কুয়ার ভেতর গোটা রাত কাটিয়ে প্রাণে বাঁচলেন তরুণী!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডিসেম্বরের কনকনে ঠান্ডার ভরা সকাল। বিশাল একটা খোলা জমির মাঝে শুকিয়ে যাওয়া একটি কুয়ো থেকে কিছুক্ষন পর পরই এক মহিলার ক্ষীণ গলার আওয়াজ ভেসে আসছিল। ঠিক ওই সময়ই জমির পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলেন এক যুবক। হঠাৎ মহিলার আওয়াজে থমকে যায় যুবক। ভুল শুনছেন না তো! একটু এগিয়ে যেতেই আওয়াজটা আরও স্পষ্ট হল। যুবকটি কুয়োয় উঁকি মারতেই একেবারে ‘বোবা’ হয়ে গেলেন। দেখলেন রক্তমাখা শরীরে এক যুবতী বাঁচার জন্য সাহায্য চাইছে। সাতসকালেই এমন কাণ্ড দেখে কি করবেন বুঝে উঠতে না পেরে সোজা দৌড় লাগান জমির মালিককে খবর দিতে। খবরটা জমির মালিকের ছেলে জানার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের মানুষদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। যুবতীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জমির মালিকের ছেলে বব্বল ভাটি বলেন, “মেয়েটির সারা শরীর রক্তে ভেজা ছিল। কাঁদছিল। তাকে দড়ি দিয়ে কুয়োর ভিতর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েটির অবস্থা এখন আশঙ্কা মুক্ত। ভারতের উত্তর প্রদেশের গ্রেটার নয়ডার ঘটনা।
আসলে কি হয়েছিল? আর কেনই বা মেয়েটি ওই কয়োর রক্তাত্য অবস্থায় পড়েছিল?
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, গত ২২ নভেম্বর এই মেয়েটিকে অপহরণ করে তিন যুবক। মেয়েটির বাড়ি ভারতের দক্ষিণ দিল্লিতে। ঘটনার দিন বিকেলে মেয়েটি মোবাইলের সিম কিনতে বাইরে বেরোন। পথেই একটি পরিচিত ছেলের সঙ্গে তার দেখা হয়। ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটিকে হেটে যেতে দেখে মেটির সম্পর্কের একজন ভাই। তার পর অনেক ক্ষণ কেটে যাওয়ার পরও যখন মেয়েটি বাড়িতে ফিরছে না, বাড়ির লোক থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
মেয়েটি পুলিশকে জানিয়েছে, ওই পরিচিত যুবকই তাকে একটি গাড়ির কাছে নিয়ে যায়। সেখানে গাড়িতে অপেক্ষা করছিল আরও দু’জন যুবক। গাড়ির সামনে পৌঁছতেই মেয়েটিকে ওই যুবকগুলো জোর করে গাড়ির মধ্যে ঠেলে ঢুকিয়ে দেয়। তারপর দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে তারা পালিয়ে যায়। গাড়ির মধ্যেই তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে ওই তিন যুবক। প্রথমে মেয়েটিকে ভারতের উত্তর প্রদেশের তুঘলপুর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে একটি গ্রামে ফার্ম হাউজে নিয়ে যায় যুবকেরা। ফার্ম হাউজটি ছিল একদম নির্জন জায়গায়। টানা ১২ দিন ধরে তাকে নির্জাতন করে যুবকেরা। যুবকেরা যখন বাড়ির বাইরে যেত মেয়েটি সাহায্যের জন্য চিত্কার করত। কিন্তু তার চিত্কার শোনার মতো কেউ ছিল না।
অবশেষে গত শনিবার, বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মেয়েটিকে আবার গাড়িতে তোলে যুবকেরা। তুঘলপুরের কাছে জল খাবার জন্য একটি কুয়োর সামনে দাঁড়ায় তারা। সেই সুযোগে পালানোর চেষ্টা করে মেয়েটি। প্রাণপণে দৌড় লাগাতেই বন্দুকের নল গর্জে উঠল পর পর দু’বার। বুকে-পেটে গুলি খেয়ে সোজা গিয়ে পড়ে গেল ৩০ ফুট গভীর ওই কুয়োয়। গুলি খেয়েও মরার মতো পড়ে থাকে মেয়েটি। মৃত ভেবে সেখান থেকে পালিয়ে যায় যুবকেরা। কিন্তু, রাখে আল্লহ মারে কে! সেই অবস্থাতেও গোটা একটা রাত কাটিয়ে দেন মেয়েটি।
এত উঁচু থেকে নীচে পড়ে গেল, তা-ও আবার গুলিবিদ্ধ অবস্থায়! কী ভাবে বেঁচে গেল মেয়েটি?
পুলিশ বলছে, মেয়েটির দেহের ওজন হাল্কা হওয়ায় ৩০ ফুট নীচে পড়ে গিয়েও খুব একটা ক্ষতি হয়নি। দ্বিতীয়ত, তাঁর মনোবল মৃত্যুর কাছে হার মানেনি।
৯, ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ