শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১৮, ০৭:০১:১৬

যৌতুকের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর পেটে লাথি স্বামীর, নষ্ট গর্ভস্থ শিশু

যৌতুকের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর পেটে লাথি স্বামীর, নষ্ট গর্ভস্থ শিশু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনা কোন অমানবিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, এ বার তার নতুন নজির মিললো কলকাতার পাশেই হাওড়ার বালিতে। ৫ লক্ষ টাকা পণ বাপের বাড়ি থেকে দিতে না পারায় ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা বধূর পেটে লাথি মেরে গর্ভস্থ শিশুকে নষ্ট করার অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে।

আরও অভিযোগ, এমন ঘটনা প্রথম নয়। বছর দুয়েক আগে বিয়ে হওয়া ওই গৃহবধূ প্রথম বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরেও এমন ঘটেছিল। তার স্বামী একই ভাবে পেটে আঘাত করায় সে বারও গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয় যায় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে।

পুলিশ জানায়, হাওড়া টিকিয়াপাড়ার কাছে আশু বোস লেনের বাসিন্দা বছর তেইশের প্রিয়াঙ্কা সাউয়ের সঙ্গে বালির বীরেশ্বর চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দা রাজেশ সাউয়ের বিয়ে হয় ২০১৬ সালে। প্রিয়াঙ্কার বাড়ির লোকের দাবি, বিয়েতে ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দেওয়া হয়। উপহার দেওয়া হয় কয়েক ভরি সোনার গয়না।

অভিযোগ, বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই ফের পণের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রিয়াঙ্কার উপরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। প্রিয়াঙ্কার মা মানসী সাউয়ের অভিযোগ, ‘বিয়ের আগে ব্যবসা আছে বলে জানালেও পরে জানতে পারি রাজেশ কিছুই কাজ করে না। পরে জানা যায়, তার সঙ্গে এক তরুণীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কও রয়েছে। আমার মেয়ে এ কথা জানার পরে মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিল।’

প্রিয়াঙ্কার পরিবারের লোকজন জানান, বিয়ের পরেই এক বার গর্ভবতী হন প্রিয়াঙ্কা। অভিযোগ,তা  জানতে পেরেই রাজেশ স্ত্রীর পেটে সজোরে মারলে প্রচণ্ড রক্তপাত হয়ে শিশুটি নষ্ট হয়ে যায়। মাস ছয়েক আগে প্রিয়াঙ্কা ফের গর্ভবতী হন। অভিযোগ, তা জানার পর থেকেই বাপের বাড়িতে যেতে দিতেন না শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাকে দেখতে বাপের বাড়ির লোকেরা প্রায়ই বালিতে তার কাছে যেতেন। গত রবিবারও প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বোন প্রিয়া।

অভিযোগ, তিনি গিয়ে দেখেন প্রিয়াঙ্কাকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করছেন শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ ও স্বামী। প্রিয়া বলেন, ‘আমাকে দেখতে পেয়েই ওরা যেন আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এর পরে আমার সামনেই দিদির ঘাড়ে পিঠে-পেটে লাথি মারতে শুরু করেন জামাইবাবু। আটকাতে গেলে আমাকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন কোনও রকমে দিদিকে নিয়ে হাওড়ায় ফিরি। রাতেই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করি।’

এ দিন প্রসূতি বিভাগের ৪০ নম্বর বেডে শুয়ে প্রিয়াঙ্কা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘রাজেশ পেটে লাথি মেরে আমার সন্তানকে ফের মেরে ফেলেছে। এর আগেও এমন করেছে। ওর গোটা পরিবারের যেন কঠিন শাস্তি হয়।’

এ দিন রাজেশের বাবা মনোজ সাউকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ সব মিথ্যা কথা। প্রিয়াঙ্কা প্রায়ই বাপের বাড়ি চলে যেত বলে আমার ছেলে রাগ করে গালিগালাজ করত। মারধর কখনও করেনি। পেটের সন্তান কী করে নষ্ট হয়েছে, আমরা জানি না।’

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্র সিং বলেন, ‘প্রথমে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছিল। কিন্তু ওই তরুণীর গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন ধারা যোগ করা হচ্ছে।’

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে