১৪ হাজার বছর আগে প্রথম ছবি এঁকেছিলেন প্রাচীন 'পিকাসো'
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রায় ১৪ হাজার বছর আগে অধুনা স্পেনের এক নদীর ধারে বসে পাথর দিয়ে পাথরেরই বুকে অর্ধগোলকের মতো বেশ কয়েকটি আকৃতি খোদাই করেছিল কেউ বা কারা। আজ সেই আঁকিবুকির মমার্থ উদ্ধার করে চমকে উঠছেন পুরাতত্ত্ববিদরা। তাদের মতে, ১৪ সেন্টিমিটার লম্বা ওই পাথরের গায়ে রয়েছে মানুষের হাতে আকা মানুষের তৈরি স্থাপত্যের ছবির সর্বপ্রথম নিদর্শন। সেই প্রাচীন 'শিল্পী' (বা শিল্পীরা) নিজেদের কাজের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল কি না কে জানে, কিন্তু গবেষকদের মতে, অঙ্কনশিল্পের বিবর্তনের ইতিহাসে এই নিদর্শনটি আধুনিক স্পেনের প্রবাদপ্রতীম আঁকিয়ে পাবলো পিকাসোর ছবির থেকে কিছু কম 'বৈপ্লবিক' নয়!
বার্সেলোনা শহরের কাছে 'মোলি দেল সল্ট' এলাকা থেকে পাওয়া ওই পাথরের ছবিকে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন পুরাতাত্ত্বিক মার্কস গার্সিয়া দিয়েজ এবং ম্যানুয়েল ভ্যাকুয়েরো? তারা জানাচ্ছেন, প্যালিয়োলিথিক যুগে আইবেরিয়ান উপদ্বীপ এলাকায় বসবাসকারী মনুষ্যগোষ্ঠী মূলত শিকার করে ও ফলমূল-খাদ্যশস্য জোগাড় করে বেঁচে থাকত। এই ধরনের অভিযান চলাকালীন ছোট-ছোট গম্বুজের মতো ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে নদীর ধারে যে শিবির তারা বানিয়েছিল, তারই একটি দৃশ্য ধরা রয়েছে পাথরের ওই ছবিতে। আর, তা আঁকতে গিয়ে আগেকার যাবতীয় 'প্রথা' ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল সেই শিল্পী। কারণ, তার আগে পর্যন্ত প্রাচীন মানুষ শুধুমাত্র জন্ত্ত-জানোয়ার আর মানুষের শরীরের ছবিই আঁকত৷ কিন্ত্ত 'মোলি দে সল্ট'-এর শিল্পী প্রথম বার এঁকেছিল মানুষের বানানো বাড়িঘর তথা সমাজের ছবি, যা তার আগে কেউ কখনও আঁকেন। অর্থাৎ, দৃষ্টিভঙ্গীর এক যুগান্তকারী পরিবর্তন।
'প্লাস ওয়ান' জার্নালে এ ব্যাপারে প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধে দিয়েজ ও ভ্যাকুরো দাবি করেছেন, মূলত চকমকি জাতীয় সূঁচালো পাথর দিয়ে কম সময়ের মধ্যেই আঁকা হয়েছিল ঘাস দিয়ে তৈরি ওই সাতটি অর্ধগোলাকার ঝুপড়ির ছবি - যেগুলি মানুষদের থাকা বা পশুদের রাখার জন্য ব্যবহার করা হত৷ আকৃতিগুলির মধ্যে লম্বা লম্বা করে টানা অনেকগুলি রেখার ব্যবহার ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাড়ির চারপাশের ছাউনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন শিল্পী৷ উল্লেখযোগ্য যে, ঝুপড়িগুলি আঁকা হয়েছে তিনটি সারিতে৷ গবেষকদের মতে, সমসাময়িক আঁকিয়েদের মতো 'একমাত্রিক' ছবি আঁকতে চায়নি ওই শিল্পী৷ বরং তার ইচ্ছা ছিল, চোখের দৃষ্টিতে ধরা পড়া 'গভীরতা'কে প্রকাশ করে ছবিকে 'দ্বিমাত্রিক' রূপ দেওয়া৷ এই অনুমান সত্যি হলে, এ ছবির গুরুত্ব বেড়ে যাবে আরও কয়েক গুণ৷
ঘটনা হল, ২০১৩ সালে তিন খণ্ডে উদ্ধার হওয়া পাথরটিকে প্রথমে গবেষকরা বিশেষ গুরুত্ব দেননি৷ কিন্ত্ত সেটির উপর জমে থাকা যাবতীয় ধূলোমাটির শক্ত আবরণ (ক্রাস্ট) সরিয়ে ফেলেই 'গভীরতর সত্য'টা আঁচ করেন দিয়েজ ও ভ্যাকুয়েরো৷ তাদের মতে, ছবিটি প্রায় ১৩ হাজার ৮০০ বছরের পুরোনো৷ দিয়েজদের অনুমান সত্যি হলে, এখনও পর্যন্ত পাওয়া মনুষ্য বসতির সবথেকে পুরোনো ছবিকে এই ছবিটি প্রায় ৬ হাজার বছর পিছনে ফেলে দেবে৷ সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধে লেখা হয়েছে, বিশুদ্ধ প্রকৃতি নয়, বরং 'মানুষকে নিয়ে তৈরি জগতটাই ছিল এই শিল্পীর প্রধান মনযোগের বিষয়৷ শিকারী-সংগ্রাহক ওই মনুষ্যগোষ্ঠীর শিবিরের সামাজিক তাত্পর্য্যটাকে মাথায় রাখলে মনে হয়, এটাই হল মানুষের গৃহস্থ ও সামাজিক আঙিনার প্রথম শৈল্পিক প্রতিরূপ৷'
কয়েক জন গবেষকের দাবি, প্রাচীন ওই শিল্পী আসলে কল্পনাকে আশ্রয় করে জন্ত্তদের ছবিই একটু 'বিশেষ ঢঙে' আঁকতে চেয়েছিল৷ তবে দিয়েজ ও ভ্যাকুয়েরো উপরের তথ্যপ্রমাণকে সম্বল করে সেই দাবিকে অস্বীকার করেছেন৷ তাদের মতে, ওই ছবি কাল্পনিক নয়, বরং 'ফটোগ্রাফিক'৷- এই সময়
৬, ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ