আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মালয়েশিয়ার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক এবং তার স্ত্রীর ওপর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ড. মাহাথির মোহাম্মদ দায়িত্ব নেয়ার পরের দিনই এমন এ নির্দেশ এলো।
অভিবাসন কর্তৃপক্ষ বলছে, নাজিব রাজাক এবং তার স্ত্রী মালয়েশিয়া ত্যাগ করতে পারবেন না।
নাজিবের বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল থেকে ২০১৫ সালে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন তিনি।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় এক টুইটবার্তায় নাজিব রাজাক জানান, অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আমি ও আমার স্ত্রী দেশের বাইরে যেতে পারব না। এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে কোনো কারণ না বললেও আদেশটি আমি মেনে চলবো।
মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন জোট ব্যাপক জয়লাভ করে। ২২২টি আসনের মধ্যে অন্তত ১২১টি আসনে তাদের প্রার্থীরা জয়ী হয়।
৬০ বছরের ইতিহাস পাল্টে দিয়ে ৯২ বছর বয়সে আবারো প্রধানমন্ত্রী হন মাহাথির মোহাম্মদ। তবে এই নির্বাচনে গুরু মাহাথির আর শিষ্য নাজিবের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত গুরুর কাছে হেরে যায় সদ্য সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকলেও এবার বিরোধী দল থেকে নির্বাচন করে মাহাথির মোহাম্মদ। স্বেচ্ছা অবসর ভেঙে সাবেক সহকর্মী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। ক্ষমতাসীন নিজ দল বারিসান ন্যাসিওনাল ছেড়ে যোগ দেন পাকাতান হারাপান জোটে।
মাহাথির মোহাম্মদের ১৪টি বিরল রেকর্ড
ইতিহাস সৃষ্টি করে মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় ফিরলেন ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ। নির্বাচন কমিশন পাকাতান হারাপানকে বিজয়ী ঘোষণার পরই দেশটির রাজা সুলতান মোহাম্মদ জোটের প্রধান মাহাথির মোহাম্মদকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মাহাথির মোহাম্মদের ১৪টি বিরল রেকর্ড হচ্ছে-
এক. ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ ৬১ বছরে এবারই প্রথম ক্ষমতার পালাবদল হলো মালয়েশিয়ায়, যা প্রত্যক্ষ করলো মালয়েশিয়ার জনগণ।
দুই. ৯২ বছরের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক হতে চলেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রধানমন্ত্রী।
তিন. ১৯৮১ সাল থেকে ২২ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়েন। ১৫ বছর পর আবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরল রেকর্ড।
চার. বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক এক সময় ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদেরই শিষ্য। শিষ্যের দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে অবসর জীবন থেকে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
পাঁচ. ক্ষমতাসীন দলকে পরাজিত করে বিরোধী দল থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া মাহাথিরের চমক।
ছয়. নিজের দল বোরিসান অ্যালায়েন্স ত্যাগ করে আলাদা দল গঠন করে বিরোধীদের নিয়ে জোট গঠন করে নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড।
সাত. সরকারি চাকুরিজীবী থেকে নিজেই একটি প্রাইভেট ক্লিনিক খুলেন। চিকিৎসক হিসেবে জনপ্রিয়তা ও গণ সম্পৃক্ততা থেকেেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এমন রেকর্ড দেখা যায় না।
আট. দেশের সকল মুসলিমদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন তিনি।
নয়. মালয়েশিয়ানদের শিক্ষার ৯৫ শতাংশ খরচ সরকার বহনের নীতি চালু করেন মাহাথির।
দশ. ১৯৯২ সালে নিজ দেশের সবাইকে কর্মসংস্থান দিয়েছেন। একজনও বেকার ছিল না। আরো ৮ লক্ষ বিদেশী শ্রমিক নিয়োগ দেয় মালয়েশিয়া।
এগার. সরকারি কর্মীরা যেন ঠিক সময়ে অফিসে আসেন তার জন্য প্রথমবারের মতো চালু করেন ফ্লো-চার্ট।
বার. তিনি কর্মীদের যা করতে বলেছেন তা নিজে করেও দেখিয়েছেন। অবাস্তব বলেননি বা কাল্পনিক নির্দেশনা দেননি।
তের. টাইম ম্যাগাজিন একবার তার অফিসে আসার সময় রেকর্ড করেছিল। পরপর পাঁচ দিন তার অফিসে প্রবেশের সময় ছিল সকাল ৭:৫৭, ৭:৫৬, ৭:৫৭, ৭:৫৯, ৭:৫৭
চৌদ্দ.পাল্টে যায় মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র। নির্বাচিত হয়েই আনোয়ার ইব্রাহীমের জুন মাসে মুক্তির কথা বলে তিনি প্রতিশ্রুতি পূরণের নজির সৃষ্টি করেন।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস