বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:০৬:১০

টিপু সুলতানকে কেন্দ্র করে ভারতে তুমুল বিতর্ক

টিপু সুলতানকে কেন্দ্র করে ভারতে তুমুল বিতর্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে মহীশূরে যিনি রাজত্ব করেছেন, সেই টিপু সুলতানের জন্মদিন উদযাপন নিয়ে ভারতে তুমুল বিতর্ক ও হিংসা শুরু হয়েছে। আগামী শুক্রবার তামিলনাডুতে টিপুনের জন্মদিন পালন করা যাবে কি না, হাইকোর্টে তার নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। এর আগে গত সপ্তাহেই কর্নাটকে টিপু জয়ন্তী উদযাপন নিয়েও কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে তীব্র বাগবিতন্ডা হয়েছে, যা এক সময় মারামারিতে পরিনত হয় এবং এ লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন নিহতও হয়েছেন। কিন্তু টিপু সুলতানের মতো একজন ঐতিহাসিক চরিত্রকে নিয়ে কেন ভারতে নতুন করে এই বিতর্ক? তার পক্ষের ও বিপক্ষের শিবির টিপু-কে নিয়ে কী যুক্তি দিচ্ছেন? মহীশূরের প্রবল পরাক্রমশালী ‘টাইগার’ বলে পরিচিত টিপু সুলতানের আসল জন্মদিনের দিনদশেক আগেই যখন গত সপ্তাহে কর্নাটক সরকার তার জন্মজয়ন্তী উদযাপনের উদ্যোগ নেয়, তখন বেলগাম-বিজাপুর সহ বহু মুসলিমপ্রধান এলাকাতেই বিরাট হই হই করে শোভাযাত্রা বেরিয়েছে। বহু মানুষ সেখানে টিপুর নামে জয়ধ্বনি দিয়েছেন। কিন্তু এই টিপু উৎসব থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল বিজেপি ও অন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন – তাদের মতে টিপু তার রাজত্বকালে বহু হিন্দু ও খ্রিষ্টানদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিলেন। বিজেপি এই উৎসব সমর্থন না করা জন্মজয়ন্তী পালনকে কেন্দ্র করে দই পক্ষের মধ্যে বিক্ষোভ হয়। টিপুর পক্ষে কথা বলে হুঁশিয়ারিও শুনতে হয়েছিল বিশিষ্ট কর্নাটকি অভিনেতা ও নাট্যকার গিরিশ কারনাডকেও। রাজ্যের কংগ্রেস সরকার অবশ্য আগাগোড়াই বলে আসছিল, টিপু সুলতানের জন্মজয়ন্তী পালনে অন্যায় কিছু নেই। কর্নাটকের মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা দীনেশ গুন্ডুরাওয়ের কথায়, ‘রাজ্যের মহান সন্তান টিপু সুলতানের জন্য আমরা সবাই গর্বিত।’ এছাড়া, তিনি বলেছেন ‘তিনি সুশাসক ছিলেন, সাম্প্রদায়িক ছিলেন না মোটেই – আর এই বীর যোদ্ধা ইংরেজের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াইয়েও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কর্নাটকে রেশমচাষ থেকে অনেক সংস্কার শুরু হয়েছিল তার হাতেই। আর যে সব হত্যাকান্ডের কথা বলছেন সেরকম বিতর্ক তো গুজরাটে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও আছে। টিপু সুলতান যে বিতর্কিত, ঐতিহাসিকরাও অবশ্য তা অস্বীকার করেন না। দাক্ষিণাত্যের ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক শৌভিক মুখোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন এই বিতর্কের বীজ নিহিত আছে টিপু-কে নিয়ে সে আমলের লেখালেখির ভেতরে। তিনি জানাচ্ছেন, ‘টিপু-কে নিয়ে যাবতীয় গবেষণার মূল উৎস হল সে আমলে ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তাদের রিপোর্ট। এখন শত্রুর সম্বন্ধে তারা যে খুব একটা ভাল কথা বলবেন না তা তো বলাই বাহুল্য!’ অধ্যাপক মুখোপাধ্যায় আরও বলছেন, ‘টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে যেমন হিন্দু-নিধন বা মন্দির ধ্বংস করার অভিযোগ আছে তেমনি মারাঠাদের হাতে প্রায় ধ্বংস হতে যাওয়া শঙ্করাচার্যর প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্গেরী মঠকে তিনিই কিন্তু আবার পুনর্জন্ম দিয়েছিলেন।’ কিন্তু বিজেপি মনে করছে টিপুর হাতে যত হিন্দু বা কুর্গ এলাকায় যত খ্রিষ্টান মারা গেছেন তারপর তাকে মহান শাসক হিসেবে তুলে ধরাটাই চরম অন্যায়। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী প্রশ্ন তুলছেন, ‘আজ মৃত্যুর ২১৬ বছর পর কেন আচমকা কংগ্রেসের টিপুকে মনে পড়ল?’ এছাড়া, তিনি জানান ‘হিন্দুদের খতম করায় তিনি নিজের সেনাপতিকে প্রশংসা করে চিঠি লিখেছিলেন। আর ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াইতেও তিনি তো আর এক ঔপনিবেশিক শক্তি ফরাসিদের হয়ে দালালি করেছেন। আজ পাকিস্তান তাদের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের নাম রেখেছে টিপু-র নামে, সেই সুলতানকে কীভাবে আমরা সম্মান জানাতে পারি?’। অধ্যাপক শৌভিক মুখোপাধ্যায় বলছেন ধর্মকে রাজনীতিতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা সে আমলেও ছিল – কিন্তু তাতে ইংরেজের বিরুদ্ধে টিপুর সাহসী লড়াইটা মিথ্যে হয়ে যায় না। অথচ মারাঠারা বা হায়দ্রাবাদের নিজাম কেউই কিন্তু ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েননি। তিনি বলছেন দক্ষিণ ভারত জুড়ে টিপু সুলতানকে নিয়ে চলতি বিতর্কে তার কোনও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন একেবারেই হচ্ছে না – ‘‘মাইসোরের টাইগার’’ এখন পরিণত হয়েছেন বিভাজনের রাজনীতির কেন্দ্রীয় চরিত্রে। -বিবিসি ১৯, নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে