গিনেস বুকে মুখার্জি বংশ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলার সনামধন্য এবং রাজকিয় বংশগুলোর মধ্যে মুখার্জি বংশ হলো অন্যতম। বহু প্রাচীন কাল থেকে দুই বাংলার মধ্যে চলে আসছে এই বংশের ধারা। এবার প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় দুই বাংলার মুখার্জি বংশের তালিকা। এই তালিকা থেকেই খুঁজে পাওয়া যাবে মুখার্জি বংশের পূর্বপুরুষ থেকে তারও পূর্বপুরুষের পরিচয়। এভাবে প্রায় সর্বোচ্চ ৪০ জন পূর্বপুরুষের খোঁজ মিলবে এই তালিকা থেকে, পাওয়া যাবে বংশের উৎপত্তি। বাংলাদেশ এবং কলকাতার রাঢ় অঞ্চলের প্রায় প্রত্যেকটি জেলায় এক সময় বসবাস করত মুখার্জি বংশের লোকেরা। চমকে দেওয়ার মতো এই তালিকা প্রস্তুত করেছেন উত্তরপাড়ার জয়কৃষ্ণ স্ট্রিটের বাসিন্দা দেবাশিস মুখার্জি। ছয় ফুট বাই চার ফুট এই তালিকায় মুখার্জি বংশের ৪৩৬৮ জন পুরুষ সদস্যের নাম রয়েছে। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এক মাত্র মহিলা সদস্যার নাম, মা সারদা। দীর্ঘ পরিশ্রমের পর চলতি বছরের জুলাই মাসে শেষ হওয়া এই তালিকায় রয়েছে বাংলার মুখার্জি বংশের একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং পরিবারের নাম। বিপ্লবী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, স্যার আশুতোষ, বীর শহিদ বাঘাযতীন, মহাকবি কৃত্তিবাস ওঝা, রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র, অজয় মুখার্জি, সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখার্জি, গায়ক হেমন্ত মুখার্জি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতক রাজা প্যারীমোহন মুখার্জি, সাংবাদিক হরিশচন্দ্র মুখার্জি, জমিদার জয়কৃষ্ণ মুখার্জি, বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি–সহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম রয়েছে এই তালিকায়। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকজনের নামের পদবি মুখার্জি ছিল না, যেমন কৃত্তিবাস ওঝা। এক্ষেত্রে দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, ওঝা পদবি নয়, ওটা উপাধি। তিনি বলেছেন, আদতে ওঁর সম্পূর্ণ নাম ছিল কৃত্তিবাস মুখার্জি, উপাধি ব্যবহার করে পরে ওঝা হয়েছিলেন। তালিকায় তিনি বাংলায় আসা প্রথম মুখার্জিকে ১ ধরে নিয়ে তালিকা বানানোর কাজ শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি তালিকা অনুযায়ী প্রথম পুরুষের পূর্বপুরুষকে ০ ধরে নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম পুরুষের জন্ম পুরনো বইপত্র পড়ে তিনি যা জেনেছেন, সেই অনুযায়ী তা হবে ৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ। তালিকা অনুযায়ী মুখার্জি বংশের প্রথম পুরুষের নাম মেধা তিথি, মতান্তরে সুধা নিধি। তিনি থাকতেন কান্যকুব্জ বা কনৌজে। মেধা তিথি বা সুধা নিধি যে নামই হোক, তার পুত্র শ্রী হর্ষ ভরদ্বাজ ৯৪২ খ্রিস্টাব্দে আরও চার ব্রাহ্মণ–সহ অবিভক্ত বাংলায় আসেন। সুদূর কনৌজ থেকে শ্রী হর্ষ বঙ্গরাজ আদিশূরের আহ্বানে বাংলায় এসেছিলেন মহারাজের সন্তান কামনায় পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করতে। এই যজ্ঞে তাঁর সহকারী চার ব্রাহ্মণের নাম ছিল ভট্ট নারায়ণ শাণ্ডিল্য, দক্ষ কাশ্যপ, বেদ বর্গ সাবর্ণ ও ছান্দর বাতস্য। আর সেখান থেকেই বাংলায় মুখার্জি বংশের উৎপত্তি। দেবাশিসবাবুর দাবি, এত বড় বংশ তালিকা সম্ভবত ভারতবর্ষে আগে হয়নি। পৃথিবীতে হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না। এই তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে তাঁকে পুরাতন পুঁথি থেকে মহাকাব্য ও নানা বই পড়তে হয়েছে। দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, তাঁর এই গবেষণার দীর্ঘ রাস্তায় তিনি পাশে পেয়েছেন এশিয়াটিক সোসাইটি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, জয়কৃষ্ণ পাঠাগার ও জনাই সাধারণ পাঠাগারের অফুরন্ত সহযোগিতা। আগামী ১১ ডিসেম্বর তিনি ২০১৫ পর্যন্ত মোট ১১৪০ বছরের অবিভক্ত সারা বাংলার ভরদ্বাজ গোত্রীয় মুখার্জিদের এই বংশতালিকা তুলে দেবেন দেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতির হাতে। এই তালিকা তিনি গত ১২ নভেম্বর পাঠিয়েছেন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্তির জন্যে। ১৬ নভেম্বর গিনেস বুকের তরফে সেই তালিকার প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়েছে জানিয়েছেন দেবাশিসবাবু। তিনি আশাবাদী, তাঁর এই আবিষ্কার, ভারতের সব থেকে বড় বংশ পরিচয়ের তালিকা অবশ্যই গিনেস বুকে জায়গা করে নেবে।
১, ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ