আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মৃত সদ্যোজাত শিশুপুত্রের মরদেহকে সামনে রেখে মৃত্যুকে তারা এমনভাবে দাফন করে দিলেন যে তাতে পরপার থেকে যেন জীবন হেসে উঠলো। প্রতীকি অর্থে বিষয়টি অনেকটাই যেন তাই। মাত্র দেড় দিনের জন্য পৃথিবীতে এসেছিল সে। চলতি আগস্ট মাসের ২২ তারিখে ভারতের হরিয়ানার করনাল এলাকায় শিশুটির জন্ম মনোজ নামে এক ব্যক্তির ঔরসে। জন্ম থেকেই ইনফেকশনে আক্রান্ত ছিল নিষ্পাপ শিশুটি।
পরিস্থিতি গুরুতর দেখে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চন্ডিগর পাঠিয়ে দেন। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা সময় পর্যন্ত বেঁচে ছিল শিবা নামের এই শিশুটি। তবে বেঁচে থাকাকালে তার নাম ঠিক করা হয়নি, তার এই নাম রাখা হয় অন্তিম সংস্কারের সময়ে।
শোকস্তব্ধ স্বজনরা হৃদয় গুমরানো কষ্ট ভুলে তার দুটি চোখ দান করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে এমন দুজন ব্যক্তি পৃথিবীর রং-রূপ দেখার সৌভাগ্য লাভ করেন যারা অন্ধত্বের কারণে এর থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তাই শিবার দেড় দিনের পৃথিবীবাস বৃথা গেল না। তার স্বল্পায়ূ জীবনে যা হলো অনেকে তো আশি বছরের লম্বা জীবন কাটিয়েও তা করতে পারে না।
সোমবার হিন্দি সংবাদ মাধ্যম জাগরন.কম জানায়, হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়। এরপর স্বজনরা তাকে শ্মশানে নিয়ে যায়। ওই এলাকায় তখন কার্যক্রম চালাচ্ছিল জনসেবা দল, মাধব আই ব্যাংক ও আপনা আশিয়ানা আশ্রম নামের সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলো। কর্মজিত বালি নামের একজন কর্মকর্তা এসময় মানবতার সেবায় শিশুটির বাবা-মাকে অনুরোধ করেন মৃত সন্তানের চোখ দান করে দিতে। তিনি বলেন, আপনাদের ঘরের প্রদীপ তো নিভে গেছে- এটা সত্য। কিন্তু তার কর্নিয়া দুজন অন্ধের চোখে আলোদান করতে পারে। সন্তানহারানোর শোকে বিমূঢ় হলেও মনোজ ও তার স্ত্রী মহৎ সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলেন।
এসময় সেখানেই চক্ষুদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এরপর শিশুটির দাফন (অন্তিম সংস্কার) সম্পন্ন হয়। তবে এসময় খেয়াল হয় যে তার তো নাম রাখা হয়নি! দলিল-দস্তাবেজে রেকর্ড রাখার জন্য নাম প্রয়োজন। তখন মৃত শিশুটির নাম রাখা হয় শিবা। প্রসঙ্গত, সনাতন ধর্মমতে, শিবা বা শিব ঠাকুরের একটি তৃতীয় নয়নও আছে যা জ্ঞানের প্রতীক। সেই বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত হয়ে শিশুটির নাম ‘শিবা’ রাখা হয় বলে অনেকে মনে করছেন।
শোকাতুর অবস্থায়ও শিশুটির-বাবা মায়ের মহৎ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে অঙ্গ-প্রতিস্থাপন সার্জন ওয়াহিদ জামান ও নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. যোগেশ ছাবরা বলেন, এমন সিদ্ধান্তের জন্য অনেক বড় অন্তরের প্রয়োজন হয়। দিল্লির শালিমারবাগ ম্যাক্স সুপার স্মেশালিটি হাসপাতালে কর্মরত এই দুই চিকিৎসকের মতে, শিবার অভিভাবকরা এর মাধ্যমে অন্যদের জন্য উদাহরণ পেশ করেছেন। লোকজনের মনে চোখ দান বিষয়ে ব্যাপক ভুল ধারণা রয়েছে। এ ঘটনা ওইসব ভ্রান্তি আর অমূলক ধারণা দূর করতে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রাখবে।