সোমবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ১০:৫৭:৫২

আগ্রার তাজমহলে এবার থেকে চলবে শ্রীরাম চন্দ্রের জীবনগাথা নিয়ে 'রামলীলা'!

আগ্রার তাজমহলে এবার থেকে চলবে শ্রীরাম চন্দ্রের জীবনগাথা নিয়ে 'রামলীলা'!

শুভজ্যোতি ঘোষ, দিল্লি থেকে : ভারতে মুঘল আমলে নির্মিত আইকনিক স্থাপত্য তাজমহলের প্রাঙ্গণে সে রাজ্যের সরকারের পর্যটন বিভাগ 'রামলীলা' অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছে।

তাজমহলকে ঘিরে প্রতি বছর যে 'তাজ মহোৎসব' আয়োজন করা হয়ে থাকে, উত্তরপ্রদেশ সরকারের পর্যটন বিভাগ স্থির করেছে এবারে তার উদ্বোধন হবে হিন্দুদের ভগবান শ্রীরাম চন্দ্রের জীবনগাথা-নির্ভর নৃত্যগীতের মধ্যে দিয়ে। ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিরোধী দলগুলো এর সমালোচনায় সরব হয়েছে।

অনেক ঐতিহাসিকও বলছেন এটা তাজমহলের ঐতিহ্যকে জোর করে অস্বীকার করার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। প্রতি বছর শীতের শেষ দিকে আগ্রা মেতে ওঠে তাজ মহোৎসবকে ঘিরে- যেটা মূলত ভারতের সবচেয়ে বড় পর্যটক আকর্ষণকে কেন্দ্র করে এক সাংস্কৃতিক উৎসব, আর পাশাপাশি মুঘল সংস্কৃতির উদযাপনও বটে।

তবে, সেই রেওয়াজ ভেঙে উত্তরপ্রদেশ সরকার এবার রামলীলা আর রাম-বন্দনাকেই তাজ মহোৎসবের মূল থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে। আর বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আর রাজ্যপাল তথা সাবেক বিজেপি নেতা রাম নায়েক দুজনেই থাকছেন সেই মহোৎসবের উদ্বোধনে।

বিজেপি এমপি সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর বক্তব্য, "রামলীলার মাধ্যমে তাজমহলকে মোটেই অবমাননা করা হচ্ছে না। তাজমহলের বিশাল প্রাঙ্গণে উৎসব আয়োজন সহজ বলেই ওই জায়গাটাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আর আমরা বিশ্বাস করি ভারতে হিন্দু ও মুসলিমদের ডিএনএ একই, আমরা একই পরিবারের - কাজেই এখানে মেরুকরণের প্রশ্নও আসে না।"

তবে ঐতিহাসিক পুষ্পেশ পন্থ আবার বলছেন, তাজমহল ভারতীয় সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ - আর এক-আধটা রামলীলা সেই ছবিটা মোটেও পাল্টাতে পারবে না। প্রফেসর পন্থের কথায়, "শুধু স্কুলের পাঠ্যপুস্তকেই নয় - ভারতে যে বাচ্চাটি কখনও স্কুলে যায়নি সেও জানে তাজমহলের ঐতিহ্যটা কী। ফলে প্রতিবার যখন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হয়, আমার মনে হয় না তাতে প্রতিক্রিয়া দেখানোর দরকার আছে বলে। আমি বিশ্বাস করি না রাজনীতিকরা এভাবে ইতিহাসের ন্যারেটিভ বদলাতে পারবেন।"

তবে ঘটনা এটাই, তাজমহল আসলে একটি হিন্দুদের শিব মন্দির, যার আসল নাম ছিল 'তেজো মহল' - এই ধরনের প্রচারনা গত কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে। কিন্তু বিজেপির ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত কয়েক মাস ধরে এধরণের প্রচারণা আবার জোরেশারে শুরু হয়েছে।

আর এই প্রচারের এক প্রধান কান্ডারী বিজেপির এমপি বিনয় কাটিয়ার, যিনি তাজ মহোৎসব আয়োজকদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার কথায়, "তাজ মহোৎসবকে তেজ মহোৎসবও বলা যায়, একই কথা। আমাদের তেজো মহলকে মুসলিম শাসকরা দখল করে সমাধি বানিয়েছেন, এতে তো কোনও ভুল নেই। এখন একে কীভাবে আবার তেজো মন্দিরে রূপান্তরিত করা হবে, সেটাই আপনারা দেখতে থাকুন।"

আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারি তাজ মহোৎসবের উদ্বোধনী উৎসবে রামবন্দনা বাজবে, আয়োজকদের পরিকল্পনা সেটাই। রাজ্যের বিরোধী সমাজবাদী পার্টি অবশ্য এর জন্য এক হাত নিচ্ছেন বিনয় কাটিয়ারের মতো নেতাদের। ঐ দলের মুখপাত্র ঘনশ্যাম তিওয়ারি বলছেন, "এই নেতারা বোধহয় হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি থেকে অপপ্রচার চালানোয় ডক্টরেট করেছেন। অন্য কোনও কাজ নেই, তাই এসব আবোলতাবোল বলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন।"

তিওয়ারি আরো বলেন, "আমরা পরিষ্কার বলতে চাই তাজমহল একটি বিশ্বস্বীকৃত মনুমেন্ট, ফলে তাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতেও সরকার যেন তা খেয়াল রাখে।" তবে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ সরকার এর আগেও যেভাবে রাজ্যের প্রধান দ্রষ্টব্যের তালিকা থেকে তাজকে বাদ দিতে চেয়েছে এবং এখন তাজমহল চত্বরে রামলীলার আসর বসাতে চলেছে - তাতে তাদের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। বিবিসি

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে