প্যারিস হামলার ছক কষা হয়েছিল ব্রিটেনেও
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিরিয়া-যোগের ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। প্যারিস হামলায় এবার নাম জড়াল ব্রিটেনেরও। ১৩/১১ হামলায় জড়িত আইএস জঙ্গিদের মধ্যে অন্তত এক জনকে চলতি বছরের শুরুতে লন্ডন, বার্মিংহাম এবং কেন্ট শহরে দেখা গিয়েছিল বলে দাবি করেছে দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। সন্ত্রাসের ছক কষতেই সন্দেহভাজন জঙ্গি ব্রিটেনে এসেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশের সন্ত্রাস-দমন শাখা। প্যারিসে হামলার আগে লন্ডনের বার্মিংহাম থেকে তার একাধিক ফোন-কলও ট্র্যাক করা গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
কে এই সন্দেহভাজন? ব্রিটেনের প্রথম সারির একটি সংবাদমাধ্যম বলছে, প্যারিসে হামলার মূল চক্রী হিসেবে যাকে চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা, সেই আবদেলহামিদ আবাউদকেই দেখা গিয়েছিল ব্রিটেনে। হামলার পাঁচ দিন পরে প্যারিসের অদূরে একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আবাউদকে খতম করেছে ফরাসি পুলিশ। দেশে জঙ্গি আনাগোনার
নয়া রিপোর্ট বেড়িয়েছে এমন তথ্য। তবে সেই জঙ্গি আবাউদ, নাকি অন্য কেউ— স্পষ্ট করেনি লন্ডন। বার্মিংহামে থাকাকালীন আবাউদ সে বার সিরিয়া-ফেরত কিছু ব্রিটিশ জঙ্গির সঙ্গে দেখা করে বলেও দাবি সংবাদমাধ্যমের। তাদের চিহ্নিত করে আলাদা ভাবে জেরা
করছে পুলিশ।
সিরিয়ার জঙ্গিঘাঁটিতে বসেই প্যারিসে হামলার ছক কষা হয়েছিল বলে দাবি করেছ তদন্ত সংস্থা। পরে বেলজিয়ামের একটি গোষ্ঠীকে সক্রিয় করে প্যারিসের ছ’টি জায়গায় হামলা চালায় ১১ জঙ্গির তিনটি দল। এখন সেই হামলার পিছনে ব্রিটেন-যোগের সূত্র উঠে আসায় চিন্তায় ডেভিড ক্যামেরনের প্রশাসন। প্যারিসের ধাঁচে জঙ্গিরা ব্রিটেনেও হামলা করতে পারে বলে গত কালই দাবি করেছেন ইউরোপীয় গুপ্তচর সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের কাছে যা তথ্য আছে, তাতে হামলার দায়িত্ব নিয়েই সিরিয়া থেকে দেশে ফিরছে ব্রিটিশ জঙ্গিরা।’’ দু’-এক সপ্তাহের মধ্যেই লন্ডন কিংবা ব্রিটেনের অন্যত্র হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা। প্যারিসের মতো এ বারও ‘সিরিয়ার বদলা’ নেওয়ার কথাই বলছে জঙ্গিরা।
গত পরশু থেকেই সিরিয়ায় বিমান হানা শুরু করেছে ক্যামেরনের সরকার। অবশ্য পশ্চিম এশিয়ায় জঙ্গিনিধন যুদ্ধে ২০১৪ থেকেই মার্কিন যৌথ বাহিনীর অন্যতম শরিক ব্রিটেন। তবে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে সম্প্রতি শরিকি জোটের পাশাপাশি একক ভাবে সিরিয়ায় বিমান হানার সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন। তার জেরেই ইউরোপীয় গুপ্তচর সংস্থার তরফে এই নয়া সতর্কতা কি না, খতিয়ে দেখছেন ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। ভাবাচ্ছে আবাউদের ব্রিটেন-যোগও।
কিন্তু কড়া নিরাপত্তার ফাঁক গলে সিরিয়া থেকে সে বার সে কী ভাবে লন্ডনে পৌঁছেছিল, ধন্দে পুলিশ। নভেম্বরের হিসেব বলছে, গত ২-৩ বছরে ব্রিটেন থেকে অন্তত ৮০০ নাগরিক আইএসে নাম লেখাতে সিরিয়া গিয়েছে। যার অর্ধেক এখনও ফেরেনি। হামলার ছক নিয়ে আবাউদের মতো তারাও একই ভাবে লন্ডন কিংবা বার্মিংহামে ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের। বিমানবন্দর ও দেশের সীমান্তে তাই কড়া নজর রাখছে ক্যামেরন প্রশাসন। ভুয়ো পরিচয়পত্র নিয়েও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া।
তদন্তকারীদের দাবি, প্যারিসে হামলার আগে ও পরে জঙ্গিদের অনেকেই ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে ধোঁকা দিয়েছে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও হাঙ্গেরি প্রশাসনকে। হামলার দিন থেকেই ফেরার সালাহ আবদেসলাম। এখনও সে ব্রাসেলসেই, নাকি পালিয়ে হাঙ্গেরি কিংবা সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে, ধোঁয়াশায় গোয়েন্দারা। কিন্তু আজ আবদেসলামকে মদত দেওয়ার অভিযোগে নতুন দুই সন্দেহভাজনের খোঁজে অভিযানে নেমেছে বেলজিয়াম। সুফিয়ান
কায়াল এবং সামির বউজিদ নামের ওই দুই ভুয়ো পরিচয়পত্রধারীকে ‘সশস্ত্র ও বিপজ্জনক’ বলে উল্লেখ করেছে প্রশাসন। গোয়েন্দাদের দাবি, হামলার দিন চারেক আগে সেপ্টেম্বরে হাঙ্গেরি-অস্ট্রিয়া সীমান্তে যখন আবদেসলামকে থামানো হয়েছিল, তখন এরাই ছিল তার সঙ্গে। পরে এদেরই এক জনের নামে বিপুল অঙ্কের টাকাও পৌঁছে যায় আবাউদের সম্পর্কিত বোন হাসনা এইতবুলাখেনের অ্যাকাউন্টে।
খোঁজ চলছে বছর তিরিশের আর এক সন্দেহভাজন মহম্মদ আবরিনিরও। তার বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, এর গাড়িতে করেই হামলার দিন ব্রাসেলস থেকে প্যারিসে গিয়েছিল আবদেসলাম।- আনন্দ বাজার
৬, ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ