ভাতে মারবে রাশিয়া
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হাতে মারতে না পারলে ভাতে মারব, মারবই- রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় ক্রুদ্ধ রাশিয়া তুরস্কের ওপর প্রতিশোধ নিতে প্রচলিত এই কূটপথেই হাঁটতে শুরু করেছে। মুখে সরাসরি যুদ্ধে না জড়ানোর পরিকল্পনার কথা বললেও আংকারাকে অর্থনৈতিক চাপে ফেলছে মস্কো। এজন্য শুরু হয়েছে খাদ্য-কূটনীতি। তুরস্ক থেকে আমদানি করা খাদ্যপণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে রুশ সরকার। তুর্কি পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রুশ জনগণ।
বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় তুরস্ককে ক্ষমা চাইতে হবে। খবর ডেইলি মেইল ও এএফপির।
রাশিয়ার কৃষিমন্ত্রী আলেক্সান্ডার কাচেভ বলেছেন, তুরস্কের অন্তত ১৫ শতাংশ কৃষিপণ্য রুশ স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়ার সরকার এরই মধ্যে দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা রজেলখোজনাজরকে তুর্কি খাদ্যপণ্য আমদানিতে কঠোরতা আরোপের নির্দেশ দিয়েছে।
পুতিনের সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা গেনাদি ওনিচেংকো বলেছেন, টাকা দিয়ে তুরস্কের পণ্য কেনা মানে তাদের সামরিক ব্যয়ে অর্থায়ন করা। আরেকটি রুশ বিমানে গুলি চালানোর অর্থ জোগানো।
তিনি ব্যবসায়ীসহ রুশ জনগণকে তুর্কি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। বাজারে এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়েছে বলে জানা গেছে।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, তুরস্কের টমেটো রাশিয়ায় খুব জনপ্রিয়। রাশিয়ার সবজিপণ্য আমদানির ২০ ভাগ কেনা হয় তুরস্ক থেকে। এএফপির তথ্যমতে, গত ১০ মাসে আংকারা থেকে ১০০ কোটি ডলারের সবজিপণ্য আমদানি করেছে মস্কো।
এদিকে রাশিয়ার পর্যটকরা তুরস্ক ভ্রমণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রুশ পর্যটক সংস্থাগুলো রাজনৈতিক উত্তেজনার কথা বলে আংকারাগামী টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছে।
এরই মধ্যে তুরস্কে অবস্থানরত পর্যটকরাও ফিরে আসছে। চলতি বছর অন্তত ১৪ লাখ রুশ পর্যটক তুরস্কে গিয়েছিল।
অন্যদিকে তুরস্কের কয়েকজন ব্যবসায়ী মস্কোর একটি কৃষি সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়ায় প্রবেশ করলে ভিসা জটিলতায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এ ৩৯ জন ব্যবসায়ী বাণিজ্য ভিসার পরিবর্তে পর্যটন ভিসা বহন করছিলেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আঙ্কারা বলছে সতর্ক করেছি, মস্কোর না : রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার আগে তুরস্কের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয় বলে দাবি করা হলেও রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ভূপাতিত রুশ যুদ্ধবিমানের বেঁচে যাওয়া কো-পাইলট বলেছেন, তুরস্কের পক্ষ থেকে অডিও বা ভিডিও কোনো ভার্সনে তাদের সতর্ক করা হয়নি। আলজাজিরা ও বিবিসি অনলাইনের এক খবরে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তুরস্কের আকাশসীমা লংঘনের বিষয়ে ভূপাতিত বিমানের বেঁচে যাওয়া কো-পাইলট (নেভিগেটর) কনস্তানতিন মুরাখতিন বলেছেন, না, কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এক সেকেন্ডের জন্য নয়।
রাশিয়ার ও সিরিয়ার বিশেষ বাহিনী মুরাখতিনকে উদ্ধার করে। তবে ভূপাতিত বিমানের পাইলট প্যারাস্যুটযোগে মাটিতে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে তাকে রাশিয়ার বিদ্রোহীরা গুলি করে হত্যা করে। এ তথ্য জানিয়েছেন মুরাখতিন।
রাশিয়ার যুদ্ধবিমানকে সতর্ক করা হয়, তার প্রমাণ হিসেবে বুধবার তুরস্ক একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করে। এই অডিওতে ইংরেজিতে বলা হয়, আপনারা তুরস্কের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ছেন, গতিপথ পরিবর্তন করুন।
কোনো পাইলটের মাধ্যমে নয়, তুরস্কের দিয়ারবাকির বিমানঘাঁটি থেকে এই অডিও বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু মুরাখতিনের দাবি, তিনি কোনো বার্তা শুনতে পারেননি।
বিমান ভূপাতিত নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যকার সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা বন্ধ হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তুরস্ককে এজন্য মাশুল দিতে হবে।
এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে এই প্রথম রাশিয়ার কোনো যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করল ন্যাটোর কোনো দেশ।এ নিয়ে ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়ার কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। এএফপি, বিবিসি।
২৭ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ