমর্থন করার পর থেকেই শরণার্থী সঙ্কটকে দেখিয়ে ইউরোপীয় সৈনিকদের সিরিয়ায় পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ার পরে প্যারিসে গণহত্যা চালানোর মতো হামলার প্রয়োজনীয়তা প্রকট হয়ে গিয়েছিল।
দুদিন আগে সিরিয়ার লাতাকিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মিসাইল হামলা চালিয়েছ “মধ্যপন্থী বিদ্রোহীরা”, আর এ হামলার ঘটনায় আক্রান্ত নির্দোষ মানুষদের জন্য সেই সকল দেশ সমবেদনা জানিয়ে একটি শব্দও খরচ করেনি যারা এই চরমপন্থীদের সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে।
লেবাননেও জোড়া বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই প্রতিশোধমূলক হামলার কারণ হল রাশিয়ার বিমান হামলার সহযোগিতায় সিরিয়ার সব ধরণের সন্ত্রাসীদের হটিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিল সিরীয় আরব সৈন্যরা ও হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা।
প্যারিসসহ বিশ্বের সকল নিরপরাধ মানুষের জন্য আমরা অন্তর্জ্বালা অনুভব করি। আমরা আশাবাদী প্যারিসের হামলার ঘটনায় ভুলভাবে জনমত বদলে যাবে না, যাকে ব্যবহার করে ফ্রান্স পশ্চিমা বিশ্বের মদদপুষ্ট ইরাক-সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের আরো সমর্থন যোগাবে। বা সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনকে সমর্থন করবে ফ্রান্স। সিরিয়া সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার সৈনিক হারিয়েছে।
২০১১ সালে চরমপন্থীদেরকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে সিরিয়াকে লড়াই করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অথচ সিরিয়ায় যা চলছে তার তুলনায় অনেক ছোট ঘটনা সত্ত্বেও আপনারা দেখবেন সর্বত্র ফরাশী সৈনিক ও নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, জরুরি অবস্থা জারি করে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অথচ সিরিয়া অনুরোধের কারণে জরুরি অবস্থা তুলে নিয়েছিল এবং তুরস্ক ও জর্দানে সন্ত্রাসবাদীদের শিবির খোলা হয়েছিল যারা আমাদের সীমান্ত সন্ত্রাসীদের প্রধান ঘাঁটিতে পরিণত করেছিল।
আফরা দাগের, সিরীয় নারী সাংবাদিক
১৫ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ