 
                                        
                                        
                                       
                                        
                                             
                                                                                    
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সাফল্য কখনও নিজে থেকে ধরা দেয় না। এর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। খুব মেধাবী হলেই যে জীবনে সফলতা আসবে, এমনটি নয়। কিন্তু যদি কোনকিছু মন থেকে চাওয়া হয়, আর তার জন্য যা যা করা দরকার সব করতে পারার মত দৃঢ় মানসিকতা থাকে, তাহলে খুব সহজেই সকল বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
ঠিক এমনই একটি গল্প সোফিয়া আমোরুসোর। মাত্র নয় বছর বয়স থেকেই নানা ধরণের পেশার সাথে জড়িয়েছে তার নাম। আজ তিনি আমেরিকার সবচেয়ে ধনী নারীদের একজন। শেকড় থেকে শিখরে আরোহণের তার এই যাত্রাটি একেবারেই ব্যতিক্রমী। আর তার কোম্পানি ‘ন্যাস্টি গাল’ এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর একটি।
সোফিয়ার জন্ম ১৯৮৪ সালে, ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগোতে। মাত্রাতিরিক্ত বিষণ্ণতা ও ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার-অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার’নামক এক বিশেষ ধরণের মেডিকেল কন্ডিশনের কারণে খুব বেশিদূর পড়াশোনা করা হয়নি তার। খুব অল্প বয়সেই স্কুল থেকে নাম কাটা যায় তার। এবং ঠিক একই সময়ে তার বাবা-মা দুজনেই চাকরি খোয়ানোয় প্রচন্ড দারিদ্র্য নেমে আসে তাদের সংসারে। ঠিকমত জুতোর ফিতে বাঁধতে শেখার আগেই তাই সোফিয়াকে নেমে পড়তে হয় নিজের খাবার নিজে জোটানোর সংগ্রামে। মাত্র নয় বছর বয়সে সে একটি লেমোনেড শপ চালাতে শুরু করে। আর তার বয়স যখন ২২ স্পর্শ করে, ততদিনে দশটি ভিন্ন ভিন্ন কাজ করা হয়ে গেছে তার।
প্রথম যৌবনে সোফিয়া খুবই ভবঘুরে জীবনযাপন করত। হিচহাইকিং, ডাম্পস্টার ডাইভিং ইত্যাদি তো ছিলই, পাশাপাশি তার আরেকটা বদভ্যাস ছিল – চুরি করা। এবং ২০০৩ সালে একবার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে সে, এবং বড় অংকের জরিমানা গুনতে হয় তাকে। এরপর সে সিদ্ধান্ত নেয় এমন জীবনধারা পাল্টে ফেলে সবকিছু নতুন করে শুরু করার। সে স্যান ফ্রান্সিসকোতে চলে আসে, আর সেখানে একটি কম্যুনিটি কলেজে ভর্তির চেষ্টা করে।
এই সময়েই সে আরেকটি কাজ করে। ইবে-তে নিজের একটি অনলাইন স্টোরের রেজিস্ট্রেশন করে, যার নাম সে দেয় ‘ন্যাস্টি গাল ভিন্টেজ’। সে বিভিন্ন চ্যারিটি শপ থেকে কম দামে জামাকাপড় কিনে সেগুলো অনলাইনে চড়া দামে বিক্রি করতে শুরু করে। যেমন একবার একটি চ্যানেল জ্যাকেট মাত্র ৮ ডলারে কিনে সেটিকে সে অনলাইনে বিক্রি করেছিল ১০০০ ডলারে। এই অভাবনীয় সাফল্যের রহস্য ছিল সোফিয়ার ফটোগ্রাফিতে দারুণ হাত, যার ফলে সে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর আকর্ষণীয় ছবি তুলতে পারত। তারপর সেগুলোর নিচে চটকদার নানা ক্যাপশনও দিত, যা দেখে ক্রেতারা আক্ষরিক অর্থেই যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ত সেগুলো কেনার জন্য।
খুব দ্রুতই কম বয়েসী নারীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে ‘ন্যাস্টি গাল’-এর নাম, এবং সুযোগ বুঝে সোফিয়াও তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করে। ইবে-র পাশাপাশি মাই স্পেস ও ফেসবুকের মত অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও সে ছড়িয়ে দেয় তার পণ্যের প্রচার।
তবে ২০০৮ সালে সে একটা বড় ধাক্কা খায়। ইবে-তে নিজের ওয়েবসাইটের প্রমোশনের অভিযোগে তার একাউন্টটি সাসপেন্ড হয়ে যায়। সামান্য একটি ভুলে তার পাঁচ বছরের কঠোর পরিশ্রম তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।
তবে এত সহজেই মনোবল হারায় না সোফিয়া। সে চিন্তা করে, অনলাইনে তো অনেকদিনই হলো। এবার অফলাইনেও শুরু করা যাক ব্যবসা। তাই সে কয়েকজন কর্মী জোগাড় করে লস অ্যাঞ্জেলেসে নিজের রিটেইল শপ খুলে ফেলে। যেহেতু আগে থেকেই তার নামটি অনেকের কাছেই পরিচিত, তাই বিনিয়োগকারী খুঁজে পেতে খুব একটা অসুবিধা হয় না তার। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ‘ন্যাস্টি গাল’ এর নামে ৪৯ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড জোগাড় হয়ে যায়। অন্যদিকে ২৮০ মিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক হিসেবে ২০১২ সালে সোফিয়ার নাম ওঠে ফোর্বস ম্যাগাজিনের ‘দ্য লিস্ট অফ আমেরিকাস রিচেস্ট সেলফ-মেড উইমেন’-এ।
নিজের ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি সোফিয়া নারী উদ্যোক্তাদেরও অনুপ্রেরণা জোগানোর কাজ করে চলেছে। তাকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে আধুনিক নারীবাদিতার একজন অগ্রদূত হিসেবে। এমনকি তার জীবনকাহিনী নিয়ে ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল থেকে নেটফ্লিক্সে বিশেষ একটি সিরিজও প্রচারিত হয়েছে ‘গার্লবস’ নামে।
সবমিলিয়ে সোফিয়ার জীবনের কাহিনী আসলেই রূপালি পর্দায় ঠাঁই পাবার মতই উল্লেখযোগ্য। তার কাছ থেকে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবারই অনেককিছু শেখার আছে। বিশেষ করে যারা তাদের জীবনের ব্যর্থতার জন্য দুঃখজনক শৈশব ও তারুণ্যকে দোষারোপ করে থাকে, তাদের জন্য সোফিয়া একজন দৃষ্টান্তস্বরূপ।
এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর