রবিবার, ০১ এপ্রিল, ২০১৮, ০৭:৪৭:৫০

ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে কাশ্মিরজুড়ে বিক্ষোভ

ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে কাশ্মিরজুড়ে বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে আট জন নিহতের ঘটনায় কাশ্মিরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ। বিশেষ করে দক্ষিণ কাশ্মিরে বিক্ষোভের তীব্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসব বিক্ষোভ থেকে পাথর ছুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পাল্টা জবাব দেওয়া হচ্ছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে কেউ যেন বিক্ষোভের ডাক দিতে না পারে সেজন্য রবিবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শ্রীনগর ও বানিহালের মধ্যে ট্রেন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা আল জাজিরা’কে জানিয়েছেন, উপত্যকার গ্রামগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। ভারতীয় বাহিনীর অভিযানের লক্ষ্যবস্তু কাশ্মিরের মুক্তির জন্য লড়াই করা বিদ্রোহীদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে তারা অভিযানস্থলের দিকে অগ্রসর হন। এ সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এদিকে কাশ্মিরের পুলিশ প্রধান সায়াম প্রকাশ পানি জানিয়েছেন, শনিবার রাতে তারা উপত্যকার পৃথক তিনটি স্থানে অভিযান চালিয়েছেন। এর মধ্যে রাতেই সোফিয়া ও অনন্তনাগ জেলায় পরিচালিত অভিযানে আটজন নিহত হয়েছেন। সেখানে অভিযান শেষ হয়েছে। তবে সোফিয়ান জেলায় এখনও অভিযান চলছে।

মানজুর আহমেদ নামের একজন গ্রামবাসী আল জাজিরা’কে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। কয়েকজন তরুণের চোখে নিরাপত্তা বাহিনীর ছররা গুলি আঘাত করে। আমার চোখের সামনেই দুইজন বুলেটবিদ্ধ হয়েছেন। বহু বেসামরিক নাগরিকের ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে যাওয়ায় তাদের রাস্তায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। এই রক্তপাত আর কতদিন চলবে! আমরা ক্লান্ত।

হাসপাতাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত তিন ডজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।

এদিকে ভারতীয় বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে দুই দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতে সাড়া দিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

২০১৬ সালের ৮ জুলাই বন্দুকযুদ্ধের নামে কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী তরুণ হিজবুল কমান্ডার বুরহান মুজাফফর ওয়ানিকে হত্যা করে ভারতীয় সেনারা। ওই হত্যাকাণ্ডের পর কাশ্মিরের জনগণ প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে। এ হত্যাকাণ্ডের জেরে নারী ও শিশুসহ শতাধিক মানুষ নিহত ও ১২ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর ছররা গুলির আঘাতে চোখ হারান শত শত মানুষ। ওই সময় থেকেই সোফিয়ান, পালওয়ামা ও অনন্তনাগ এলাকা স্বাধীনতাকামীদের শক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠে।

বুরহান ওয়ানি’র বাবা মুজাফফর ওয়ানি’র মতে, কর্তৃপক্ষ দমনপীড়ন চালিয়ে কাশ্মিরিদের আন্দোলন থামাতে পারবে না। কেননা কাশ্মিরে সবাই নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করছে। আল জাজিরা’কে তিনি বলেন, আমরা যে ধরনের নিপীড়নের মুখোমুখি হচ্ছি তাতে করে লোকজন মনে করছে, এর চেয়ে আত্মত্যাগই ভালো। নিজেদের মা-ভাই-বোনদের অসম্মানের চেয়ে তারা আত্মত্যাগকেই বেছে নিয়েছে।

কাশ্মিরে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কেউ সরাসরি স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত। কেউ কেউ আবার কাশ্মিরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইসলামীকরণ হয়েছে।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মিরের মুক্তি আন্দোলনকে জঙ্গিবাদী তৎপরতা হিসেবে বিবেচনা করে। ‘সন্দেহভাজন জঙ্গি’ নাম দিয়ে বহু বিদ্রোহীর পাশাপাশি বেসামরিকদেরও হত্যার অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে।

নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-পাকিস্তানের গোলাগুলি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে গত ৪ মার্চ রাতে সোপিয়ানে সেনা অভিযানে নিহত পাঁচ জনের তিন জনকে জঙ্গি সহযোগী দাবি করা হয়। যদিও স্থানীয়রা জানিয়েছিল তারা নিরপরাধ। ‘বেসামরিক নিরপরাধ’ হত্যার প্রতিবাদে তখন উত্তাল হয়ে উঠে কাশ্মির। লোকজন রাস্তায় নেমে আসে। জারি করা হয় কারফিউ। স্কুল-কলেজ ও ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গত ১০ মার্চ উত্তর ও মধ্যাঞ্চলীয় এলাকার স্কুল-কলেজগুলো খুলে দেওয়া হয়। জানানো হয়, ১২ মার্চ থেকে দক্ষিণ কাশ্মিরের স্কুল-কলেজগুলো খুলবে। তবে এদিন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নতুন করে তিনজন নিহত হওয়ার পর দক্ষিণ কাশ্মিরের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সর্বশেষ ৩১ মার্চ দিবাগত রাতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান ও হতাহতের ঘটনায় ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠলো ‘দুনিয়ার ভূস্বর্গ’ খ্যাত কাশ্মির। সূত্র: আল জাজিরা।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে