রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮, ১২:৪৯:৩১

ভারতে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ, নিহত ২

ভারতে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ, নিহত ২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ শহরে শুক্রবার রাতে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন মারা গেছেন। পুলিশ কর্মকর্তাসহ আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় ৪০টি দোকান আর দুই ডজন গাড়ি। খবর বিবিসি বাংলা ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

পানির বিল বাকি থাকায় শহরের নানা এলাকায় লাইন কেটে দিচ্ছিল কর্পোরেশন। কয়েকটি মুসলিম এলাকায় পানির লাইন কাটা নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয় অশান্তি। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে।

আওরঙ্গবাদের কেন্দ্রস্থলে শাহগঞ্জ আর কাছাকাছি মোতি করঞ্জা, রাজাবাজার, নবাবপুরা, গান্ধীনগর -এসব এলাকায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।

প্রায় সারা রাত দোকান আর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ চালাতে থাকে দাঙ্গাকারীরা। সঙ্গে চলতে থাকে ব্যাপক পাথর নিক্ষেপ।

পুলিশ কমিশনার মিলিন্দ ভারাম্বে বলছেন, সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তেই পুলিশ গিয়ে ওই সব অঞ্চলে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও প্লাস্টিক গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিল রাতেই। তবে শনিবার ভোর সাড়ে ৪টা থেকে আবারও পাথর ছুড়তে শুরু করে একদল যুবক।

এই যুবকদের এখনও চিহ্নিত করা না গেলেও তারা বাইরে থেকেও এসে থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাদনাভিস বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। শান্তি ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে এক জায়গায় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

যেভাবে দাঙ্গার সূত্রপাত

এই গোটা অশান্তির সূত্রপাত পানির সংযোগ নিয়ে। বিল বকেয়া থাকায় কর্পোরেশন থেকে বিভিন্ন এলাকায় পানির লাইন কাটা হচ্ছিল।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কয়েকজন মুসলমানের বাড়িতেও পানির লাইন কাটা হয়।

গান্ধীনগর এলাকার দুই সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা পানি ভরতে এলে তাদের মধ্যে বচসা ও হাতাহাতি শুরু হয়। সেটিই শেষমেশ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ওই এলাকাগুলোতে হিন্দু আর মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই থাকে। আর দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ ছিলই।

পুলিশ এর আগেও হিন্দু আর মুসলিম- উভয়পক্ষের নেতাদের ডেকে বিরোধ মেটানোর পরামর্শ দিয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় পানির লাইন কাটার পর তা আগুনের ফুলকির মতো কাজ করে। শুরু হয়ে যায় পাথর নিক্ষেপ আর অগ্নিসংযোগ। গুজবও রটতে থাকে সারা শহরেই।

গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানুষজনের স্বাভাবিক চলাচলের ওপরে ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়েছে।

দাঙ্গাকবলিত এলাকায় টহল

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দাঙ্গাকবলিত এলাকাগুলোতে টহল চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।

সকালের পর নতুন করে কোথাও অশান্তি ছড়ায়নি। তবে উত্তেজনা এখনও রয়েছে।

পুলিশ কমিশনার বলছেন, দাঙ্গায় যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের একজন হিন্দু, অন্যজন মুসলমান। একজনের বয়স ১৭, অন্যজনের ৬২।

পুলিশ বলছে, এদের মধ্যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি একটি দোকানের ভেতরে ছিলেন রাতে। সেই দোকানে আগুন লাগার পর তিনি আর বেরিয়ে আসতে পারেননি।

অন্য ব্যক্তি একটি চায়ের দোকান চালান। প্রাচীন অজন্তা-ইলোরা গুহামালার সব থেকে কাছের শহর এই আওরঙ্গবাদ। শহরের কাছেই রয়েছে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধিও।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে