মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮, ০৪:৩২:০৯

'ইউরোপে যেতে সবকিছু বিক্রি করে এখন আমি নিঃস্ব'

'ইউরোপে যেতে সবকিছু বিক্রি করে এখন আমি নিঃস্ব'

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তিন হাজারের বেশি নাইজেরিয়ান অবৈধভাবে ইউরোপ যেতে ব্যর্থ হয়ে শেষপর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা তাদের উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে।

তাদের অনেকে সবকিছু বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই পথে ব্যর্থ হয়ে সবকিছু হারিয়ে তাদের অনেকে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে পরিবারের মুখোমুখি হচ্ছেন।

এমনই একজন ইভান্স উইলিয়াম। ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজের সবকিছুই বিক্রি করেন তিনি। তিনি বলেন, 'আমি অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার জন্য সবকিছু বিক্রি করেছি। কিন্তু বাড়ি ফিরেছি নিঃস্ব হয়ে।'

ইভান্স তার বিছানা, ফ্রিজ, টেলিভিশন, অতিরিক্ত কাপড় থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন পর্যন্ত বিক্রি করে অর্থ যোগাড় করেন। এসব বিক্রি করে সেই অর্থ তিনি দালালদের দিয়েছিলেন। দালালরা তাকে নাইজেরিয়া থেকে সাহারা হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে গিয়েছিল।

অবৈধভাবে ইউরোপে নিয়ে যেতে দালালরা ইভান্সের  কাছ থেকে নিয়েছিল এক হাজার ডলার। এ নিয়ে তখন তার কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। তার ভাবনায় ছিল, এক সময় ইউরোপে পৌঁছে দ্রুত আয় করা যাবে। ইউরোপে আয়ের অর্থ জমিয়ে বাড়ি ফিরে নিজে ব্যবসা করার স্বপ্নও তাকে পেয়ে বসেছিল।

কিন্তু ইভান্স উইলিয়ামের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। লিবিয়ায় ছয় মাসের কঠিন সময় পার করতে তাকে। পাচারকারী চক্র বা দালালরা জোর করে তাকে দিয়ে সেখানে কাজ করায়। বিনিময়ে কোনো অর্থ বা খাবার কিছুই দেয় না। শেষপর্যন্ত সমুদ্র পাড়ি দিতে আরও অনেক অবৈধ অভিবাসীর সঙ্গে তাকে তোলা হয় নৌকায়।

তখন লিবিয়ার কোস্টগার্ড ইভান্সসহ ১৪০ জনকে আটক করে বন্দি শিবিরে পাঠায়। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা ইভান্সসহ বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছুকদের উদ্ধার করে। এরপর ইভান্স উইলিয়াম দক্ষিণ নাইজেরিয়ার বেনিন শহরে বাড়িতে ফিরে আসেন।

ইভান্স উইলিয়ামের মতো অন্যরাও কি বাড়ি ফিরতে চায়?

ইভান্স শেষ পর্যন্ত ইউরোপ যাত্রায় ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল এবং ফিরে আসেন। কিন্তু অনেকেই বাড়ি ফিরতে চায় না। কারণ তাদের বাবা-মা বা পরিবার সবকিছু বিক্রি করে অর্থ দিয়েছে। খালি হাতে ব্যর্থতা নিয়ে কিভাবে তারা স্বজনের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে? এই প্রশ্ন তাদের তাড়া করে।

ইভান্সের সঙ্গে একই ফ্লাইটে ছিলেন আবিবু। তার মা তাদের সম্বল একমাত্র জমি বিক্রি করে তাকে অর্থ দিয়েছিল ইউরোপে যাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, 'এখন ব্যর্থ হয়ে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে- সেটা জানলে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়বে। সেজন্য তিনি দেশে ফিরেও বাড়ি যাচ্ছেন না।'

তিনি যেন মায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে একবার বলেন যে, তিনি অন্তত বেঁচে আছেন- এই পরামর্শে তিনি রাজি হননি। তিনি বলেছেন, দুই বছর আগে লিবিয়ার একটি ডিটেনশন সেন্টার থেকে তিনি তার মাকে ফোন করেছিলেন। তার মা ধরেই নিয়েছিল যে তিনি দুই বছর ধরে ইউরোপে আছেন।

ফলে সেই ফোন কলে খুশি না হয়ে তার মা একটাই প্রশ্ন করেছিলেন, 'ইউরোপে যাওনি?'  
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে