রবিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ০৫:৫০:৫৬

সেনাবাহিনী বন্ধ করে দিয়েছে মালদ্বীপের পার্লামেন্ট

   সেনাবাহিনী বন্ধ করে দিয়েছে মালদ্বীপের পার্লামেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মালদ্বীপের নিরাপত্তা বাহিনী দেশটির পার্লামেন্ট কমপ্লেক্স বন্ধ করে দিয়েছে, বিরোধী এমপিদের গ্রেফতার করেছে। প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন কারারুদ্ধ রাজনীতিবিদদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করার পর সৃষ্ট সঙ্কটের মধ্যে সেনাবাহিনী এ অবস্থান গ্রহণ করল।

রোববার বিরোধী দলের সদস্যরা দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের বরখাস্ত চেয়ে পার্লামেন্টে একটি আবেদন করার পর সেনাবাহিনীরা পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে ফেলে। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আটক রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল ওই আদেশ পালন করতে সম্মত হননি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদকেও মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি এখন চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। দুর্নীতির অভিযোগে তার সাজা হয়েছিল। পরে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়ে আর দেশে ফেরেননি।

দেশটির সর্বোচ্চ আদালত ১২ এমপিকে পুনর্বহাল করার নির্দেশও দিয়েছে। এর ফলে ৮৫ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টে বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়।

সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আনিলের আদেশ অনুসরণ করবেন, দেশকে নৈরাজ্যের দিকে যেতে দেবেন না।

এদিকে পুলিশ বিরোধী দলের দুই পার্লামেন্ট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তারা মালে বিমানবন্দরে অবতরণ করেছিল বলে এক মুখপাত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট বরখাস্ত করা যে ১২ এমপিকে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে, এ দুজন তাদের মধ্যে রয়েছেন।
এদিকে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব সুপ্রিম কোর্টের আদেশ পালন করার জন্য মালদ্বীপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছন।

রাজবন্দীদের মুক্তির বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে গত শুক্রবার বিক্ষোভ হয়েছে মালদ্বীপে। কয়েক শ’ সমর্থক রাজধানী মালের সড়কে বিক্ষোভ করে। তারা কারাবন্দী নেতাদের দ্রুত মুক্তি দেয়ার দাবি জানায়। বিক্ষোভকারীরা বিরোধী দলের একটি অফিসের সামনে ব্যানারে লেখা ছিল ‘সংবিধানকে শ্রদ্ধা করো’, ‘সুপ্রিম কোর্টের আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করো’।

গত সপ্তাহে দেশটির নির্বাসিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদসহ ৯ শীর্ষ রাজনীতিকে সাজা দেয়ার ঘটনাকে অন্যায্য ঘোষণা করে তাদের মুক্তি দিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। এ ছাড়া গত বছর বিরোধী দলকে সমর্থন দেয়ার জন্য যে ১২ জন এমপির পদ বাতিল করা হয়েছে তাদেরকেও পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক দফতর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ভারতসহ অনেক দেশ এই নির্দেশের প্রশংসা করেছে।

অনেক দিন ধরেই প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের সরকারের পক্ষে অবস্থান থাকলেও এই নির্দেশনার মাধ্যমে পুরোপুরি ঘুরে গেল সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান। আর আন্তর্জাতিক মহলের অব্যাহত সমর্থনের কারণে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করলেও বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে হবে সরকারকে। গত শুক্রবার প্রতিবেশী দেশ ভারত একটি বিরল বিবৃতিতে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে ইয়ামিনের সরকারের প্রতি। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মালদ্বীপ সরকারের সব বিভাগকে সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা মেনে চলা উচিত’।

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক দফতরের মুখপাত্র রুপার্ট কলভিলও এই রায়কে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন মালদ্বীপের সরকারের প্রতি। সেই সাথে গত বৃহস্পতিবার এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বিরোধী সমর্থকদের মিছিলে পুলিশি হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তার দফতর মালদ্বীপের পরিস্থিতির ওপর পূর্ণ নজর রাখছে, বিশেষ করে সরকার, সামরিক বাহিনী ও পুলিশের প্রতিক্রিয়ার ওপর। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার পরই দেশটির পুলিশ প্রধানকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন। পুলিশ বাহিনী আদালতের নির্দেশনা মেনে চলবে এমন ঘোষণা দেয়ার পর তাকে বরখাস্ত করা হয়।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে