মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৮:৫৬:৪২

পকেটে চিরকুট রাখছেন তারা, লেখা ‘যদি মারা যাই, তাহলে...

পকেটে চিরকুট রাখছেন তারা, লেখা ‘যদি মারা যাই, তাহলে...

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মুজিবুল্লাহ দাস্তায়ার মানিব্যাগ থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে দেখালেন। এতে লেখা আছে তার রক্তের গ্রুপ, ঠিকানা আর জরুরি মোবাইল নাম্বার। তার ভাষায়, ‘সন্ত্রাসী হামলায় যদি আমি আহত হই বা মারা যাই, চিকিৎসকরা কমপক্ষে আমার সম্পর্কে তথ্যগুলো জানতে পারবেন।’

আফগান রাজধানীতে গত শনিবার তালেবান হামলার পর সকল কাবুলবাসীর মতোই ২৮ বছর বয়সী এই যুবকও হতাশ। ওই হামলায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন ২৩৫ জন। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘এই হামলার পর নিখোঁজ অনেকের স্বজনেরা তাদের খুঁজে ফিরছেন। আমার একটা বন্ধুও নিখোঁজ ছিল। তাকে খুঁজে পেতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সম্পর্কে তথ্য দিয়ে পোস্ট করতে হয়েছে।’

শহরে বিদ্যমান অনিরাপদ পরিস্থিতিতে এই সরকারি কর্মচারী সবসময় তার বাবা-মা’র সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তাদের জানিয়ে রাখেন, কখন কোথায় আছেন। মুজিবুল্লাহ বলেন, ‘তারা আমাকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তা করেন।’ শনিবারের হামলা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এটা ছিল দুর্বিষহ এক দিন। কিন্তু জন্ম থেকেই এই যুদ্ধ দেখে আসছি। তাই আমার এখন মনে হয় আমি যেকোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত।’

শনিবারের অ্যাম্বুলেন্স হামলা নতুন করে ত্রাস সৃষ্টি করেছে আফগানিস্তানে। অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ শুনলেই এখন বিস্ফোরণের আতঙ্ক গ্রাস করে ২০ বছরের ফজিলা সাহেদিকে। তিনি কাবুলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করছেন। মুজিবুল্লাহর মতো সাহেদিও তার জরুরি তথ্যসংবলিত একটি চিরকুট সবসময় সঙ্গে রাখেন।

সাহেদি বলেন, আমি আমার ব্যাগে একটি এবং জ্যাকেটের পকেটে আরেকটি কাগজে সকল তথ্য লিখে রাখি। দুটো আলাদা জায়গায় রাখি এটা ভেবে যে, একটি নষ্ট হয়ে গেলেও অন্যটি তো থাকবে। যখন আমি বাড়ি থেকে বের হই তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করি আমি কি আজ জীবিত ফিরে আসবো? আমি অনেক ছোট। আমি মরতে চাই না। আজ কোনো আত্মঘাতী হামলায় আমি মারা গেলে, আমার পরিবার ও আমার বন্ধুরা এই নোটের মাধ্যমে অন্তত আমার মৃত্যুর খবর জানতে পারবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পঁচিশ বছর বয়সী কাবুলের এক অধিবাসী আল-জাজিরাকে জানান, তিনি সঙ্গে একটি কলমও রাখেন। যখনই অসহায় বোধ করেন, তিনি সে সম্পর্কে ডায়েরিতে কয়েকটা লাইন লিখেন। তিনি বলেন, কাবুলের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে আমি জানি না যে, আমি আর কতক্ষণ বাঁচবো। বাবা-মাকে তিনি আগে থেকেই বলে রেখেছেন, হামলায় মারা গেলে তার মরদেহ যেন কাবুল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করা হয়।

আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই সংকটজনক। একের পর এক জঙ্গি হামলায় দেশটি এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা নেই নাগরিকদের। গত শনিবার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে কাবুলে আত্মঘাতী হামলার পর ফের গোটা বিশ্বে শিরোনাম হয়েছে  আফগানিস্তান। কিছুদিন আগেই ২১শে জানুয়ারি পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও তালেবানরা হামলা চালায়। ওই হামলায় ২০ জন নিহত হয়। ২৪শে জানুয়ারি সেভ দ্যা চিলড্রেন-এর অফিসে আইএস হামলায় কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়।

স্থানীয় মিডিয়ার বরাত দিয়ে আল-জাজিরা বলছে, ২০১৮ সালের এই জানুয়ারি মাসেই আফগানিস্তানে ১০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন।
“যেখানে ইন্টারকন্টিনেটাল হোটেল এবং রাজনৈতিক এলাকাও হামলার শিকার হয়, সেখানে নিজেদের নিরাপদ মনে করার প্রশ্নই আসে না। সে হোক না আমরা যখন বাড়িতে থাকি। এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। যার ফলে তালেবান এবং আইএসের জন্য হামলাগুলো চালানো খুবই সহজ। এমনটাই উদ্বেগ প্রকাশ করেন দাস্তায়ার।

[আল-জাজিরায় প্রকাশিত ‘ইন কেস আই ডাই: হোয়াই আফগানস কিপ নোটস ইন দেয়ার পকেটস’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে অনূদিত। অনুবাদ করেছেন প্রিয়াংকা চক্রবর্তী।]

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে