ভারত-রাশিয়ার গোপন চিঠি ফাঁস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৭০ বছরের ধোঁয়াশা কি তবে কাটতে চলেছে? আশিস রায়ের প্রথম দফার প্রকাশিত নথি অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ চলতি মাসের শেষ দিকেই রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ তার আগেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি প্রকাশ করেছেন বলে দাবি নেতাজির নাতি লন্ডন-প্রবাসী ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট আশিস রায়ের৷ ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে ভারত ও রুশ সরকারের মধ্যে চালাচালি হওয়া বেশ কয়েকটি চিঠিও রয়েছে তার মধ্যে৷ আর সেই চিঠিগুলিতে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বার বার এটাই দাবি করা হয়েছে যে, ১৯৪৫ সালে বা তার পরে সোভিয়েত রাশিয়ায় যাননি নেতাজি৷ টাইমস অপ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট ঠিক কী ঘটেছিল? একপক্ষের বিশ্বাস, তাইহোকুর ওই বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছিল নেতাজির৷ অন্য পক্ষের দাবি, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর কোনও প্রমাণ নেই৷ এমনকি, দুর্ঘটনাটাও সম্ভবত সাজানো৷ সকলের চোখে ধুলো দিয়ে সোভিয়েত রাশিয়ায় চলে গিয়েছিলেন তিনি৷ এই দ্বন্দ্ব গত ৭০ বছর ধরে চলছে৷ নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের তদন্তের জন্য সরকার -গঠিত দু'টি কমিটিও বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর তত্ত্বকেই তুলে ধরেছে৷ তবু, নেতাজির অনুগামীরা তা বিশ্বাস করতে নারাজ৷ সম্প্রতি বসু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার পর তাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নেতাজি সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশের আশ্বাস দিয়েছে মোদি সরকার৷ আগামী ২৩ জানুয়ারি, নেতাজির জন্মদিনেই প্রথম দফার নথি প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী৷ তার আগেই নেতাজি -বিতর্কে আবার ইন্ধন দিলেন আশিস রায়৷
প্রথম দফার যে নথি আশিস প্রকাশ করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় দূতাবাস ও রাশিয়ার বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মধ্যে চালাচালি হওয়া কিছু গোপন চিঠি৷ প্রথম চিঠিটি লেখা হয়েছিল ১৯৯১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর৷ সে চিঠিতে ভারত সরকার রাশিয়ার কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল, সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে কোনও তথ্য যদি সে দেশের সরকার জানে, তবে তা যেন ভারতকে জানানো হয়৷ চিঠির উত্তর আসে পরের বছরের জানুয়ারিতে৷ রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু যে ১৯৪৫ বা তার পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলেন, তার কোনও তথ্য সেন্ট্রাল ও রিপাবলিকান আর্কাইভে মেলেনি৷ 'তিন বছর পর ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে ভারতের পক্ষ থকে দ্বিতীয় চিঠি যায়৷ তার বক্তব্য ছিল, 'আর্কাইভের বেশ কিছু নথির ভিত্তিতে ফের এ ব্যাপারে জল্পনা শুরু হয়েছে৷ আপনারা দয়া করে সব নথির চূড়ান্ত পরীক্ষা -নিরীক্ষা করে দেখুন, ১৯৪৫ বা তার পরে সুভাষচন্দ্র বসু সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রবেশ করেছিলেন বা থেকেছিলেন কি না৷' এ বারও রাশিয়া একই উত্তর পাঠায়৷ এই নথি প্রকাশের পর আশিসের বক্তব্য, 'কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হলে আমাদের প্রথমেই ভুল জিনিসগুলিকে বাদ দিতে হবে৷ দু' দেশের চিঠি চালাচালিতে স্পষ্ট, সুভাষচন্দ্র বসু আদৌ সোভিয়েত রাশিয়ায় যাননি৷ অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না, নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন৷ আর তা নিয়ে ধোঁয়াশা ৭০ বছর ধরে চলছে৷ নেতাজির পরিবার ও তার অনুগামীদেরও এ বার একটা উপসংহারে পৌঁছনো প্রয়োজন৷
গোপন চিঠিস্বাধীন ভাবে আমি সত্য অন্বেষণের যেচেষ্টা শুরু করেছি, আশা করি সেটাইউপসংহারে পৌঁছতে সাহায্য করবে৷ 'তাইওয়ান, জাপান, পাকিস্তান, ব্রিটেনের ন্যাশনাল আর্কাইভ, ব্রিটিশ লাইব্রেরি, ভারত ও রাশিয়া সরকার ওবেশ কিছু গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এই তথ্যসংগ্রহ করেছেন আশিস৷ বেশ কয়েকটি ধাপে এই সব নথি প্রকাশ করবেন তিনি৷ তার কথায়, 'যে ক্রমে নথিগুলি প্রকাশকরা হবে, তা প্রমাণ করবে নেতাজির জীবনের শেষ কয়েকটি দিন আসলে কী ঘটেছিল৷ 'তার দাবি, মোদি সরকার যেগোপন নথি প্রকাশ করবে বলেছে, এইচিঠিগুলি তারই অংশ৷ আসন্ন সফরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করার কথা মোদির৷ সেখানেও নেতাজি তথ্যের প্রসঙ্গ উত্থাপনের কথা রয়েছে৷ তার আগে আশিসের এই নথি প্রকাশ মোদি -পুতিনবৈঠকে নতুন কোনও মোড় আনবে কি?
৯ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�