ভিন গ্রহের আকাশে তিনটি ‘সূর্য’!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সেই ‘নাথবতী’ আলোকিত তিন ‘নাথে’র আলোয়! এই দ্রৌপদীরও ‘অর্জুন’ আছে। আছে ‘ভীম’। ‘যুধিষ্ঠির’ও। মূলত ‘অর্জুন’কে ঘিরেই প্রদক্ষিণ এই দ্রৌপদীর। তবে বাকি দুই ‘নাথে’র আলো তার ওপরে পড়ে। সেই আলো উপেক্ষা করা সম্ভব নয় এই দ্রৌপদীর। ইচ্ছেয় হোক বা অনিচ্ছেয়, এই দ্রৌপদীর আকাশেও তিন ‘নাথে’র উপস্থিতি সব সময়। আজীবন।
বছর চারেক আগে প্রথম এই দ্রৌপদীর দেখা মেলে মহাকাশে। তার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে একেবারেই হালে।
এই ‘নাথবতী’র নাম- ‘আলফা সেনটাওরি-Bb’। আমাদের সৌরমণ্ডলের একেবারে পাশের বাড়ির প্রতিবেশী এই ভিন গ্রহ। আমাদের বাসযোগ্য গ্রহের থেকে মাত্র চার আলোক-বর্ষ দূরে পাড়ি জমালেই পৌঁছে যাওয়া যাবে এই দ্রৌপদীর কাছে।
এই দ্রৌপদীর যে ‘অর্জুন’ আছে, মানে মূলত যাকে ঘিরে এই ‘নাথবতী’র প্রদক্ষিণ, সেই তারাটির নাম- ‘আলফা সেনটাওরি-B’। আর এই দ্রৌপদীর আকাশে সব সময় আলো ফেলে যায় তার বাকি যে দুই ‘নাথ’, সেই দু’টি তারার নাম- ‘আলফা সেনটাওরি-A’ ও ‘আলফা সেনটাওরি-C’ বা ‘প্রক্সিমা সেনটাওরি’।
এর অর্থ, মহাকাশে সদ্যই হদিশ মেলা এই ভিন গ্রহ ‘আলফা সেনটাওরি-Bb’-র আকাশে দিনভর, রাতভর, বছরভর আলো ফেলতে দেখা যায় তিনটি ‘সূর্য’কে। ‘আলফা সেনটাওরি-A’, ‘আলফা সেনটাওরি-B’ আর ‘আলফা সেনটাওরি-C’কে। যাকে বলে, ‘টার্নারি স্টার সিস্টেম’। একই সৌরমণ্ডলে ‘সুর্যে’র মতো তিন-তিনটি তারা। ব্রহ্মাণ্ডে বেশির ভাগ সৌরমণ্ডলই ‘বাইনারি স্টার সিস্টেম’। যেখানে সূর্যের মতো দু’টি তারা রয়েছে। ‘বাইনারি স্টার সিস্টেম’ হওয়ার জোর সম্ভাবনা ছিল আমাদের সৌরমণ্ডলেরও। সূর্যের সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে গিয়েছিল বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতি। পারেনি। তাকে শেষমেশ ‘বামন নক্ষত্র’ হয়ে যেতে হয়। বৃহস্পতিকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় এই সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহের তকমা নিয়েই। এর ফলে, হতে গিয়েও ‘বাইনারি স্টার সিস্টেম’ হতে পারেনি আমাদের সৌরমণ্ডল। তবে ‘আলফা সেনটাওরি’র মতো সামান্য কয়েকটা ‘টার্নারি স্টার সিস্টেম’-এরও হদিশ মিলেছে সম্প্রতি। কিন্তু ‘আলফা সেনটাওরি-Bb’-ই ‘টার্নারি স্টার সিস্টেম’-এর প্রথম কোনও ভিন গ্রহ, যার হদিশ মিলল।
এই দ্রৌপদীর অভিনবত্ব কোথায়?
এ দেশে ভিন গ্রহ নিয়ে যাঁরা গবেষণা করছেন, তাঁদের পুরোধা, বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানী সুজন সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, ‘‘এই দ্রৌপদী ব্রহ্মাণ্ডে তিন তারার সৌরমণ্ডলে আবিষ্কৃত প্রথম কোনও গ্রহ। যার আকাশে তিনটি তারার উজ্জ্বল উপস্থিতি থাকে সর্ব ক্ষণই। যার পিঠ সব সময় পুড়ে যায় ওই তিনটি তারার গনগনে তাপে। এই দ্রৌপদীকেও ব্রহ্মাণ্ড দিয়েছে তিনিট ‘নাথ’। সুর্যের মতো গরম তিন-তিনটি তারা। কিন্তু এই দ্রৌপদীরও পছন্দের ‘অর্জুন’ রয়েছে। তার নাম- ‘আলফা সেনটাওরি-B’। যেটা ভিন গ্রহ ‘আলফা সেনটাওরি-Bb’-র প্রধান ‘সূর্য’। তাকে ঘিরেই ওই ভিন গ্রহের প্রদক্ষিণ। মহাভারতে যেমন ভীমেরও আসক্তি ছিল দ্রৌপদীর প্রতি, তেমনই ‘আলফা সেনটাওরি-B’ তারাটিকে চক্কর মারতে মারতে সূর্যের মতো বড় আরও একটি তারা ‘আলফা সেনটাওরি-A’-ও নজর রাখে মহাকাশে এই সদ্য আবিষ্কৃত দ্রৌপদীর ওপর। তার তাপেও সর্ব ক্ষণই পুড়ে যায় ওই ভিন গ্রহের পিঠ। আবার যুধিষ্ঠির যেমন অভিভাবকের মতো বহু দুর থেকে নজর রাখতেন দ্রৌপদীর ওপর, তেমনই ‘আলফা সেনটাওরি-A’ ও ‘আলফা সেনটাওরি-B’-এই দু’টি তারাকে চক্কর মারতে মারতে আরও একটি তারা ‘আলফা সেনটাওরি-C’-ও নজর রাখে দ্রৌপদী গ্রহ ‘আলফা সেনটাওরি-Bb’-র ওপর। সেই তারাটির গনগনে তাপও ঝলসে দিচ্ছে ভিন গ্রহটিকে।’’
সূর্য ও তার নিরিখে আলফা সেনটাওরি তারাদের আকার। সৌজন্যে-নাসা।
এই প্রথম দেখা মিললেও, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন দ্রৌপদীরা একা নয় মহাকাশে! যাদের আকাশে সব সময় আলো ফেলে তিন-তিনটি ‘সূর্য’, এমন ভিন গ্রহ আরও আছে ব্রহ্মাণ্ডে। তবে সেই সব ‘সুভদ্রা’, ‘বৃহন্নলা’দের হদিশ মেলেনি এখনও।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী সুজন সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, ‘‘দ্রৌপদী সবে পথ দেখিয়েছেন। যার পিঠ ঝলসে যাচ্ছে তিন-তিনটি তারার তাপে। যার পিঠের তাপমাত্রা পৃথিবীর প্রায় দশ গুণ। দেড় থেকে দু’হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই এই ‘নাথবতী’ কখনও ভোগে না ‘অনাথবৎ’ হওয়ার অবসাদে! এ বার ‘সুভদ্রা’, ‘বৃহন্নলা’দের খুঁজছি আমরা।’’-আনন্দ বাজার
৯, ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমইউ