বুধবার, ২৮ মার্চ, ২০১৮, ০৭:২৭:০৫

একজন তার হাত ধরে টানে, খানিক ফাঁকা জায়গায় টেনে নিয়ে...

একজন তার হাত ধরে টানে, খানিক ফাঁকা জায়গায় টেনে নিয়ে...

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: 'বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এইবার তোমার আমি বধিব পরাণ!' এ বচনটিই সত্যিই হলো আরো একবার। ঘটনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সাঁইথিয়ার। প্রতিদিনের মতোই মেয়েদের দেখে টিজ করে যাচ্ছিল ইভটিজাররা। পারও পেয়ে যাচ্ছিল। কারণ কেউ প্রতিবাদ করছিল না। কিন্তু চিত্র পাল্টে গেলো যখন পূজা সিংহরায় নামে এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে দেখে টিজ করলো ওই বখাটেরা। সাথে সাথে মার্শাল আর্টের ব্লু-বেল্ট প্রশিক্ষণ নেয়া ওই তরুণী তিনজনকে শায়েস্তা করে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলেন।

এই ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানিযেছে, মঙ্গলবারের পরীক্ষার জন্য পূজা সিংহরায় নামে ওই ছাত্রী হাতঘড়ির ব্যাটারি কিনতে সোমবার সন্ধ্যায় সাইকেল নিয়ে বের হয়। সাথে ছিল প্রতিবেশী একটি মেয়েও। কিছু দূরে যাওয়ার পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা তিন বখাটে তার উদ্দেশে কটূক্তি করে। পূজা সাইকেল থেকে নেমে প্রতিবাদ করতেই তাদের মধ্যে একজন তার হাত ধরে টানে। খানিক ফাঁকা জায়গায় টেনে নিয়ে যেতেই পূজা তাকে উচিত শিক্ষা দেন। মার্শাল আর্টে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জয়ী ছাত্রীটি ওই তিন বখাটেকে ক্যারাটে দিয়ে শায়েস্তা করেন।

খবর পেয়ে পূজার মা ও স্থানীয় লোকজন আসেন। পূজা মা সুখেলাদেবী মেয়েকে সাহায্য করতে অন্যদের বারণ করেন। বখাটে তিনটিকে আবার মারতে শুরু করে পূজা। অবশেষে পুলিশ এসে তিনজনকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ প্রশংসা করে সাহসী পূজার।

জানা যায়, ছোট থেকেই প্রতিবাদী পূজা। খেলাধুলা ও ক্যারাটে শেখার ইচ্ছা ছিল। ইচ্ছেপূরণ হয়েছিল স্কুলে। সে শশীভূষণ বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় স্কুল থেকে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তিন মাসের প্রশিক্ষণে মন ভরেনি তার। স্কুলের অস্থায়ী মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করে বোলপুরে বেসরকারি প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেয়। প্রায় ছয় বছর সেখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। একাধিক রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য পেয়েছে।

তার প্রশিক্ষক লক্ষ্মীনারায়ণ ভগৎ বলেন, ছোট থেকেই ও প্রতিবাদী। এর আগেও ওকে প্রতিবাদ করতে দেখেছি।

পূজার বাবা নির্মলবাবু বলেন, মেয়ের জন্য গর্ব হচ্ছে। মেয়েরা যে অসহায় নয়, আমার মেয়ে তা প্রমাণ করল।

মা সুলেখাদেবী বলেন, আমি দেখলাম আমার মেয়েই ছেলেগুলোকে মেরে কাবু করে দিয়েছে। তাই অন্য কাউকে মারতে মানা করি। মেয়েদের এইভাবেই এগিয়ে আসতে হবে।

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে এসে পূজা বলে, বিভিন্ন জায়গায় নারী নির্যাতনের ঘটনা দেখে কষ্ট হয়। মেয়েদের শক্ত হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। আমি তাই করেছি মাত্র। মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য আরো বেশি করে প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। যাতে মেয়েদের কেউ কটূক্তি করার সাহস না পায়।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে