সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮, ০৮:৩৪:০৯

কেন ইসরাইল ও ইরান একে অপরের শত্রু?

কেন ইসরাইল ও ইরান একে অপরের শত্রু?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সম্প্রতি সিরিয়াতে ইরানের বিভিন্ন ঘাঁটিতে ইসরাইল বোমা হামলা চালায়।এরপরেই প্রশ্ন উঠে কেন সিরিয়াতে ইরানের স্থাপনার উপর হামলা করছে ইসরাইল। এই দুই দেশের সম্পর্কটা কেমন?

কেন ইসরায়েল এবং ইরান একে অপরের শত্রু?

১৯৭৯ সালে ইরানে বিপ্লবের পর সেখানে ধর্মীয় নেতারা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। ইরানের সেই সব নেতারা ইসরাইলকে বর্জন করার আহ্বান জানায়। ইসরাইলের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে ইরান ।

তারা বিবেচনা করে ইসরাইল অবৈধভাবে মুসলমানদের ভূমি দখল করে রেখেছে। এদিকে ইসরাইল তাদের অস্তিত্বের জন্য ইরানকে তাদের হুমকি হিসেবে দেখে।

ইসরাইল সব সময় বলে এসেছে ইরানের অবশ্যই পরমাণু অস্ত্র থাকা উচিত হবে না। ইসরাইলের নেতারা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের যে বিস্তৃতি সেটা দেখে উদ্বিগ্ন।

সিরিয়া কিভাবে দুই দেশের মধ্যে এলো?

২০১১ সাল থেকে প্রতিবেশী দেশ সিরিয়াতে যুদ্ধ শুরু হলে ইসরাইল গভীর উদ্বেগের সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। কিন্তু সিরিয়ার সরকার এবং বিদ্রোহীদের সাথে এই যুদ্ধে ইসরাইল কোন সময় যুক্ত হয়নি।

কিন্তু ইরানের অবস্থান ছিল উল্টো। ইরান, সিরীয় সরকারকে হাজার হাজার সৈন্য এবং সামরিক উপদেষ্টা দিয়ে সাহায্য করেছে। ইসরাইল আরো উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করলো ইসরাইলের পার্শ্ববর্তী আরেক দেশ লেবাননের যোদ্ধাদের কাছে গোপনে অস্ত্র পাঠানোর চেষ্টা করছে ইরান।

এটা ইসরাইলকে আরো হুমকির মুখে ফেলে দেয়। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বার বার বলেছেন তাঁর দেশ সিরিয়াতে ইরানকে কোনো প্রকার ঘাটি তৈরি হতে দেবে না যেটা ইসরাইলের বিপক্ষে ব্যবহার করা হতে পারে।

এ অবস্থায় ইরান যেহেতু সিরিয়াতে একটা শক্তিশালী অবস্থানে চলে গেছে, ইসরাইলও তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য তাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়।

ইসরাইল এবং ইরান কি যুদ্ধ লিপ্ত হবে?

না। এর পিছনে কয়েকটি শক্ত কারণ রয়েছে। ইরানের সাথে রয়েছে শক্তিশালী গ্রুপ যারা ইসরাইলকে লক্ষ্য করে রয়েছে। তারা হল হেজবুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনের সামরিক সংগঠন হামাস। এরপরও যদি যুদ্ধ দুই যুদ্ধে জড়ায় তবে তা হবে ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক।

বড় সামরিক সংঘর্ষ হলেও এখনই যুদ্ধে জড়াচ্ছে না ইরান-ইসরাইল

ইসরাইলের বাহিনী সিরিয়ায় ইরানি সেনাবাহিনীর ভিত্তি লক্ষ্য করে ভারি বোমাবর্ষণ করেছে। ইসরাইল বলছে, অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ইরানের ছোঁড়া রকেট হামলার জবাবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দুই তিক্ত শত্রুর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক সংঘর্ষ।

হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় দুই দেশ সহসাই সরাসরি সংঘর্ষে জড়াতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবিগদর লিবেরম্যান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আমাদের ওপর বৃষ্টিবর্ষণ করা হলে তাদের ওখানে বন্যা হবে।

ইসরাইল বলছে, ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের এটাই সিরিয়ায় তাদের সবচেয়ে বড় হামলা। আর এ ঘটনায় ইরান ও ইসরাইল নিজেদের মধ্যে সিরিয়ায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে হিজবুল্লাহ ও লেবাননও। যা বয়ে আনবে ভয়াবহ পরিণতি।

তবে আপাতত যুদ্ধে জড়াতে চাচ্ছে না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে উভয় পক্ষ। মনে করা হচ্ছে গত সপ্তাহে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসায় ইসরাইল সাহসী হয়ে উঠেছে। ইরানের ভিত্তি লক্ষ্য করে ইসরাইলের সবশেষ সামরিক কর্মকাণ্ড কিন্তু সেটাই নির্দেশ করে।

বৃহস্পতিবার ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, ইরান গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সম্মুখসমর টার্গেট করে একটি রকেট হামলা চালিয়েছে। জবাবে সিরিয়ায় ইরানের সেনা ভিত্তিতে হামলা করা হয়েছে।

এদিকে ইরানের গণমাধ্যম ইসরাইলি ওই হামলাকে ‘নজিরবিহীন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে যে, মনগড়া অজুহাতের ভিত্তিতে ইসরাইল সিরিয়ায় রকেট হামলা চালিয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম ঘাসেমিকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, এই হামলা ছিল সিরিয়ার জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার লঙ্ঘন। তিনি বলেন, এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করার অধিকার সিরিয়ার আছে।

অন্যদিকে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবিলম্বে সব ধরনের বৈরী এবং উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউজ ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ইরানের রকেট হামলাকে নিন্দা করে বলেছে যে, এটি কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিপজ্জনক । জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দুই পক্ষকেই উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছেন।-বিবিসি
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে